পাখিরা বৈদ্যুতিক তারের উপর বসলে শক খায় না কেন?

বিদ্যুতের মজার কিছু ধর্ম আছে। আবার আছে কিছু বাড়তি সতর্কতাও। যেমন খোলা তারে হাত দেওয়া যাবে না, ভেজা হাত দিয়ে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা যাবে না ইত্যাদি। এসব নিয়ম হয়ত আপনি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেন, কিন্তু পশু-পাখিদের বেলায় কি ঘটে? তারা কি বিদ্যুতের ভয়াবহতা সম্পর্কে অবগত?

মোটেই না। আপনি হয়ত প্রায়ই দেখবেন পাখিরা বৈদ্যুতিক খুটির উপর বসে রোদ পোহাচ্ছে। কখনো কখনো শ-খানেক পাখি মিলে তারের উপর বসে কোন গুরুত্বপূর্ণ মিটিং করছে। কিন্তু আপনি কখনো তাদের বিদ্যুতপৃষ্ট হয়ে পড়ে যেতে দেখেন নি। কিংবা পুড়ে গ্রিল হয়ে যাওয়ার মতোও কোন গন্ধ পান নি। কিন্তু কেন? তারা কি শক খায় না? নাকি সৃষ্টিকর্তা তাদের এমন কোন সুপার পাওয়ারের অধিকারী করে তৈরি করেছে যাতে তারা বিদ্যুতপৃষ্ট না হয়?

এর উত্তর পেতে হলে আমাদের প্রথমে বুঝতে হবে বিদ্যুৎ কিভাবে প্রবাহিত হয়। বিদ্যুৎ প্রবাহ হল মূলত ইলেকট্রনের প্রবাহ। কিন্তু ইলেকট্রন একটু অলস, সে বেশি কষ্ট করতে চায় না। যে পথে সবচাইতে কম বাধা তথা রেজিস্টেন্স কম সেই পথ দিয়ে যেতেই ইলেকট্রন স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। আর যেসব পদার্থে রেজিস্টেন্স কম তাদের আমরা পরিবাহী বলি।

স্বর্ণের বিদ্যুৎ পরিবহন ক্ষমতা সবচাইতে বেশি। কিন্তু স্বর্ণের তার তৈরি করলে হয়ত কিছুদিন পর আর সেই তার খুজে পাওয়া যাবে না শুধু খুটি গুলোই রয়ে যাবে। বিশ্বে বিদ্যুৎ পরিবহনের জন্যে কপার বা তামার তার ব্যবহার করা হয়। এখন পাখির দেহ মোটেই ভাল পরিবাহী নয়। তাই ইলেকট্রন পাখির দেহকে বাদ দিয়ে তার নিজের পথেই চলে। পাখি বিদ্যুপৃষ্ট না হওয়ার এটা একটা কারণ।

পাখি বৈদ্যুতিক তারে নিশ্চিন্তে বসে থাকার পেছনে আরেকটি কারণও রয়েছে। বিদ্যুৎ তথা ইলেকট্রন প্রবাহিত হওয়ার একটি ধর্ম হল সেখানে বিভব পার্থক্য থাকতে হবে। একে দুটি পানিভর্তি পাত্র দ্বারা বিবেচনা করা যায়। পাত্র দুটি ভিন্ন পরিমাণ পানি দিয়ে পূর্ণ। এখন তাদেরকে যদি একটি নল দিয়ে সংযুক্ত করে দেওয়া হয় তাহলে যে পাত্রে পানির পরিমাণ বেশি সেখান থেকে পানি যে পাত্রে পরিমাণ কম সেখানে প্রবাহিত হবে।

অর্থাৎ পাত্র দুটিতে পানির পরিমাণ সমান না হওয়া পর্যন্ত পানি প্রবাহিত হতে থাকবে। তেমনি ভাবে ইলেকট্রন প্রবাহের জন্য দুই প্রান্তের বিভব সমান হওয়া যাবে না, নতুবা পানির মত ইলেকট্রন প্রবাহও বন্ধ হয়ে যাবে। এখন পাখি যে তারে দাঁড়িয়ে থাকে অর্থাৎ তার ২ পায়ের মধ্যবর্তী জায়গার বিভব পার্থক্য সমান থাকে। এজন্য তার দেহের ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় না।

কিন্তু পাখি সবসময় এতটা ভাগ্যবান নাও হতে পারে। যদি তার দুই পা ২ টি ভিন্ন তারে থাকে অথবা এক পা খুটিতে এবং অন্য পা তারের উপর থাকে তাহলে গল্পটা অন্যরকম হবে। এই অবস্থায় তাদের দুই পায়ের মধ্যবর্তী স্থানে বিভব পার্থক্যের সৃষ্টি হয় যার ফলে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হওয়ার মত একটি পথ তৈরি হবে। তখন ইলেকট্রন পাখির দেহের মধ্য দিয়ে ঘুরে অন্যত্র যাওয়ার চেষ্টা করবে এবং ইন্না নিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

এইভাবে বিদ্যুতপৃষ্ট হয়ে প্রতি বছর প্রচুর পাখি মারা যায় কিন্তু সচরাচর তা আমাদের চোখে পড়ে না। তাই বর্তমানে পাখিদের কথা বিবেচনা করে বিদ্যুতের খুটি গুলো একটু বেশি উচ্চতায় স্থাপন করা হয় এবং খুটির উপর পাখিদের নিরাপদে বসার মত জায়গাও রাখা হয়ে থাকে।