আমরা সকলেই ট্রান্সফরমার দেখেছি। ট্রান্সফরমারের মাথার উপর শিং এর মত একটি অথবা তিনটি অংশ দেখা যায়। দেখে মনে হয় যেন ট্রান্সফরমারের মাথার উপর শিং গজিয়েছে। আর এই অংশটির নামই হল বুশিং। শুধু ট্রান্সফরমার নয়, উচ্চ পাওয়ারের সার্কিট ব্রেকারেও এই বুশিং দেখা যায়। তাহলে চলুন আজ এই বুশিং নিয়ে আড্ডা জমানো যাক।
বুশিং কি?
বুশিং হল পাওয়ার ডিভাইসে ব্যবহৃত এক ধরনের ফাঁপা ইন্সুলেটর যা পরিবাহী তারকে কোন প্রকার বৈদ্যুতিক সংস্পর্শ ছাড়াই কোন কন্ডাক্টর সারফেসে সহজে প্রবেশ করতে সাহায্য করে। সাধারণত এটি পোর্সেলিনের সাহায্যে তৈরি করা হয়। অন্যান্য ইন্সুলেটিং ম্যাটেরিয়াল দিয়েও এটি তৈরি হতে পারে।
কেন এবং কোথায় ব্যবহার করা হয়?
ট্রান্সফরমারের প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি উইন্ডিং এর সাথে পাওয়ার লাইনের ফেজ লাইনের সংযোগ মূলত বুশিং এর মাধ্যমেই দেয়া থাকে। এছাড়াও সার্কিট ব্রেকারের লোড সার্কিটে পাওয়ার সংযোগ এই বুশিং এর মাধ্যমেই স্থাপিত হয়। যখন কোন পরিবাহী লাইনের মধ্য দিয়ে হাজার থেকে লক্ষ ভোল্টে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় তখন তার চারপাশে বিশাল ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি হয়।
তাই পাওয়ার লাইনের ফেইজ লাইনগুলোকে ট্রান্সফর্মার বা সার্কিট ব্রেকারের বুশিং বা ইন্সুলেটিং বডির মধ্য দিয়ে প্রবেশ করানো হয় যাতে তার আশেপাশের এরিয়া এই বিশাল ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড থেকে রক্ষা পায়।
বুশিং এর প্রকারভেদ
পোর্সেলিন বুশিং
সর্বপ্রথম পোর্সেলিনের মাধ্যমে বুশিং তৈরি করা হয়। সাধারণ পোর্সেলিন ব্যবহারের অন্যতম উদ্দেশ্য হল এটি আর্দ্রতা থেকে নিজকে সুরক্ষিত রাখতে পারে এবং উৎপাদন খরচ খুবই কম। পোর্সেলিন ব্যবহারের ক্ষেত্রে একমাত্র অসুবিধা হল এটি তৈরিকালে ফ্লেক্সিবল সীল এবং ম্যাটাল ফিটিংস ব্যবহার করলে কিছুটা অতিরিক্ত খরচ পোহাতে হয়।
পোর্সেলিন বুশিং এর ভেতরে ফাঁপা থাকে যাতে ইনকামিং বৈদ্যুতিক লাইনের সাথে তা সার্কিট ব্রেকার কিংবা ট্রান্সফরমারের সাথে সংযোগ সাধন করতে পারে। এতে এক প্রকার সেমিকন্ডাক্টর গ্লেজিং ব্যবহার করা হয় যাতে বুশিং এর পটেনশিয়াল গ্রেডিয়েন্টের সমতা বজায় থাকে। অতিরিক্ত ইন্সুলেশনের জন্য এই বুশিং এর ভেতরের সারফেস তৈলাক্ত থাকে। পোর্সেলিন দিয়ে নির্মিত বুশিংগুলো সর্বোচ্চ ৩৬ কিলোভোল্টের পাওয়ার লাইনে ব্যবহার করা যেতে পারে।
পেপার বুশিং
পেপার নির্মিত বুশিং ব্যবহারও বেশ সাশ্রয়ী। কারণ পেপার খুব সহজেই জলীয়বাষ্প শোষণ করতে পারে এবং পেপারের ডাইইলেক্ট্রিক স্ট্রেন্থ অনেক বেশি। সাধারণত SRBP (Synthetic Resin Bonded Paper) দিয়ে এই টাইপের বুশিং নির্মাণ করা হয়। SRBP ইন্সুলেটেড বুশিংগুলো সর্বোচ্চ ৭২ কিলোভোল্টের পাওয়ার লাইনে ব্যবহৃত ডিভাইসে ব্যবহার করা যায়।
তবে ১২ কিলোভোল্টের উপরের পাওয়ার লাইনে যখন এটি ব্যবহৃত হয় তখন এর জন্য এক্সট্রা ইন্সুলেশন দরকার হয় যাতে ডাইইলেক্ট্রিক বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ণ থাকে। এটাই একটি অসুবিধামূলক দিক।
কন্ডেসার বুশিং
সাধারণত এই ধরনের বুশিং এর সাথে ট্রান্সফরমার উইন্ডিং করার সময় মেটালিক ফয়েল প্রবেশ করানো হয় যাতে ফেইজ লাইন এবং আর্থিং এর মধ্যে অতিরিক্ত ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ডকে প্রশমিত করতে পারে। এছাড়াও ক্যাপাসিটিভ ইফেক্ট তৈরি করে অভ্যন্তরীণ ইলেকট্রোম্যাগনেটিক এনার্জিতে সাম্যতা বজায় রাখতে পারে।
রেজিন ইন্সুলেটেড বুশিং
১৯৬৫ সাল থেকেই ট্রান্সফরমার এবং বিভিন্ন সার্কিট ব্রেকারে এ ধরনের বুশিং ব্যবহার হয়ে আসছে। এই ধরনের বুশিং এ সুবিধা হল, রেজিনের ডাইইলেক্ট্রিক স্ট্রেন্থ পেপার বা পোর্সেলিনের তুলনায় বহুগুণে বেশি। ৭২ কিলোভোল্ট পর্যন্ত পাওয়ার লাইনে এই ধরনের বুশিং ব্যবহার করা যায়।
তবে এই ধরনের বুশিং এর একটি অসুবিধা হল রেজিন নামক রাসায়নিক পদার্থটির ইলেকক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ডের উপর সংবেদনশীলতা বেশি। তাই ২৫ কিলোভোল্টের উপরের পাওয়ার লাইনে এই বুশিং ব্যবহার করতে গেলে এক্সট্রা ইন্সুলেটিং ম্যাটেরিয়াল দরকার হয়।
বুশিং কখন ক্ষতিগ্রস্ত হবে?
বুশিং এর মধ্যে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক চাপকে সহ্য করার একটি নির্দিষ্ট ক্যাপাসিটি থাকে। আর এই ক্যাপাসিটিকেই বলা হয় ডাই-ইলেকট্রিক স্ট্রেন্থ।
এই সহ্য ক্ষমতার বাইরে গেলেই বুশিং ক্ষতিগ্রস্ত বা শর্ট সার্কিট হয়ে যায়। বিভিন্ন সাবস্টেশনে বৈদ্যুতিক দূর্ঘটনাগুলো অধিকাংশ সময় ট্রান্সফরমার বা সার্কিট ব্রেকারের বুশিং থেকেই হয়ে থাকে।
ট্রান্সফরমার নিয়ে কিছু পোস্ট
ট্রান্সফরমারের গঠন | Basic Construction of Transformer