সুদূর প্যারিসে এক গ্রামে বাস করত দুইভাই। একজনের নাম ওহমমিটার এবং অন্যজনের নাম মেগার। দুই ভাই মিলে আসবাবপত্রের ব্যবসা করত। ছোট ভাই ওহমমিটার কাজে অতটা দক্ষ নয়। তাই বিজনেসে ক্লায়েন্ট ডিলিং এবং সরবরাহের কাজ বড় ভাই মেগার করত। ছোটভাই দোকানের হিসাবখাতার কাজ এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র কাজ পরিচালনা করত।
গল্পটি যদি ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভাষায় বলি তাহলে কি হবে তা অনেকেই বুঝতে পারছেন। আমরা সবাই জানি, ইলেকট্রিক্যাল ফিল্ডে একজন ভিলেইন আছে যে নায়িকা কারেন্টকে সর্বদাই বিরক্ত করে থাকে। ভিলেইন বাবুর নাম হল রেজিস্ট্যান্স।
এই ভিলেইন কতটা খতরনাক সেটা কিন্তু আমরা পরিমাপ করতে পারি। এই ভিলেইন বা রোধের পরিমাপ করার জন্য আমরা সাধারণত ওহমমিটার ব্যবহার করে থাকি। অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী ওহমমিটারের সাথে পরিচিত। কারণ ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক্স ল্যাবে এই মহাশয় থাকবেনা তা কি করে হয়?
তবে ওহমমিটার ভাইয়া তেমন বড় কাজ করতে পারেনা সেটা আমরা আগেই জেনেছি। সে পাতি ভিলেইন বা অল্পমানের রেজিস্টরের রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করতে পারে কিন্তু উচ্চমানের ইন্সুলেটিং রেজিট্যান্স পরিমাপ করতে পারে মেগার ভাইয়া কারণ উনি বড় কাজ সামলাতে ওস্তাদ। এখন এই মেগার ভাইয়া নিয়েই আরো কিছু জেনে আসা যাক।
মেগার কি?
যদিও একটু আগেই মেগার ভাইয়ার সাথে পরিচিতি পর্ব শেষ হল তারপরেও তার পরিচয়টা একটু গোছালোভাবে দিতে চাই। মেগার এমন একটি যন্ত্র যার সাহায্যে বৈদ্যুতিক বর্তনী, মেশিন, ট্রান্সফরমার ইত্যাদির ইন্সুলেটিং রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করা হয়।
মেগারের ব্যবহারিক ক্ষেত্র
বিভিন্ন ধরনের সাবস্টেশনে যখন ইলেকট্রিক্যাল ডিভাইস যেমন মোটর, জেনারেটর, ট্রান্সফরমার স্থাপন করা হয় তখন তাদের কয়েলের ইন্সুলেশন টেস্ট করাটা খুব জরুরি। এই ইন্সুলেশন টেস্ট নিয়ে ইনশাল্লাহ অন্য আরেকদিন গল্প হবে।
তাছাড়াও আদ্রতা, তাপ, চাপ এবং ধুলোবালির প্রভাবে এসব ডিভাইসের ইন্সুলেশন ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। তাই বড় ধরনের দূর্ঘটনা এড়ানোর জন্য এসব ডিভাইস স্থাপন এবং কমিশনিংকালে ইন্সুলেশন টেস্টের জন্য মেগার অপরিহার্য।
মেগারের ইতিহাস
মেগারকে একটি হস্ত চালিত জেনারেটর বলা হয় যা 1889 সাল হতে ব্যবহার হয়ে আসছে। তবে 1920 সালের পর থেকে এর ব্যবহার ও জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এরই ধারাবাহিতায় বর্তমানে অনেক আধুনিক অপশনসহ বিভিন্ন সংস্করণের মেগার বাজারজাত হচ্ছে যা এর প্রয়োগ এবং ব্যবহারকে আরও সহজ করে তুলেছে।
মেগারের প্রকারভেদ
ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করেই মেগারকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ
- ইলেকট্রনিক মেগার
- ম্যানুয়াল মেগার
- আর্থ টেস্টিং মেগার
ইলেকট্রনিক মেগার
ইলেকট্রনিক মেগার একটি ব্যাটারী চালিত ডিজিটাল ডিসপ্লের সমন্বয়ে গঠিত হয়ে থাকে। এছাড়া ইন্সুলেশন পরিমাপের জন্য দুটি নব বা লিড থাকে। আর একটি সিলেকশন সুইচস থাকতে পারে যার সাহায্যে রেঞ্জ সিলেক্ট করা যায়। অনেক আধুনিক মেগার আছে যা অটো সিলেক্ট হিসেবে কাজ করে। তাই সেগুলোতে সিলেকশনের জন্য আলাদা কোন সুইচ থাকে না।

ম্যানুয়াল মেগার
এই যন্ত্রে একটি ডিসি জেনারেটর ও একটি ওহম মিটার থাকে। ডিসি জেনারেটর সাধারণত হস্তচালিত হয়ে থাকে আর এর জন্য প্রয়োজনীয় মেকানিজম এর ব্যবস্থা থাকে। এছাড়া একটি ক্লাচের ব্যবস্থা থাকে যাতে হস্ত চালিত জেনারেটরটি নির্দিষ্ট টেস্টিং কারেন্ট উৎপাদন করতে পারে। বিভিন্ন রেঞ্জ সিলেট করার জন্য একটি সিলেক্টর সুইচ থাকে এবং ইনসুলেশন পরিমাপ করার জন্য দুটি নব বা লিড থাকে।

আর্থ টেস্টিং মেগার
আর্থ টেস্টিং মেগার একটি পরিমাপক যন্ত্র যার সাহায্যে বৈদ্যুতিক আর্থিং রেজিস্ট্যান্স এর মান পরিমাপ করা হয়।

মেগারের গঠন
- ডিফ্লেক্টিং কয়েল
- কন্ট্রোলিং কয়েল
- জেনারেটর
- ম্যাগনেটিক পোল

মেগারে বিদ্যমান জেনারেটর কত ভোল্ট সরবরাহ করে?
মেগার ডিসি জেনারেটর হতে সরবরাহ পায়। এই ডিসি জেনারেটর ৫০০ থেকে ২৬০০ ভোল্ট পর্যন্ত সরবরাহ করতে পারে।
বিভিন্ন শর্তে প্রাপ্ত পাঠ
বিভিন্ন শর্তে মেগারের পয়েন্টারটি কি ধরনের পাঠ দেখাবে তা উল্লেখ করা হল, যাতে সাবস্টেশনে বা ইন্ড্রাস্ট্রিতে মেগার নিয়ে কাজ করার সময় সহজেই ব্যাপারগুলো অনুধাবন করতে পারেন।
- পয়েন্টারটি স্বাভাবিক অবস্থায় মাঝখানে অবস্থান করবে।
- ডিফ্লেকটিং কয়েলে কারেন্ট প্রবাহিত না হলে মিটার ইনফিনিটি বা অসীম পাঠ দেয়।
- মেগারের টেস্ট টার্মিনাল দুইটি শর্ট করে দিয়ে চালালে পয়েন্টারটি শূন্য (০) মান দেখাবে।
- মেগারের টেস্ট টার্মিনাল দুটি আলাদা আলাদা রেখে চালালে পয়েন্টারটি অসীম মান দেখাবে।
- একটি মেগার যখন অপারেশন করে না তখন পয়েন্টার ইনফিনিটি রেজিস্ট্যান্স দেখাবে।
মেগার দিয়ে সর্বনিম্ন কত রেজিস্ট্যান্স সঠিকভাবে মাপা যায়?
মেগার দিয়ে সর্বনিম্ন ০.৫ মেগাওহম রেজিস্ট্যান্স সঠিকভাবে মাপা যায়। আর সর্বোচ্চ ১ মেগাওহম রেজিস্ট্যান্স সঠিকভাবে মেপে নেওয়া যায়।
ইলেকট্রিক্যাল ডিভাইস নিয়ে আরো কিছু পোস্ট
হাউজ ওয়ারিং কি ও বিভিন্ন টুলস সম্পর্কে আলোচনা । House Wiring Bangla – 1
ট্রান্সফরমার টেস্ট | ট্রান্সফরমারের বিভিন্ন প্রকার টেস্ট সম্বন্ধে পড়ুন