ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্স আধুনিক প্রযুক্তিগত পরিবেশে যেকোন তথ্য প্রেরণ, সংরক্ষণ ভিত্তিক সিস্টেমগুলোর অপারেশনে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আজ ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্স জগতের দোভাষী মহাশয় নিয়ে আলোচনা করব। এখন নিশ্চয়ই সবার মনে কৌতূহল হচ্ছে যে কে এই দোভাষী মহাশয়? এই দোভাষী মহাশয়গণ আর কেউ নয়, তারা হলেন এনকোডার এবং ডিকোডার স্যার।
এনকোডার-ডিকোডার কিভাবে দোভাষীর ন্যায় কাজ করে?
ধরুন আপনি একজন নামকরা কোম্পানির মালিক। এখন কিছু সৌদি আরবের ক্লায়েন্ট আপনার সাথে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে দেখা করতে চায়। এখন আপনি আরবি ভাষা বুঝেন না। সেইজন্য আপনি এমন কাউকে এপোয়েন্ট করবেন যে সৌদি ভাষা বুঝে এবং ভাল বলতেও পারে। এতে করে আপনি এবং আপনার ক্লায়েন্টের মধ্যে ব্যবসায়িক কথাবার্তায় কোন সমস্যা সৃষ্টি হবেনা। ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্স জগতে এনকোডার এবং ডিকোডারও কিন্তু এই দোভাষীর ন্যায় কাজ করছে। কিন্তু কিভাবে সে আলোচনায় আসা যাক।
মেশিন ও মানব
মানুষ মেশিন তৈরি করলেও এই মেশিন কিন্তু নিজে থেকে কোন কাজই করতে পারেনা। তাকে ইন্সট্রাকশন দিতে হয়। আর মেশিন সেই নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করে। কারিগরি ভাষায় বললে, হার্ডওয়্যার শুধুমাত্র বোকা যন্ত্র ছাড়া কিছুই নয়। এতে প্রোগ্রামিং জুড়ে দিলেই তা কেবল মানবের হুকুমের গোলাম হয়ে যায়। তবে মেশিন এবং মানবের ভাষা এক নয়। আমরা সচারচর যেসমস্ত ভাষায় ভাবের আদান প্রদান করি সেসব কিন্তু মেশিনের বোধগম্য নয়। আবার মেশিনের ভাষাও আমাদের বোধগম্য নয়। এখানে মেশিনকে আপনি সৌদি ক্লায়েন্ট এবং মেশিন ব্যবহারকারীকে কোম্পানির মালিক হিসেবে চিন্তা করতে পারেন। আর এই মেশিন এবং মানবের মধ্যে দোভাষী হিসেবে কাজ করে এনকোডার এবং ডিকোডার। এনকোডার মানবের বোধগম্য ভাষাকে মেশিনের বোধগম্য ভাষায় রুপান্তর করে। আর ডিকোডার উল্টো কাজটি করে। ডিকোডার মেশিনের ভাষাকে মানবের বোধগম্য ভাষায় রুপান্তর করে।
এনকোডারের ফাংশন এবং ব্যবহারিক ক্ষেত্র
এনকোডার ডাটাকে অন্য ফর্মেটে রুপান্তর করে কার্যকর স্টোরেজ আকার হ্রাস করতে পারে। বৈদ্যুতিক সার্কিটগুলিতে এনকোডারগুলো অল্প সংখ্যক আউটপুটগুলোতে একাধিক বাইনারি ইনপুট সংকুচিত করতে ব্যবহৃত হয়। ডিজিটাল টু অ্যানালগ রূপান্তরকারী (ডিএসি) এবং অ্যানালগ থেকে ডিজিটাল রূপান্তরকারী (এডিসি) হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি বৈদ্যুতিক এনকোডার টেলিযোগাযোগে ইনপুট বিট স্ট্রিমগুলো ট্রান্সমিশনের জন্য একটি স্ট্যান্ডার্ড কোডে রূপান্তর করতে ব্যবহৃত হয়।
কিছু Transducer এনকোডার হিসাবেও কাজ করে। যেমনঃ
- রোটারি এনকোডার।
- লিনিয়ার এনকোডার।
রোটারি এনকোডারগুলি চলন্ত উপাদানগুলির কৌণিক অবস্থানকে (যেমন একটি শ্যাফ্ট) রূপান্তর করতে ব্যবহৃত হয়। লিনিয়ার এনকোডার একই ধরণের ফাংশন সম্পাদন করে তবে লিনিয়ার স্কেলে। এগুলো মেকাট্রনিক্স এবং রোবোটিক্সে ব্যবহৃত হয়। এনকোডিংয়ের আরেকটি দিক হল সুরক্ষা উদ্দেশ্যে। তথ্য, প্রেরণ বা সংরক্ষণের আগে কোন এনকোডার ব্যবহার করে ডাটা এনক্রিপ্ট করা হতে পারে যা সঠিক ডিকোডিং প্রক্রিয়া ছাড়াই তথ্যটিকে অ্যাক্সেসযোগ্য করে তুলবে। সুতরাং তথ্য সুরক্ষিত করার কাজে এনকোডার ব্যবহার হয়। আধুনিক মিডিয়া প্রযুক্তিতে এনকোডিং অডিও এবং ভিডিও উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়। ওয়েব প্রযুক্তিগুলিতে সুরক্ষার মান উন্নত করতে এনকোডারগুলিও ব্যবহৃত হয়। ই-মেল প্রযুক্তিতে তথ্য সুরক্ষার কাজে এনকোডার ব্যবহার করা হয়।
ডিকোডারের ফাংশন এবং ব্যবহারিক ক্ষেত্র
ডিকোডার এনকোডারের বিপরীত কার্য সম্পাদন করে। এনকোডিং প্রক্রিয়াটিকে বিপরীত করে তথ্যটিকে তার আগের ফর্মেট বা অন্যান্য অ্যাক্সেসযোগ্য ফর্মেটে রুপান্তর করে।
উদাহরণস্বরূপ, বৈদ্যুতিক সার্কিটগুলোতে যদি অ্যানালগ থেকে ডিজিটাল রূপান্তরকারী ব্যবহার করে কোনও সংকেত এনকোড করা হয় তবে রিসিভারকে মূল অ্যানালগ সংকেতটি পুনরুদ্ধার করতে ডিজিটাল থেকে অ্যানালগ রূপান্তরকারী ব্যবহার করে সিগন্যালটি ডিকোড করতে হয়। এই ক্ষেত্রে, ADC(Analog to Digital converter) এনকোডার হিসাবে কাজ করে এবং DAC(Digital to Analog Coverter) ডিকোডার হিসাবে কাজ করে।
ডিকোডারও টেলিযোগাযোগ, ডিজিটাল নেটওয়ার্কিং সিস্টেমে ব্যাপকভাবে ভূমিকা রাখছে।
এনকোডার এবং ডিকোডারের পার্থক্য
- এনকোডার এমন একটি ডিজিটাল ইলেকট্রনিক সার্কিট যা মানুষের ভাষা বা এনালগ সিগনালকে বাইনারি সিগন্যাল বা মেশিনের ভাষায় রুপায়িত করে আর ডিকোডার তার বিপরীত কাজটি করে।
- এনকোডার ইনপুট হিসেবে কি-বোর্ডে সংযুক্ত থাকে আর ডিকোডার কম্পিউটার বা অন্য যেকোন ডিভাইসের মেমোরিতে সংযুক্ত থাকে।
- এনকোডার 2^n সংখ্যক আউটপুট থেকে n সংখ্যক বাইনারি ইনপুট পাওয়া যায়। পক্ষান্তরে ডিকোডারে n সংখ্যক বাইনারি ইনপুট থেকে 2^n সংখ্যক আউটপুট পাওয়া যায়।
ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্স নিয়ে আরো কিছু পোস্ট