নিকোলা টেসলা যে মোটর আবিষ্কার করেছিলেন তা ছিল থ্রি-ফেজ ইন্ডাকশন মোটর। থ্রি-ফেজ কানেকশন কল-কারখানার বিরাট আকারের মোটরের জন্য উপযোগী হলেও বাসা-বাড়িতে বা অফিসে ব্যবহারের জন্য তা ছিল খুবই ব্যয়বহুল। তাই বিজ্ঞানীরা এমন এক মোটর উদ্ভাবনের চেষ্টা করলেন যা আকারে ছোট হবে এবং খরচও কম। সেই থেকেই সিঙ্গেল ফেজ মোটরের সূচনা।
সিঙ্গেল ফেজ ইন্ডাকশন মোটরের গঠন অত্যন্ত সরল, অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য এবং মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা সহজ। এই সমস্ত সুবিধার কারণে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার, ফ্যান, সেন্ট্রিফিউগাল পাম্প, ব্লোয়ার্স, ওয়াশিং মেশিন ইত্যাদিতে এর প্রচলন ব্যাপক ভাবে শুরু হয়। আজ আমরা আলোচনা করব সিঙ্গেল ফেজ ইন্ডাকশন মোটরের কার্যপদ্ধতি নিয়ে। তার আগে এর গঠন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা নেওয়া যাক।
গঠন
সকল ইন্ডাকশন মোটরের মত সিঙ্গেল ফেজ ইন্ডাকশন মোটরে স্ট্যাটর এবং রোটর ২ টি প্রধান অংশ নিয়ে গঠিত। এই মোটরের গঠন অনেকটা থ্রি-ফেজ squirrel cage ইন্ডাকশন মোটরের মত।
স্ট্যাটরঃ
এটি মোটরের স্থিতিশীল অংশ। স্ট্যাটরে সিঙ্গেল ফেজ এসি সাপ্লাই দেওয়া হয়। স্ট্যাটর ল্যামিনেটেড আয়রন কোর দিয়ে তৈরি যাতে ২ টি তারের কুন্ডলী থাকে। একটি প্রধান এবং অপরটি সহায়ক কুন্ডলী।
রোটরঃ
এটি মোটরের ঘূর্ণায়মান অংশ। শ্যাফটের মাধ্যমে রোটরের সাথে ম্যাকানিকাল লোড লাগানো থাকে। রোটর সিলিন্ডার আকৃতির হয়ে থাকে এবং চারপাশে স্লট দিয়ে নিজেকে ঘিরে রাখে। স্লট গুলো সমান্তরাল না হয়ে কিছুটা বাঁকানো থাকে কারণ এটি স্ট্যাটর এবং রোটরের খাঁজগুলোর চৌম্বকীয় লকিং প্রতিরোধ করে। স্লটগুলোর মাঝে আলুমিনিয়াম বা কপারের তৈরি রোটর কন্ডাক্টর থাকে যা এন্ড রিং (চিত্র দেয়া আছে) এর সাথে স্থায়ী ভাবে সংযুক্ত। স্লিপ রিং এবং ব্রাশের অনুপস্থিতি সিঙ্গেল ফেজ ইন্ডাকশন মোটরের ঘূর্ণনকে খুব সহজ এবং দৃঢ় করে তুলে।
কার্যপদ্ধতি
আমরা জানি মোটর ঘুরার জন্য ২টি ফ্লাক্স থাকতে হবে যারা একে অপরের সাথে মিলিত হয়ে টর্ক উৎপন্ন করে। স্ট্যাটরে সিঙ্গেল ফেজ এসি সাপ্লাই প্রয়োগ করা হলে কারেন্ট স্ট্যাটরের মধ্য দিয়ে প্রধান কুন্ডলীতে প্রবাহিত হয়। এসি কারেন্ট একটি দিক-পরিবর্তী ফ্লাক্স তৈরি করে যা প্রধান ফ্লাক্স নামে পরিচিত।
ফ্যারাডে’র তড়িৎ চুম্বকীয় আবেশের সূত্রানুসারে আমরা জানি, যখনই কোন তারের কুন্ডলীতে আবদ্ধ চৌম্বক বলরেখার সংখ্যা বা চৌম্বক ফ্লাক্সের পরিবর্তন ঘটবে তখনই উক্ত কুন্ডলীতে একটি তড়িচ্চালক শক্তি আবিষ্ট হবে। একে আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তি বলে। পরিবাহী কোন বদ্ধ বর্তনীতে সংযুক্ত থাকলে এর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ শুরু হবে। একে আবিষ্ট তড়িৎ প্রবাহ বলে।
প্রধান ফ্লাক্স যখন রোটর কন্ডাক্টরের সাথে সংযোগ স্থাপন করে তখন ফ্যারাডে’র সূত্রানুসারে রোটরে তড়িচ্চালক বল আবেশিত হয়। এই আবেশিত তড়িচ্চালক বলের জন্যই রোটরে কারেন্ট প্রবাহিত হয়। একে রোটর কারেন্ট বলে।
রোটর কারেন্ট আরেকটি ফ্লাক্স তৈরি করে যার নাম রোটর ফ্লাক্স। এই ফ্লাক্সটি আবেশন প্রক্রিয়ায় তৈরি তাই এর নাম ইন্ডাকশন মোটর। এখন মোটরের জন্য প্রয়োজনীয় ২ টি ফ্লাক্সই উপস্থিত কিন্তু তারা পরস্পর মিলিত হয়েও টর্ক উৎপন্ন করতে পারে না। কারন সিঙ্গেল ফেজ ইন্ডাকশন মোটর সেলফ স্টার্টিং নয়।
কেন সিঙ্গেল ফেজ ইন্ডাকশন মোটর সেলফ স্টার্টিং নয়?
সিঙ্গেল ফেজ ইন্ডাকশন মোটর সেলফ স্টার্টিং নয় কারন এতে কোন স্টার্টিং টর্ক নেই। ২টি তত্ত্ব দিয়ে এ বিষয়টি ব্যাখ্যা করা যায়, একটি হল ডাবল রিভল্ভিং ফিল্ড থিওরি এবং অপরটি ক্রস ফিল্ড থিওরি। তন্মধ্যে ডাবল রিভল্ভিং ফিল্ড থিওরি বেশি জনপ্রিয়।
ডাবল রিভল্ভিং ফিল্ড থিওরি
ডাবল রিভল্ভিং ফিল্ড থিওরি অনুযায়ী যদি স্ট্যাটরে সৃষ্ট পালসেটিং চৌম্বক ক্ষেত্রকে দুটি সমমানের কিন্তু বিপরীত দিক বিশিষ্ট চৌম্বক ক্ষেত্রে ভাগ করা যায় তাহলে মোটর দুটি চৌম্বক ক্ষেত্রকেই পৃথক ভাবে সাড়া প্রদান করে। স্ট্যাটর ফ্লাক্স ঘনত্ব Bs হলে,
BS(t) = (Bmax cos⍵t) ĵ
এখন একে ঘড়ির কাটার দিকে এবং ঘড়ির কাটার বিপরীত দিকে দুইটি উপাংশে বিভক্ত করি। তাদের মান পরস্পর সমান হবে এবং কিন্তু দিক বিপরীত।
BS = BCW + BCCW
BCW(t) = (0.5 Bmax cos ⍵t) î – (0.5 Bmax sin ⍵t) ĵ
BCCW(t) = (0.5 Bmax cos⍵t) î + (0.5 Bmax sin ⍵t) ĵ
BCW ঘড়ির কাটার দিকে একটি টর্ক উৎপন্ন করবে এবং BCCW ঘড়ির কাটার বিপরীত দিকে আরেকটি টর্ক উৎপন্ন করবে। ফলে লব্ধি টর্কের মান হবে শূণ্য।
মোটরের মোট আবেশিত টর্কের পরিমাণ হবে উক্ত চৌম্বক ক্ষেত্রদ্বয় দ্বারা সৃষ্ট টর্কের যোগফল। যেহেতু চৌম্বক ক্ষেত্রদ্বয়ের মান সমান এবং দিক বিপরীত তাই তাদের লব্ধি টর্কের মান শূণ্য হবে। অর্থাৎ মোটরটি চিরকাল স্থির থাকবে যদি এর উপর বল প্রয়োগ করা না হয় তথা টর্কের পরিবর্তন না হয়। এটিই হল ডাবল রিভল্ভিং ফিল্ড থিওরি।