রমেশবাবু মুম্বাই এর একটি নামকরা কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক। আজ ল্যাব ক্লাসে উনি ছাত্রদের ক্যাপাসিটর দিয়ে কিভাবে একটি বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবার পরেও ক্যাপাসিটর এল ই ডি এর প্রজ্বলন ধরে রাখতে সক্ষম সেই এক্সপেরিমেন্ট প্রদর্শন করছিলেন। এই এক্সপেরিমেন্টের জন্য তিনি ডিস্ক টাইপ সিরামিক ক্যাপাসিটর ব্যবহার করছিলেন যার গায়ে লিখা ছিল 103 সংখ্যাটি। এই নাম্বারটি দেখে এক ছাত্র খুব কৌতূহলী হল এবং রমেশ স্যারকে আস্ক করল যে এই সংখ্যাটি দিয়ে কি নির্দেশ করছে নাকি এমনিই একটা কোড? স্যার খুব খুশি হলেন ছাত্রের এমন কৌতূহলে। আসলে প্রশ্নটা যেমন মজাদার, উত্তরটি আরো মজাদার।
103,104 সংখ্যাগুলো কি প্রকাশ করে?
রমেশ স্যার ছাত্রটিকে একটা কাগজ নিতে বললেন। তখন কৌতূহলী ছাত্রটি ব্যাগ থেকে একটি খাতা এবং কলম বের করে আনল।
রমেশ স্যার ছাত্রটিকে 103 নাম্বারটিকে দুইভাগ করে লিখতে বললেন। ছাত্রটি বুঝতে পারল না। জিজ্ঞেস করল কিভাবে স্যার?
তখন তিনি নিজেই খাতা এবং কলম নিলেন সবাইকে ব্যাপারটা ক্লিয়ারভাবে বুঝানোর জন্য। সবাই বেশ আগ্রহী হয়ে অপেক্ষা করছিল বিষয়টি জানার জন্য। স্যার 103 সংখ্যাটিকে 10___3 এই দুইভাগে লিখলেন। সবাই অবাক হল। কৌতূহল যেন আরো বহুগুণে বেড়ে গেল। স্যার বললেন এই 10 কে তার জায়গায় রাখলাম। আর তার সাথে তিনটি শূণ্য লাগিয়ে দিলাম। তাহলে সংখ্যাটি কি দাঁড়াল? 10000। আর এটাই হল ক্যাপাসিটরের ক্যাপাসিট্যান্স।
তখন কৌতূহলী ছাত্রটি আবার আস্ক করল, “স্যার, একক কি হবে?”
স্যার বললেন প্রশ্নটি খুব গুরত্বপূর্ণ। মূলত 10000 এর সাথে ইউনিট হিসেবে পিকোফ্যারাডকে বিবেচনায় আনা হয়। তাহলে এই ক্যাপাসিটরটির মান হল দশ হাজার পিকোফ্যারাড। মাইক্রোফ্যারাডে নিতে চাইলে এই মানকে 10^6 দিয়ে ভাগ করতে হবে। কারণ, এক পিকোফ্যারাড = 10^-6 মাইক্রোফ্যারাড। তাহলে এই মান মাইক্রোফ্যারাডে নিলে দাঁড়ায়, 10000/1000000 = 0.01 মাইক্রোফ্যারাড অর্থাৎ 10 হল একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা বা ধ্রুবক। আর তার সাথের সংখ্যাটি নির্দেশ করছে তার সাথে কয়টি শূণ্য বসবে।
অর্থাৎ যদি 104 হয় তাহলে হিসেবটা কেমন হবে সেটা এখন ভালভাবেই বুঝতে পেরেছেন। তারপরেও হিসেব টা করে দেয়া হল। 104 = 100000 pF = 100000/1000000 = 0.1 microfarad। এবার রমেশ স্যার প্রজেক্টটি করার জন্য প্রস্তুত হলেন। তিনি ডিস্ক সিরামিক ক্যাপাসিটরটিকে একটি লাইট ইমিটিং ডায়োডের সাথে প্যারালালে সংযুক্ত করলেন। তারপর বৈদ্যুতিক বর্তনী পূর্ণ করতেই এল ই ডি টি জ্বলে উঠল।
এক কৌতূহলী ছাত্র আস্ক করল এখানে ক্যাপাসিটরটি কেন ব্যবহার করা হল?
রমেশবাবু মুচকি হাসলেন এবং বললেন সময় হলেই বুঝবে। তখন তিনি সোর্স ভোল্টেজ সাপ্লাই অফ করে দিলেন। সবাই একটা বিষয় লক্ষ্য করল, সোর্স ভোল্টেজ সাপ্লাই বন্ধ করার পরেও লাইট ইমিটিং ডায়োডটি বেশ কিছুক্ষণ ধরে জ্বলে তারপর নিভে গেল। সবাই তো রীতিমত অবাক। তখন স্যার বললেন, ক্যাপাসিটর লাইট ইমিটিং ডায়োডটির সমপরিমাণ ভোল্টেজ হোল্ড করতে পেরেছিল। সুতরাং তার মধ্যে ইলেকট্রিক চার্জ সঞ্চিত ছিল। তাই যখন সাপ্লাই অফ হল তখন সে চার্জ ডিসচার্জ করতে শুরু করল। আর ততক্ষণ পর্যন্ত এল ই ডি টিও ব্রাইট দেখাচ্ছিল।
উনি একটি বাস্তব জীবনের উদাহরণের মাধ্যমে ব্যাপাটি পরিষ্কার করতে চাইলেন। ধরুন, আপনি পানির কল ছেড়ে দিলেন। সজোরে পানি পড়তে লাগল। হঠাৎ বিল্ডিং এর দারোয়ান চাচা এসে বলল একটু পরেই পানি বন্ধ হয়ে যাবে এবং সবাইকে বলা হল পানি জমা করে রাখতে। তাই আপনিও বালতিতে পানি ভর্তি করে রাখলেন। যখন দারোয়ান চাচা সাপ্লাই অফ করে দিলেন তখন আপনি বালতি থেকে পানি ব্যবহার করতে লাগলেন। এখানে ক্যাপাসিটরটিও বালতির মত কাজ করেছে। যখন সোর্সের সাপ্লাই বন্ধ হয়ে গেল এল ই ডি ক্যাপাসিটরের সঞ্চিত ভোল্টেজের মাধ্যমেই আলো দিচ্ছিল। তবে সেটা একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত।
এবার অন্য একটি ছাত্র প্রশ্ন করে বসল স্যার কতক্ষণ চার্জ ধারণ করে রাখতে পারবে সেটা কিভাবে হিসেব করব?
স্যার বললেন, একটা ক্যাপাসিটর পূর্ণ চার্জ হতে যে সময় লাগে তাকে বলা হয় চার্জিং টাইম এবং ডির্সচার্জ হতে যে সময় লাগে তাকে বলে ডিসচার্জিং টাইম।
এটা Time Constant থেকে সহজেই বের করা যায়। ক্যাপাসিটরের ক্যাপাসিটর এবং তার সাথে যুক্ত রোধের গুণফলই হল Time constant.
ক্যাপাসিটর এর চার্জিং & ডিসচার্জিং টাইম t = RC
কিভাবে?
আমরা জানি,
i = Q/t
Or, t = Q/i
Or, t = CV / V/R [ Q = CV, i = V/R ]
Or, t = CV x R / V
সুতরাং, t = RC
আর এজন্যই R-C Circuit এ capacitor এর চার্জিং & ডিসচার্জিং টাইম Resistance & Capacitance এর গুণফলকেই নির্দেশ করে।
ক্যাপাসিটর নিয়ে আরো কিছু পোস্ট
ক্যাপাসিটর ব্যাংক সম্বন্ধে প্রাথমিক ধারণা | Capacitor Bank
ক্যাপাসিটর টাইপ সিঙ্গেল ফেজ ইন্ডাকশন মোটর