কামাল এবং শিহাব দুই বন্ধু। তারা একটি নামকরা ভার্সিটিতে একই সেমিস্টারে অধ্যয়ন করছে। এবার এই সেমিস্টারে তাদের প্রজেক্ট প্রেজেন্টেশন রয়েছে। দুইজন করে গ্রুপ করে প্রজেক্ট করতে বলা হল। কামাল এবং শিহাব দুইজন মিলে একটি প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করবে। তাদের প্রজেক্ট সুপারভাইজার তাদেরকে ইলেকট্রনিক্স নিয়ে কিছু করতে বললেন। ইলেকট্রনিক্স নিয়ে কামালের ধারণা খুব ই কম। তাই সে একটু চিন্তিত হল বটে। কিন্তু অপরদিকে ইলেকট্রনিক্স নিয়ে শিহাবের বেশ ভাল ধারণাই আছে। তাই সে একটু আশ্বস্ত হল।
এবার প্রজেক্ট নির্বাচনের পালা। অনেক ভেবেচিন্তে শিহাব ঠিক করল সে LDR based gate secuirity system নিয়ে কাজ করবে। প্রজেক্টের নাম শুনেই কামাল অবাক।
তার মনে প্রশ্ন জাগল, LDR জিনিসটি কি?
শিহাব বলল, LDR এর পূর্ণরুপ Light Dependent Resistor। আলো আপু এবং এই ডিভাইসটির মধুর সম্পর্ক। আলো আপুর উপর এই ডিভাইসটির খুব দুর্বলতা আছে। LDR ভাইয়ার উপরে আলো পড়লে আলোর তীব্রতা অনুযায়ী এর রোধ কম বা বেশি হয়। এর নির্দিষ্ট কোন মান থাকেনা। তবে এর সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন ভ্যালু থাকে। এর আরো একটি জনপ্রিয় নাম ফটো রেজিস্টর।
সাধারণত ছোট এল ডি আর গুলোর ১ মেগা ওহম পর্যন্ত রেজিস্ট্যান্স হয় যেখানে বড় গুলোর রেজিস্ট্যান্স ১০০ কিলোওহম বা এর আশে পাশে হতে পারে। আর সর্বনিম্ন রেজিস্ট্যান্স কয়েক ওহম পর্যন্ত হয়ে থাকে।
তখন কামাল শিহাবকে আবার জিজ্ঞাসা করল, সিকিউরিটি সিস্টেম ছাড়া আর অন্য কোন কাজে কি এটি ব্যবহার করা যাবে?
উত্তরে শিহাব বলল অবশ্যই যাবে। সিকিউরিটি সিস্টেম ছাড়াও এল ডি আর এর ব্যবহার নিম্নরুপঃ
এল.ডি.আর এর অন্যান্য ব্যবহার
- আলো নির্ভর সন্ধ্যা বাতি তৈরিতে (ডার্ক সেন্সর/লাইট সেন্সর)।
- আলো নির্ভর প্রক্সিমিটি সেন্সর হিসেবে।
- আলোক উজ্জ্বলতা নিয়ন্ত্রক ডিভাইস যেমন অটো ব্রাইটনেস কন্ট্রোল।
- লাইন ফলোয়ার রোবট তৈরী করতে।
- আলো নির্ভর মিউজিক্যাল বেল তৈরী করতে।
কামালের কৌতূহলের যেন শেষ নেই। আরেকটি প্রশ্ন তার মনে জাগ্রত হল।
সে আবার জিজ্ঞাসা করল, এল ডি আর ব্যতীত অন্য কোন ডিভাইস দিয়ে কি কাজটি করা যাবে?
শিহাব বলল অবশ্যই যাবে। এল ডি আর এর পরিবর্তে কাজটি ফটো ডায়োড দিয়েও করা যায়।
ফটো ডায়োড (Photo Diode):
এল ডি আর এর মত এই ভাইয়াটিরও আলো আপুর উপর দুর্বলতা কাজ করে। সুতরাং ফটো ডায়োড হলো এমন এক ধরনের ডায়োড যার উপর আলোক রশ্মি পতিত হলে এটি কাজ করে এবং এর মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। জেনার ডায়োডের মতো ফটো ডায়োডও রিভার্স বায়াস অবস্থায় ব্যবহার করা হয়। ফটো ডায়োডের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এর উপর আলো আপুর নজর পরলে এর লিকেজ কারেন্টের পরিবর্তন ঘটে। আর কতটা লিকেজ কারেন্ট পরিবর্তন হবে তা নির্ভর করে আলো আপু কিভাবে নজর দিল অর্থাৎ পতিত আলোর পরিমাণের উপর।
ব্যবহার
- বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স সার্কিটের সাহায্যে চোর তাড়াবার যন্ত্র।
- আগুনের এলার্ম সার্কিট তৈরীতে এই ফটো ডায়োড ব্যবহৃত হয়।
- তাছাড়া বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কম্পিউটারের পাঞ্চ কার্ড দ্রুত পড়ার জন্য।
- আলোর উপস্থিতি নির্ণয় করার জন্য, চলচ্চিত্র ও ফিল্মের শব্দ পুনঃ উৎপন্নের জন্য এই ফটো ডায়োড ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
কামাল কিছুটা কনফিউজড হল। কারণ দুটোর ফাংশন তার কাছে একই লাগল।
তাই আবারো প্রশ্ন করল, ফটোরেজিস্টর এবং ফটোডায়োডের মধ্যে পার্থক্য কি?
- কথায় আছে, ত্রিকোণ প্রেমে দুই প্রেমিক কখনো এক প্রেমিকাকে সমানভাবে ভালবাসতে পারেনা। তেমনিভাবে আলো আপুর উপর আমাদের দুই ভাইয়ের সমান ভালবাসা নেই। ফটো ডায়োড ভাইয়া ফটো রেজিস্টরের তুলনায় আলো আপুকে বেশি ভালবাসে। তার মানে, ফটো ডায়োড আলোর উপর বেশ প্রতিক্রিয়াশীল
- ফটোডায়োড ভাইয়া মূলত আলো আপুর রুপকেই ভালবাসে। কিন্তু ফটোরেজিস্টর ভাইয়া আলো আপুর রুপ এবং গুণ দুটোতেই মোহিত। অর্থাৎ ফটোরেজিস্টর যেকোন দিক থেকেই আলোর প্রতি সংবেদনশীল। পক্ষান্তরে ফটোডায়োড একটি নির্দিষ্ট দিক থেকেই আলোর প্রতি সংবেদনশীল।
- অতিরিক্ত তাপেই কেবল ফটোরেজিস্টরের রোধের পরিবর্তন হয়। অন্যদিকে অল্প তাপেই ফটোডায়োডের রোধের পরিবর্তন হয়।
- প্রয়োগকৃত ভোল্টেজের পরিবর্তনে ফটোডায়োডের রোধের পরিবর্তন হয় কিন্তু প্রয়োগকৃত ভোল্টেজের পরিবর্তনে ফটোরেজিস্টরের রোধের পরিবর্তন হয়না।
- ফটোডায়োডের বাজারমূল্য ফটোরেজিস্টরের তুলনায় সাশ্রয়ী।
কামাল এবার শিহাবকে প্রশ্ন করল, তাহলে আমরা ফটোডায়োড ব্যবহার করলাম না কেন?
- শিহাব বলল প্রথমত ফটোরেজিস্টর দিয়ে কাজটি সহজ হবে।
- সার্কিট সিম্পল হবে।
- ফটোরেজিস্টর যেকোন দিক থেকেই আলোর প্রতি সংবেদনশীল।
- খুব অল্প পাওয়ার ব্যবহার করেই প্রজেক্টটি করা সম্ভব।
ইলেকট্রনিক্স নিয়ে আরো কিছু পোস্ট
আরডুইনো হাতেখড়ি | Arduino Basic Course
সহজ পদ্ধতিতে ডায়োড ও ট্রানজিস্টরের লেগ বের করুন এবং ভুল-ত্রুটি নির্ণয় করুন