পাওয়ার ট্রান্সমিশনের ক্ষেত্রে সিস্টেম লস এক প্রকার হুমকিস্বরুপ। আর চাকরির ভাইবা বোর্ডে সিস্টেম লস নিয়ে প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। কিভাবে সিস্টেম লস কমানো যায় সে নিয়েও জিজ্ঞাসা করা হয়ে থাকে। তাই যারা পাওয়ার সেক্টরে জব করতে ইচ্ছুক তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি খুবই দরকারি বলে আমি মনে করি।
সিস্টেম লস কি?
সিস্টেম লস নিয়ে নতুন করে বলার কিছুই নেই। আমরা সবাই সিস্টেম লস সম্পর্কে অবগত। তারপরেও সিস্টেম লস নিয়ে আমি একটু ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে চাই। আপনি যদি কোন পাইপের এক প্রান্ত দিয়ে ৫ লিটার তেল প্রবেশ করান তাহলে আপনি পাইপের অপর প্রান্ত থেকে নিশ্চয়ই পুরোপুরি ৫ লিটার তেল বের হবে এমন আশা করতে পারেন না। ধরুন, অপর প্রান্ত দিয়ে ৪ লিটার তেল বের হলো। তাহলে ১ লিটার তেল গেল কোথায়? বাকি ১ লিটার তেল পাইপের দেয়ালে লেগে আছে। তার মানে এই ১ লিটার তেল হল আমার তেল পরিবহনের ক্ষেত্রে সিস্টেম লস।
বিদ্যুৎ পরিবহনের ক্ষেত্রে তার বা পরিবাহীর রোধ পাইপের দেয়ালের মত বিদ্যুৎ পরিবহনে বাধা দেয়। যার দরুন সিস্টেম লস ঘটে। কারিগরি ভাষায় একে কপার লসও বলা হয়ে থাকে। চলুন এবার জেনে আসা যাক কিভাবে সিস্টেম লস কমানো যায়?
কিভাবে সিস্টেম লস কমানো যায়?
অবৈধ সংযোগ সনাক্ত ও বিচ্ছিকরণ
বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগগুলো সনাক্ত করে বিচ্ছিন্ন করা এবং সেই স্থানে মিটার সংযোগ করা। বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো প্রতি মাসে এরকম অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিকরণের জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ করে থাকে।
ত্রুটিবিহীন মিটার কানেকশন এবং সিল করা
কোন গ্রাহককে যখন মিটার প্রদান করা হবে তখন লক্ষ্য রাখতে হবে যেন ত্রুটিবিহীন মিটার সংযোগ করা হয়। তাছাড়াও নিরাপত্তার জন্য মিটারে সিল করা উচিত। এছাড়াও মিটারের সিল সংরক্ষণের নিয়মাবলি কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা।
মিটার রিডিং মনিটর করা এবং বিলের সাথে সংযুক্ত করা
অভিজ্ঞ কর্মীর মাধ্যমে বৈদ্যুতিক মিটার মনিটরিং করতে হবে এবং তা বিলের সাথে সংযুক্ত করতে হবে।
ডিজিটাল বিলিং সিস্টেম ডেভেলাপ করা
মিটারে ডিজিটাল সিস্টেম ডেভেলাপ করতে হবে। তার মানে আপনার বৈদ্যুতিক মিটারের সাথে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি সংযুক্তিকরণ করতে হবে। আপনার মিটারের আপডেট স্ট্যাটাস যেন কমিউনিকেশন পোর্টের মাধ্যমে সার্ভারে যেতে পারে সেই ব্যবস্থা চালু থাকতে হবে। যেটা প্রিপেইড মিটার সিস্টেমে চালু আছে।
প্রি-পেইড মিটারিং সিস্টেম চালু করা
প্রিপেইড মিটার সিস্টেম চালু হলে অবৈধ কাজের সুযোগ অনেকাংশেই কমে যায়। সমগ্র বাংলাদেশকে এখন প্রি-পেইড মিটারিং ব্যবস্থার আওতাভূক্ত করার প্রচেষ্টা চলছে।
উন্নত ধরনের ইন্সুলেটেড ক্যাবল ব্যবহার করা
ওভারহেড ডিস্ট্রিবিউশন লাইনে উন্নত ধরনের ইন্সুলেটেড ক্যাবল ব্যবহার করা। এতে করে সিস্টেম লস কিছুটা কমে যায়।
ট্রান্সমিশন ভোল্টেজ অধিকতর বৃদ্ধি
ট্রান্সমিশন ভোল্টেজ আরো বৃদ্ধি করেও সিস্টেম লস কমিয়ে আনা যায়। পাওয়ার গ্রীড কোম্পানি অব বাংলাদেশ ৭৬৫ কিলোভোল্ট ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপনের কাজ করে যাচ্ছে। এতে করে আমাদের সিস্টেম লস অনেকাংশেই কমে যাবে বলে আশা করা যায়।
ত্রুটিপূর্ণ ও পুরানো ডিভাইস পরিবর্তন
পুরাতন ট্রান্সফরমার, সুইচগিয়ার পরিবর্তন করা। তাছাড়া কমিশনিংকালে সনাক্ত করা ত্রুটিপূর্ণ ডিভাইসগুলোও অপসারণ করতে হবে।
বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ
লোড সেন্টারের কাছাকাছি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করলেও সিস্টেম লসজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
মাইক্রোপ্লান্ট স্থাপন
ছোট ছোট প্লান্টের মাধ্যমে যদি বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ করা যায় তাহলে সিস্টেম লসজনিত সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়। তবে এর জন্য স্থান ও অর্থেরও দরকার। বিদেশে এই সিস্টেম চালু রয়েছে।
পিক আওয়ারে গ্রীড ব্যবহার
শুধুমাত্র পিক আওয়ারে বা বিশেষ বিশেষ ব্যবস্থায় গ্রীড ব্যবহার করেও বৈদ্যুতিক সিস্টেম লস কমিয়ে আনা যেতে পারে।
আরো কিছু আর্টিকেল
রাতের বেলায় ট্রান্সমিশন লাইন কিভাবে বৈমানিকের চোখে পড়ে?
ট্রান্সমিশন লাইভ লাইন সমুদ্রগামী জাহাজের সংস্পর্শে এলে কি হবে? এ মুহুর্তে করণীয় কি?