আমরা জানি যে, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র একটি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাথে প্রচলিত তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বেশ কিছু সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য রয়েছে। আজকের আলোচনায় আমরা প্রচলিত তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাথে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যেসব সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য রয়েছে তা নিয়ে আলোচনা করবো।
১. প্রচলিত তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে জ্বালানি হিসেবে কয়লা, ক্রুড-অয়েল (crude-oil), প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।
১. পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে জ্বালানি হিসেবে ইউরেনিয়াম – ২৩৫ পরমাণু ব্যবহার কর হয়।
২. প্রচলিত তাপ কেন্দ্রের জ্বালানিকে অধিক সক্রিয় করতে জ্বালানিতে আলাদা কোনাে উপাদান ব্যবহার করা হয় না।
২. পারমাণবিক জ্বালানিকে অধিক সক্রিয় করতে জ্বালানির সাথে ইউরেনিয়াম – ২৩৮ এবং থােরিয়াম – ২৩২ পরমাণু ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
৩. প্রচলিত তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহৃত জ্বালানি খনি হতে সংগ্রহ করে পরিশােধনের (refine) মাধ্যমে কার্যোপযােগী করা হয়।
৩. পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহৃত জ্বালানি ইউরেনিয়াম প্রাকৃতিক খনি হতে সংগ্রহ করা হয় এবং রিয়্যাক্টরে চেইন বিক্রিয়ার উপযোগী করে ব্যবহার করা হয়।
৪. প্রচলিত তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অধিক সংখ্যক আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় এবং স্থাপন করতে বেশি জায়গার প্রয়োজন হয়।
৪. পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অল্প সংখ্যক আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় এবং স্থাপন করতেও কম জায়গার প্রয়োজন হয়।
৫. প্রচলিত তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনা খরচ কিছুটা কম।
৫. পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে প্রাথমিক ব্যয় বেশি এবং পরিচালনা ব্যয়ও বেশি।
৬. প্রচলিত তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রর জ্বালানি খরচ তুলনামূলকভাবে কম কিন্তু জ্বালানি সংরক্ষণে অতিরিক্ত জায়গার প্রয়োজন হয়।
৬. পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানির পরিমাণ খুব কম বিধায় জ্বালানি সংরক্ষণে অতিরিক্ত জায়গার প্রয়োজন হয় না।
৭. প্রচলিত তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইউনিট প্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২ মেগাওয়াট হতে ৭৫ মেগাওয়াট পর্যন্ত দেখা যায়।
৭. পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০০ মেগাওয়াট হতে ৮০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত দেখা যায়।
৮. যে সকল দেশে খনিজ জ্বালানি নেই সেই সকল দেশে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা অনেক ব্যয় সাধ্য ব্যাপার।
৮. যে সকল দেশে খনিজ জ্বালানি নেই কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল সেই সকল দেশেও সমঝােতার মাধ্যমে বিদেশ হতে অল্প পরিমাণ পারমাণবিক জ্বালানি আমদানি করে বড় আকৃতির বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালানাে যায়।
৯. বাষ্পের নাম অনুসারে একে সাধারণত বাষ্প বিদ্যুৎ কেন্দ্রও বলা হয়।
৯. জ্বালানির নামানুসারে একে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বলা হয়।
১০. প্রচলিত তাপ অথবা বাষ্প বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে কোনাে নদী, পুকুর অথবা প্রচুর পানির ব্যবস্থা রয়েছে এমন অঞ্চলে স্থাপন করতে হয় এবং প্ল্যান্টে উৎপন্ন তাপ ও চাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য অনেক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয় না।
১০. পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের ক্ষেত্রে জলাশয় অথবা পানি সরবরাকৃত অঞ্চলের চেয়ে জনশুন্য নির্জন অঞ্চলকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। কারণ রিয়্যাক্টরের মধ্যে যে তেজস্ক্রিয় রশ্মি (radioactive ray) উৎপন্ন হয় তা যে কোনাে জীবজন্তু ও মানুষের জন্য ক্ষতিকর । এছাড়া এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিচালনা করতে হয়।
১১. প্রচলিত তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বাষ্প ইঞ্জিন চালাতে টারবাইন হতে বিতাড়িত বাষ্প ব্যবহার করা যায়।
১১. পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিতাড়িত বাষ্পের সাহায্যে বাষ্প ইঞ্জিন চালানাে যায় এবং এতে উৎপন্ন তেজস্ক্রিয় পরমাণু সংগ্রহ করে দেশ রক্ষার কাজে পারমাণবিক অস্ত্রশস্ত্র তৈরিতে ব্যবহার করা যায়।
পাওয়ার প্ল্যান্ট সম্বন্ধে অন্যান্য লেখাসমূহঃ
পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সুবিধা ও অসুবিধা।
ইউরেনিয়াম সম্বন্ধে আলোচনা।
বর্তমান বিশ্ব ও পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
বাষ্প বিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্বন্ধে আলোচনা।
পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইতিহাস ও সংক্ষিপ্ত আলোচনা।
পাওয়ার প্ল্যান্টঃ সংজ্ঞা, প্রকারভেদ ও কার্যপদ্ধতি।