মোটরের নেমপ্লেটের সাংকেতিক চিহ্নগুলো কি নির্দেশ করে?

রঞ্জিতদের বিল্ডিং এ রিজার্ভ ট্যাংকের পানি তুলার জন্য নতুন মোটর আনা হয়েছে। রঞ্জিত একটি ভার্সিটিতে ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করছে। তাই সে আগ্রহ নিয়ে মোটরটি দেখতে নীচে নেমে আসল। সে দেখল একজন ইলেকট্রিশিয়ান এসেছে মোটরটি কানেকশন করার জন্য। রঞ্জিত মোটরের নেমপ্লেটের দিকে তাকাল। সে তার মোটর নিয়ে পড়া থিওরির সাথে মিলিয়ে দেখতে লাগল। নেমপ্লেটের কিছু চিহ্ন তার বোধগম্য হল আর কিছু চিহ্ন সে বুঝতে পারল না।

একজন মানুষের আইডি কার্ড যেমন তার নাম, ক্যারিয়ার, জন্মস্থান প্রভৃতি নির্দেশ করে তেমনি মোটরের নেমপ্লেটও তার বিভিন্ন প্যারামিটারের পরিচয় দিয়ে থাকে। আর একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে সেই সংকেতগুলোর সাথে আমাদের অবশ্যই পরিচয় থাকতে হবে। আজকের এই পোস্টটি মূলত মোটরের নেমপ্লেটে থাকা সাংকেতিক চিহ্নগুলোর পরিচিতি নিয়েই।

230Δ/400Y (13.6A/7.8A)

230Δ/400Y (13.6A/7.8A) এভাবে লেখা থাকে নেমপ্লেটে। এটি মূলত মোটরটির অপারেটিং ভোল্টেজ এবং কারেন্টকেই ইংগিত করে।
মানে এই মোটরটি দুইরকম ভোল্টেজে চালানো যাবে। ডেল্টায় (Δ) ২৩০ ভোল্টেজে কারেন্ট নিবে ১৩.৬ অ্যাম্পিয়ার এবং স্টার কানেকশনে (Y) ৪০০ ভোল্টেজে কারেন্ট নিবে ৭.৮ অ্যাম্পিয়ার।

kW/HP

kW/HP দিয়ে মূলত মোটরের পাওয়ার নির্দেশ করে। আমরা জানি, মোটরের আউটপুট পাওয়ার রিয়েল পাওয়ার। তাই এটির পাওয়ার কিলোওয়াটে এসাইন করা হয়ে থাকে। আর এক হর্সপাওয়ার ৭৪৬ ওয়াটের সমান। যদি কখনো মোটরের kw থেকে কারেন্ট এর মান বের করতে চান তাহলে,

থ্রি ফেজ এর জন্য

I=P(kW)/√3×V×cosθ

সিঙ্গেল ফেজ এর জন্য

I=P(kW)/V×cosθ

এখন হিসাব করে দেখলেন এটা মোটরের নেমপ্লেটে লেখা মানের সাথে মিলে না।
মোটরের গায়ে যেটা লেখা থাকে সেটা ইনপুট পাওয়ার, এর সাথে ইফিসিয়েন্সি গুন করে আউটপুট পাওয়ার বের করে নিতে হয়। তারপর সেই পাওয়ার থেকে কারেন্ট উপরের সূত্র মতে করলে মিল পাবেন।

Ph-1 or ph-3 অথবা 3-φ

Ph-1 or ph-3 অথবা 3-φ এটা দেখে মোটরটি সিঙ্গেল ফেজ না থ্রি ফেজ সেটা বুঝতে পারবেন।

FLA -17A

এভাবে লেখা থাকলে বুঝে নিতে হবে ফুল লোডে মোটর ১৭ অ্যাম্পিয়ার কারেন্ট নিবে।
অথবা ৫.৯/৩.৪ A এভাবেও থাকতে পারে তখন বুঝতে হবে ভোল্টেজ যেহেতু দুইরকম হতে পারে সে হিসেবে কারেন্টও দুইরকম হবে ভোল্টেজ অনুসারে।

F/L RPM:2800r/min

F/L RPM:2800r/min মূলত মোটরের ফুল লোড স্পিড।

এটি নেমপ্লেটে আরপিএম (RPM) এ দেওয়া থাকে।

ফুল লোডে থাকা অবস্থায় এক মিনিটে কতবার ঘুরবে সেটার সংখ্যাই বুঝানো হয়েছে।

EFF: 86%

মোটর তার ইনপুট ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ারকে কতটুকু দক্ষতার সাথে মেকানিক্যাল আউটপুট পাওয়ারে কনভার্ট করছে সেটাই ইফিসিয়েন্সি। যা শতকরায় দেওয়া থাকে। EFF: 86% এর দ্বারা বুঝা যায় মোটরটি তার ইনপুট পাওয়ারের শতকরা ৮৫ ভাগ আউটপুটে দিতে পারছে।
মোটরের নেমপ্লেটে যা থাকে সেটা ইনপুট।

ধরি, দেওয়া আছে ২৪ kw এর মোটর । ইফিসিয়েন্সি ৮৬%
তাহলে আউটপুটে পাওয়ার পাব,
২৪*০.৮৬ = ২০.৬৪০ কিলোওয়াট ।

মোটরের নেমপ্লেট
মোটর ইফিসিয়েন্সি
মোটর ইফিসিয়েন্সি

cosθ- 0.86-0.97

মোটরের প্লেটে cosθ – 0.86-0.97 এভাবে লেখা থাকে যেটা সেটা হল পাওয়ার ফ্যাক্টর। এর দ্বারা বুঝা যায় এপারেন্ট পাওয়ারের কতটুকু রিয়েল পাওয়ারে কনভার্ট হচ্ছে। ০.৯ হলে বুঝতে হবে মোটর এপারেন্ট পাওয়ারের ৯০% রিয়েল পাওয়ারে কনভার্ট করছে। যত বেশী হবে ততই ভালো।

মোটরের নেমপ্লেট
পাওয়ার ফ্যাক্টর
পাওয়ার ফ্যাক্টর

SF-1.15

মোটরটটি তার সর্বোচ্চ পাওয়ারের থেকে কতটুকু বেশী পাওয়ারে কাজ করতে পারবে তারই প্রমাণ গুনিতক হিসেবে নেমপ্লেটে দেওয়া থাকে। তবে তা খুব অল্প সময়ের জন্য। এর মান ১ এর থেকে বড় হয়। যদি না দেওয়া থাকে তাহলে ১ ধরে নিতে হবে।
SF-1.15 এর দ্বারা বুঝা যায় মোটর তার নেমপ্লেটের KW এর ১৫% অধিক আউটপুট দিতে পারবে।

DUTY-CONT

এই সংকেত দিয়ে মোটরটি একটানা কাজ করতে পারবে না বিরতি নিয়ে কাজ করবে সেটা বুঝা যাবে।

DUTY-CONT থাকলে একটানা কাজ করতে পারবে অথবা S1 লেখা থাকতে পারে। এছাড়া সময় লেখা থাকে কতক্ষন একটানা কাজ করতে পারবে।

INS-A,B,C,D,E,F,G,H

এ সংকেত দিয়ে ইন্সুলেশন ক্লাস বুঝানো হয়। ইংরেজিতে যে অক্ষর পরে আসে তার ইন্সুলেশন ক্লাস হাই লেবেলের হয়।

মানে H এর ক্লাস সবচেয়ে বেশী কিন্তু F এর ক্লাস তার নিচে।

ক্লাস যত হাই হবে মোটর তত টেকসই হবে, voltage imbalance recover করতে পারবে তত দ্রুত।

মোটর নিয়ে আরো কিছু পোস্ট

মোটরের হান্টিং ইফেক্ট এবং বাঘ সিংহের দৌড় প্রতিযোগিতা | Hunting

পোল সংখ্যা পরিবর্তনের মাধ্যমে ইন্ডাকশন মোটরের স্পিড কন্ট্রোল