পৃথিবীর দীর্ঘতম ট্রান্সমিশন লাইন নিয়ে কিছু আলোচনা

বিভিন্ন ভাইবা বোর্ডে বাংলাদেশের দীর্ঘতম এবং সর্বোচ্চ ভোল্টের ট্রান্সমিশন লাইন নিয়ে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়। কিন্তু আজ আমি পৃথিবীর দীর্ঘতম ট্রান্সমিশন লাইন নিয়ে আলোচনা করব। টাইটেল দেখেই নিশ্চয় কৌতূহল হচ্ছে সবার মনে। তাহলে আর দেরি না করে চলুন জেনে নেয়া যাক এই ট্রান্সমিশন লাইন সম্পর্কে।

পৃথিবীর দীর্ঘতম ট্রান্সমিশন লাইন নিয়ে আলোচনা

পৃথিবীর দীর্ঘতম ট্রান্সমিশন লাইনটি আর কোথাও নয়, আমাদের কাছের দেশ চায়নাতেই অবস্থিত। বিজ্ঞান-প্রযুক্তিগত দিক থেকে চায়না সব সময়ই এক ধাপ এগিয়ে। এটি আলট্রা হাই ভোল্টেজ ডিসি ট্রান্সমিশন লাইন যার ট্রান্সমিশন ভোল্ট 1100 kV বা 1.1 MV। অনেকে শুনেই হয়তো নিজের চোখকেও বিলিফ করতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু না, আপনি ঠিকই দেখেছেন।

ট্রান্সমিশন লাইনটির দৈর্ঘ্য এবং উৎপত্তি

এই ট্রান্সমিশন লাইনটি ৩৩২৪ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে। লাইনটি মোট ক্ষমতা ১২ গিগাওয়াট। এই লাইনটি চাংজি কনভার্টার স্টেশন থেকে বেরিয়ে গানসু, সাঞ্জি, হেনান প্রদেশ অতিক্রম করেছে।

অনেকের মনে এখন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে যে, এই ট্রান্সমিশন লাইনটি ডিসি কেন? এসি হলে কি অসুবিধা ছিল?

ডিসি হাইভোল্টেজ ট্রান্সমিশনের কারণ

  • শুধুমাত্র দুটো তারের সাহায্যেই দূর-দূরান্ত পর্যন্ত পাওয়ার ট্রান্সমিশন সহজেই করা যায়।
  • স্কিন ইফেক্ট, প্রক্সিমিটি ইফেক্টের কোন ঝামেলা নেই।
  • আন্তর্জাতিভাবে বিদ্যুৎ আমদানি করার সময় দুই দেশের ফ্রিকুয়েন্সিজনিত কোন ঝামেলা হবেনা।
  • ডিসি ট্রান্সমিশন টাওয়ার স্থাপন প্রক্রিয়া এসি ট্রান্সমিশন টাওয়ারের তুলনায় সহজ।
  • মেন্টেইনেন্সের কাজেও অনেক সুবিধা।
  • কম খরচেই লাইন স্থাপন করা যায়।
  • ডিসি ট্রান্সমিশন লাইনে ফল্ট খুব কম দেখা যায়।

উপরোক্ত বিষয়াদি চিন্তা করেই মূলত চীন আলট্রা-হাইভোল্টেজ ডিসি ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপনের চিন্তা করেছে। তবে এসি ট্রান্সমিশন লাইনেও সুবিধা আছে। ক্ষেত্রবিশেষে নির্দিষ্ট ফ্যাক্টর বিবেচনা করেই ট্রান্সমিশন লাইন কোন ধরনের হবে তা নির্ধারণ করা হয়।

এই প্রজেক্টে কি পরিমাণ অর্থ খরচ হয়েছে?

এই প্রজেক্টে চায়না সরকারের 5.9 বিলিয়ন ইউ এস ডলার খরচ হয়েছে। এই প্রজেক্টটি শুরু হইয় ২০১৬ সালে এবং এর যাবতীয় সব কাজ সম্পূর্ণ হয় ২০১৮ সালে।

জনজীবনে এই ট্রান্সমিশন লাইনের প্রভাব

  • এই ট্রান্সমিশন লাইনের দরুণ চীনের উত্তর-পশ্চিমাংশে বিদ্যুতের ঘাটতি নেই বললেই চলে।
  • এই হাইভোল্টেজ ডিসি ট্রান্সমিশন লাইনটির দরুণ চীনের বাৎসরিক কয়লার ব্যবহার ৩৮ মিলিয়ন টন কমে এসেছে।
  • এই ১১০০ কিলোভোল্ট ডিসি ট্রান্সমিশন লাইনের মাধ্যমে আটটি ৫০০ কিলোভোল্ট এবং দুইটি ১০০০ কিলোভোল্ট এসি ট্রান্সমিশন লাইনে পাওয়ার সরবরাহ করা সম্ভব।
  • এই প্রজেক্টটি চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বিদ্যুৎ উন্নয়নের একটি মডেল স্বরুপ আখ্যায়িত হয়।

বিদ্যুৎ সেক্টর সংক্রান্ত আরো অজানা তথ্য জানতে আমাদের সাথেই থাকুন। আজকের আর্টিকেলটি কেমন লাগল তা কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিন। ধন্যবাদ।

আরো কিছু আর্টিকেল

ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে মজার গল্প | এক গল্পেই পুরো সিলেবাস

বিদ্যুৎ নিয়ে অজানা এবং মজাদার কিছু তথ্য

কেমন হবে যদি সমগ্র পৃথিবী বিদ্যুৎ শূন্য হয়ে পড়ে? | Blackout in whole world