টাইটেলটি দেখে অনেকে হয়তো অবাক হননি। কারণ ভাবছেন নিশ্চয় এটা কোন ইন্সুলেটর বা রাবার গ্লাভসের কারসাজি। কিন্তু আপনি চমকে যেতে বাধ্য হবেন যদি আমি বলি পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ আছে যারা খালি হাতে হাজার ভোল্টেজের বিদ্যুৎ স্পর্শ করলেও কোন বিপদ্দজনক ঘটনা ঘটেনা। এদের সবাই বিদ্যুৎ মানব হিসেবেই চিনে থাকে। কিন্তু এগুলো কি সত্যিই বাস্তব নাকি গুজব? এর নেপথ্যে কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে কি? চলুন আলোচনা করে নেয়া যাক।
বিদ্যুৎ আমাদের শক করে কেন?
মনে করুন, হুট করে আপনি আগুনের সংস্পর্শে এসে হাতটা পুড়ে ফেললেন। আসলে আগুন বললে ভূল হবে। মূলত আপনি আগুন থেকে তৈরিকৃত তাপে হাত পুড়ে ফেলেছেন। বিদ্যুতকে আমরা খুব সহজেই তাপের সাথে তুলনা দিতে পারি। তাপ যেমন হাত পুড়িয়ে দেয় , শরীরের কোথাও তাপ কিংবা আগুন লাগলে যেমন ঝলসে যায় কিংবা ফোস্কা পড়ে যায়, কারেন্ট ও তেমনিভাবে আপনাকে ছ্যাকাপোড়া বানিয়ে ছেড়ে দিবে।
কিন্তু তারপরেও তাপ এবং বিদ্যুতের মধ্যে পার্থক্য আছে । কারেন্ট বাবুর একশন পুরোপুরি তাপের মত না । তাপ জায়গা পেলেই জ্বালিয়ে দেয় । বিয়েবাড়িতে বাবুর্চি রান্না করার সময় ন্যাকড়া দিয়ে গরম হাঁড়ি স্পর্শ করে । হাড়ি যদি হাতের কোনো জায়গা খোলা পায়, সাথে সাথে পুড়িয়ে দিবে । হাতের খোলা চামড়ার অন্য পাশে কি আছে সেটার উপরে তাপের পুড়িয়ে দেওয়া নির্ভর করবে না ।
কিন্তু কারেন্টবাবু এইভাবে আপনাকে আহত করবেনা। কারেন্ট বাবু ভাববে, ”আমি ওর হাতে প্রবেশ ত করলাম, কিন্তু বের হবো কোন পথ দিয়ে?” যে পথ দিয়ে এসেছে, সেই পথেই কারেন্ট ফেরত যেতে পারেনা, তার অন্য পথ দরকার হয়। এজন্য দেখবেন যেকোন ডিভাইস কানেকশন দেয়ার সময় একটি তার থাকেনা। সিংগেল ফেজ বাতিতে একটি লাইভ লাইনের সাথে নিউট্রাল লাইনও জুড়ে দেয়া হয় যেন কারেন্ট বাবু সহজে প্রস্থান করতে পারে।
তাই আপনি যদি কোন ইন্সুলেটর ছাড়া বিদ্যুৎ স্পর্শ করেন তাহলে কারেন্ট তার পলায়নের পথ খুঁজে পাবে এবং বর্তনী সম্পূর্ণ করবে। আর তখন আপনাকে কাবাব বানিয়ে ছাড়বে যদি প্রবাহমাত্রা বেশি হয়।
বিদ্যুৎ মানব ও কারিগরি বাস্তবতা
দেহের গঠনপ্রকৃতি
তাহলে বিদ্যুৎ মানবগণ কি এলিয়েন যে বিদ্যুৎ তাদের শক করবেনা। আসলে তারা এলিয়েন না। তারাও আমাদের মতই রক্ত মাংসের মানুষ। কিন্তু তাদের চামড়া অধিক পুরু হবার কারণে তাদের দেহের রোধ স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে তা রাবার গ্লাভস বা ইন্সুলেটরের মত কাজ করে। একজন স্বাভাবিক মানুষের দেহের রোধ হয় ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার ওহম। তবে মানবদেহের গঠনপ্রকৃতির উপর এই মানের তারতম্য ঘটে।
ইলেকট্রোলাইট বা আয়নের তারতম্য
বিদ্যুৎ চলাচলের জন্য ধাতব আয়ন বা ইলেকট্রোলাইট দরকার । মানুষের দেহের ভেতরে লবনের আয়নগুলো কারেন্ট পরিবহন করে থাকে। সোডিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন আয়নগুলো ইলেকট্রন বাহক । যার শরীরে এই আয়নের পরিমান বেশি হবে, তার শরীরের ভেতর দিয়ে বেশি বিদ্যুৎ যাবে। আর যার শরীরে ধাতব আয়নগুলো কম, তার শরীরের ভিতর দিয়ে কম কারেন্ট চলাচল করবে। বিদ্যুৎ মানবদের শরীরে ধাতব আয়নের পরিমান অনেক কম বলে তাদের শরীরে বিদ্যুৎ ঢুকতে পারে অনেক কম। এটিও একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হতে পারে।
বিদ্যুৎ মানবদের উদাহরণ
- চীনের মা জিয়াং গেং এর দেহের রোধ এতই বেশি যে তার চামড়ার ভেতর ৬ মিলিএম্পিয়ারের বেশি কারেন্ট কোনভাবেই প্রবাহিত হতে পারেনা।
- আয়নাল মিয়া নামে বাংলাদেশেও একজন ‘বিদ্যুৎ মানব’ পাওয়া গেছে। সিলেটের হবিগঞ্জ জেলায় তার বাড়ি। পাঠকদের মধ্যে কেউ হবিগঞ্জের কেউ থাকলে হয়তো চিনতেও পারেন। তিনি খালি হাতেই বৈদ্যুতিক খুঁটির লাইন স্পর্শ করতে পারেন।
- দক্ষিণ ভারতেও রাজমোহন নায়ার নামে একজন বিদ্যুৎ মানব আছেন যিনি অনায়সেই হিউজ এম্পিয়ার বিদ্যুৎ সহজেই লুফে নিতে পারেন।
আরো কিছু আর্টিকেল
বিদ্যুৎ নিয়ে অজানা এবং মজাদার কিছু তথ্য
বিদ্যুৎ নিয়ে জনমনের ভ্রান্ত ধারণা এবং সমাধান যা জেনে রাখা জরুরী