বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশ বর্তমানে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে জোড়ালো নজর দিয়েছে। প্রচলিত তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চেয়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অনেক বেশি সুবিধা রয়েছে কিন্তু এর অসুবিধাও কিন্তু কম নয়। তাহলে চলুন, জেনে নেই একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কি কি সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে।
সুবিধাসমূহ (Advantages):
১। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অল্প পরিমাণ জ্বালানি থেকে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করা যায়। হিসেব করে দেখা গেছে যে, ৪৫০০ টন কয়লা থেকে যে পরিমাণ তাপ শক্তি পাওয়া যায়, মাত্র ১ কেজি ইউরেনিয়াম থেকেই সে পরিমান শক্তি পাওয়া যায়। |
২। অল্প পরিমাণ জ্বালানির প্রয়োজন হয় বলে এর জ্বালানি পরিবহন ও সংরক্ষণের খরচও অনেক কম। |
৩। অন্য সকল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তুলনায় এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে হতে অনেক বেশি বিদ্যুৎ শক্তি উৎপন্ন করা সম্ভব। |
৪। অন্যান্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তুলনায় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে তুলনামূলক কম জায়গার প্রয়োজন হয়। |
৫। এর প্রাথমিক ডিস্ট্রিবিউশন খরচ কিছুটা কম। |
৬। বিশ্বব্যাপী প্রচুর পরিমাণ পারমাণবিক জ্বালানি জমা রয়েছে বলে এই জাতীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে হাজার বছর যাবত নিশ্চিন্তে বিদ্যুৎ উৎপন্ন ও সরবরাহ করা যাবে। |
৭। প্রতিকূল আবহাওয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহে কোন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে না। |
৮। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে শীতলীকরণ পানি হিসেবে তুলনামূলক অল্প পানির প্রয়োজন হয় তাই কম পানি রয়েছে এমন অঞ্চলেও এটি স্থাপন ও ব্যবহার করা যায়। |
৯। যেহেতু এতে প্রচুর পরিমাণ পানির প্রয়োজন হয় না এবং কোন কয়লার খনিরও প্রয়োজন হয় না সেহেতু এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র লোড সেন্টারের কাছে স্থাপন করা যায়। |
১০। প্রচলিত অন্যান্য তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তুলনায় এর ধাতব কাঠামো সংক্রান্ত খরচ অনেকটাই কম। উদাহরণ স্বরুপ বলা যায় যে, ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যন্ত্রাদি ও আনুষাঙ্গিক যন্ত্রাংশের ওজন যেখানে ৫০০ টন থেকে ৯০০ টন সেখানে ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন প্রচলিত তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যন্ত্রাদি ও আনুষাঙ্গিক যন্ত্রাংশের ওজন প্রায় ৬০০ টন থেকে ২৭০০ টন পর্যন্ত হয়ে থাকে। এছাড়া ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে যে পরিমাণ জমির প্রয়োজন হয় সেখানে প্রচলিত তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য তার ৩ গুন পরিমাণ বেশি জমির প্রয়োজন হয়। |
অসুবিধাসমূহ (Disadvantages):
১। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের প্রাথমিক খরচ বেশি। |
২। এর জ্বালানির দাম অনেক বেশি এবং তার আহরণ প্রক্রিয়া কিছুটা জটিল। |
৩। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূলধন ব্যয় অন্যান্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তুলনায় খুব বেশি। |
৪। এর ইরেকশন ও কমিশনিং (erection & commissioning) করার জন্য সুদক্ষ টেকনিশিয়ান ও ইঞ্জিনিয়ারদের প্রয়োজন হয়। অন্যান্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো এখানে অদক্ষ বা আধাদক্ষ ব্যক্তিরা কাজ করতে পারে না। |
৫। এর বিভাজন (fission) দ্বারা উৎপাদিত বর্জ্যগুলো অনেক বেশি তেজস্ক্রিয় হয়। |
৬। সব সময় পরিবর্তনশীল লোড (varying load) এর ক্ষেত্রে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র উপযােগী নয়। |
৭। এর রক্ষণাবেক্ষণ কাজ কঠিন এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচও অনেক বেশি। |
৮। রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষিত কর্মীদের নিয়োগ দিতে হয়। |
৯। যে দেশ অর্থনৈতিকভাবে অনুন্নত সে দেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা দুঃসাধ্য ব্যাপার। |
১০। পারমাণবিক জ্বালানি থেকে উৎপন্ন বর্জ্য পদার্থ যেহেতু অনেক বেশি তেজস্ক্রিয় সেহেতু এর সংরক্ষণ পদ্ধতিও বেশ জটিল। এসব বর্জ্য সাধারণত একটি গভীর পরিখা খনন করে অথবা সমুদ্রের তীর থেকে অনেক দূরে কোন সমুদ্রে নিষ্পত্তি করা হয়। |
১১। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তেজস্ক্রিয়তা জীব – জন্তু ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর । |
১২। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সামান্য একটা ত্রুটি ভয়াবহ দূর্ঘটনার কারণ হতে পারে। যেমনঃ চেরন বিল দূর্ঘটনা। |
পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুর্ঘটনা কতোটা ভয়াবহ হতে পারে জানতে হলে চেরন বিল দূর্ঘটনার ভিডিওটি দেখুনঃ
পাওয়ার প্ল্যান্ট সম্বন্ধে অন্যান্য লেখাসমূহঃ
বর্তমান বিশ্ব ও পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
ইউরেনিয়াম সম্বন্ধে আলোচনা।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
বাষ্প বিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্বন্ধে আলোচনা।
পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইতিহাস ও সংক্ষিপ্ত আলোচনা।
পাওয়ার প্ল্যান্টঃ সংজ্ঞা, প্রকারভেদ ও কার্যপদ্ধতি।