একদিন ক্লাসে ট্রান্সমিশন লাইন পড়াচ্ছি। এক ছাত্র প্রশ্ন করল, স্যার পিজিসিবি (পাওয়ার গ্রীড কোম্পানি অব বাংলাদেশ) কিভাবে ফিক্স করে যে ট্রান্সমিশন ভোল্টেজ ১৩২, ২৩০ অথবা ৪০০ কিলোভোল্ট হবে? প্রশ্নটি খুবই যুক্তিসঙ্গত। ট্রান্সমিশন ভোল্টেজ নির্ধারণের পেছনে বেশ কয়েকটি ফ্যাক্টর কাজ করে।
- লোড
- ট্রান্সমিশন লাইন কতটুকু পথ পাড়ি দিবে অথবা ট্রান্সমিশন লাইনের দৈর্ঘ্য
আর এই দুই ফ্যাক্টর এর বিবেচনা করে Cable Research Handbook Transmission Voltage এর একটি বিশেষ ফর্মূলা প্রদান করেছে। যেটি হল:
এবার আমি 50 MVA, 100 km দীর্ঘ লাইনের জন্য ট্রান্সমিশন লাইন ভোল্টেজ নির্ধারণ করব।
Power = 50 MVA = 50,000 KVA, Length = 100 km Transmission Voltage = 5.5 √(100/1.61 + 50,000/150) = 109.3 kV
সুতরাং 50 MVA, 100 km দীর্ঘ লাইনের জন্য ট্রান্সমিশন লাইন ভোল্টেজ হবে 109.3 kV
১৩২ এবং ২৩০ কিলোভোল্ট ট্রান্সমিশন লাইনের মধ্যে তুলনা
উচ্চতা
১৩২ কিলোভোল্ট লাইনের উচ্চতা ৫০ ফুট থেকে ১০০ ফুট। ২৩০ কিলোভোল্ট ট্রান্সমিশন টাওয়ারের উচ্চতা ১০০ থেকে ১৫০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে।
ইন্সুলেটর সংখ্যা
১৩২ এবং ২৩০ কিলোভোল্ট ট্রান্সমিশন লাইনে সাসপেনশন টাইপ ইন্সুলেটর ব্যবহার করা হয়। ১৩২ কিলোভোল্ট লাইনে ৬ টি এবং ২৩০ কিলোভোল্ট লাইনে ১২ টি ইন্সুলেটর ব্যবহার করা হয়।
ট্রান্সমিশন লাইনে ব্যবহৃত সাসপেনশন ইন্সুলেটরের হিসাব
নির্দিষ্ট ট্রান্সমিশন ভোল্টেজের জন্য ব্যবহৃত ইন্সুলেটরের সংখ্যা
132kV ট্রান্সমিশন ভোল্টেজের জন্য ব্যবহৃত ইন্সুলেটরের সংখ্যা
230kV ট্রান্সমিশন ভোল্টেজের জন্য ব্যবহৃত ইন্সুলেটরের সংখ্যা
উল্লেখ্য যে, উপরের হিসাবে লাইন ভোল্টেজকে ফেজ ভোল্টেজে রুপান্তর করার জন্য তাকে রুট থ্রি দিয়ে ভাগ করা হয়েছে। আর প্রতিটি সাসপেনশন টাইপ ইন্সুলেটরের সহনীয় ভোল্টেজ ১১ কিলোভোল্ট। তাই প্রাপ্ত ফেজ ভোল্টেজকে ১১ দিয়ে ভাগ করা হয়েছে।
তারের সাইজ
পাওয়ার, ভোল্টেজ এবং কারেন্টের সম্পর্ক থেকে আমরা জানি,
ফলে নিদির্ষ্ট পাওয়ারের জন্য ১৩২ কিলোভোল্ট ট্রান্সমিশন লাইনের কারেন্ট ২৩০ ভোল্ট ট্রান্সমিশন লাইনের তুলনায় বেশি। তাই ১৩২ কিলোভোল্ট ট্রান্সমিশন লাইনের পরিবাহী সাইজ ২৩০ কিলোভোল্ট এর তুলনায় বেশি হবে।
সিস্টেম লস/করোনা লস
ট্রান্সমিশন লাইন লসের ফর্মূলা থেকে আমরা জানি,
১৩২ কিলোভোল্ট ট্রান্সমিশন লাইনের কারেন্ট ২৩০ ভোল্ট ট্রান্সমিশন লাইনের তুলনায় বেশি।
তাই ১৩২ কিলোভোল্ট ট্রান্সমিশন লাইনের সিস্টেম লস/করোনা লস ২৩০ কিলোভোল্ট এর তুলনায় বেশি হবে।
বায়ুকে আয়নিত করার ক্ষমতা
২৩০ কিলোভোল্ট ট্রান্সমিশন লাইনের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ডের চাপ ১৩২ কিলোভোল্টের তুলনায় বেশি।
তাই ২৩০ কিলোভোল্ট ট্রান্সমিশন লাইন বায়ুকে খুব সহজে আয়নিত করতে পারে। আর দুটো পরিবাহীর মধ্যবর্তী লাইন স্পেস ঠিক না হলে বায়ু খুব সহজেই আয়নিত হতে পারে।
হামিং ইফেক্ট
ট্রান্সমিশন লাইনের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ডের চাপ বেশি হলে সেই পরিবেশের বায়ু আয়নিত হয়ে স্পার্ক সৃষ্টি করে। ফলে ঝিরঝির শব্দের সৃষ্টি হয়। এই প্রভাবকে বলা হয় হামিং ইফেক্ট। ২৩০ কিলোভোল্ট ট্রান্সমিশন লাইনের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ডের চাপ ১৩২ কিলোভোল্টের তুলনায় বেশি।
তাই ২৩০ কিলোভোল্ট ট্রান্সমিশন লাইনে হামিং ইফেক্টের প্রবল সম্ভবনা রয়েছে।
ট্রান্সমিশন লাইন নিয়ে আরো কিছু পোস্ট
ট্রান্সমিশন লাইনে ব্যবহৃত অপটিক্যাল গ্রাউন্ড ওয়্যার | Optical Ground Wire
থ্রি ফেজ ডাবল সার্কিট ২৩০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন সম্বন্ধে আলোচনা