বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিশন লাইন ও ডিস্ট্রিবিউশন লাইন সম্পর্কে আমাদের আগ্রহের কমতি নেই। রাস্তাঘাটে চলাফেরা করার সময় কত বৈদ্যুতিক টাওয়ার চোখে পড়ে। তখন মনে মনে কৌতুহল হয়, ” এই টাওয়ার টা কি ট্রান্সমিশান নাকি ডিস্ট্রিবিউশন এর কাজে লাগছে?” আসুন, এই মজাদার বিষয় নিয়ে একটু আলাপ করা যাক।
আচ্ছা, বাজারে যে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ কমলালেবু গুলো আমরা খাই, আমরা একবারেও কি ভেবে দেখেছি এগুলো আসছে কোথা থেকে এবং কিভাবে? সুদূর সিলেটে কোন এক কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রমে প্রচুর কমলালেবু সবুজ পাতার আড়ালে উকি মারে। তারপর বিভিন্ন ফল ব্যবসায়ী সেগুলা কিনে পিক আপ ভ্যানে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে দেয়।
ধরি, ৫০০ কমলালেবু সিলেট থেকে চট্টগ্রাম পাঠানো হবে। প্রথমে তাদের পিক আপ ভ্যান এ তুলে দেয়া হয়। তারপর সেই ভ্যান হাইওয়ে – সাবওয়ে বিভিন্ন রোড পার হয়ে ফলের আরতদারদের কাছে পৌছে। আরেকটা বিষয়, সবগুলা কমলা কিন্তু পৌছাতে পারেনা। কিছু আবার পথে পচে যায়। তারপর সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়ে মার্কেটে এবং ভোক্তাদের কাছে। বিদ্যুৎ এর বিষয়টাও কিন্তু একই। কিন্তু আমরা কখনো এভাবে ভেবে দেখেছি কি???!!!
ভেবে দেখলে হয়ত বিষয়টা ক্লিয়ার হত।
এখানেই ইতি নয়। এবার আমরা গল্পের সাথে ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন লাইনের মিলকরণ করব।
প্রথমে বলা হয়েছে, বাগানে কমলার চাষ করে প্রচুর কমলালেবু উৎপন্ন করা হয়। একইভাবে পাওয়ার প্লান্টে পাওয়ার প্রোডাকশন কোম্পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। উদাহরণ : BPDB
তারপর বলা হল, পিক আপ ভ্যান করে তা আরতদারদের কাছে পৌছে দেয়া হয়। এখানে ভ্যান হল ট্রান্সমিশন লাইন এবং আরত হল রিসিভিং স্টেশন। কিছু ফল পথের মধ্যে পচে যাওয়ার ব্যাপারটা হল সিস্টেম লস। অর্থাৎ, পাওয়ার প্রোডাকশন কোম্পানি থেকে রিসিভিং স্টেশান পর্যন্ত ট্রান্সমিশন লাইন থাকে। যেটাকে প্রাইমারি ট্রান্সমিশন লাইন / গ্রিড লাইন বলে।
গ্রিড লাইনে ভয়াবহ ভোল্টেজ থাকে। যেমন হাই ওয়ে রোডে চলার সময় গাড়ির প্রচুর স্পিড/পটেনশিয়াল থাকে। এই ভোল্টেজ ১১০, ১৩২, ২২০, ২৩০, ৪০০ কেভি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এটা বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম।
গল্পের পরবর্তী অংশে বলা হল, আরত থেকে কমলালেবু গুলো মার্কেট এর বিক্রেতাদের / ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছে পৌছে যায়। এটাকে একটু ব্যাখ্যা করি। রিসিভিং স্টেশান যখন রিসিভ করল তখন তাদের দায়িত্ব হল সেগুলা বিভিন্ন সাবস্টেশন / ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিগুলোর কাছে পৌছে দেয়া।
এখন যে ট্রান্সমিশন লাইন দিয়ে বিদ্যুৎ সাবস্টেশন / ডিস্ট্রিবিউশান কোম্পানির কাছে যাবে সেটাকে সেকেন্ডারি ট্রান্সমিশন লাইন বলে। PGCB ( Power Grid Company of BD) এই কাজটাই করে। গ্রিড ভোল্টেজ রিসিভ করে তা সেকেন্ডারি টান্সমিশান লাইন দিয়ে ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছে পৌছে দেয়।
এবার আসি গল্পের শেষ ধাপে। সেখানে বলা আছে, বিক্রেতা / ডিস্ট্রিবিউটর দের থেকে ভোক্তাদের কাছে কমলালেবু পৌছে দেয়া হয়। অর্থাৎ, সাবস্টেশন / পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি গুলা ভোল্টেজকে সহনীয় মাত্রায় এনে তাদের ভোক্তাদের কাছে পৌছে দেয়। DESCO ( Dhaka Electric Supply Company Ltd) এই কাজটা করে।
এখন ডিস্ট্রিবিউশন এর সময় একটা ব্যাপার থাকে। সবগুলা ডিস্ট্রিবিউশন লাইন না। কিছু ফিডার লাইন থাকে। একারণেই বলা হয়, সব ফিডার ডিস্ট্রিবিউশন কিন্তু সব ডিস্ট্রিবিউশন ফিডার লাইন না।
ফিডারটা হচ্ছে Distribution company থেকে বিদ্যুৎ untapped line এর মাধ্যমে যখন কলকারখানা, অফিস, আদালত অর্থাৎ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে তখন তাকে ফিডার লাইন বলে।
কিন্তু আমার আপনার বাসাবাড়িতে যে tapped transmission লাইন এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ আসে সেটা ডিস্ট্রিবিউশন লাইন।
বিঃদ্রঃ বুঝার সুবিধার্থে লেখক Informal ভাষা ব্যবহার করতে পারেন।