সেমিকন্ডাক্টরের গাঠনিক বৈশিষ্ট্য | Structural Properties of Semiconductors

সেমিকন্ডাক্টরের গাঠনিক বৈশিষ্ট্য – আমরা জানি পরমাণুর মৌলিক উপাদান তিনটি-

  1. ইলেকট্রন।
  2. প্রোটন ও
  3. নিউট্রন।

বোর মডেল হতে আমরা দেখতে পাই, পরমানুর কেন্দ্রে প্রোটন ও নিউট্রন এদের একএে নিউক্লিয়াস বলে এবং চারপাশের স্থির কক্ষপথে ইলেকট্রন ঘূর্ণায়মান।

সেমিকন্ডাক্টরের বৈশিষ্ট্য
Atomic structure of (a) silicon; (b) germanium

উপরের চিএে, সিলিকনের বোর মডেলে ১৪ টি ইলেকট্রন ও জার্মেনিয়াম এর ৩২ টি ইলেকট্রন রয়েছে। সিলিকন এবং জার্মেনিয়ামের শেষ কক্ষপথে চারটি করে ইলেকট্রন রয়েছে। এই শেষ কক্ষপথের ইলেকট্রন গুলোকে Valance Electrons বলা হয়। এই ইলেকট্রন গুলোকে সরাতে যে শক্তির প্রয়োজন তা তুলনা মূলক ভাবে অন্য ইলেকট্রন গুলোর চেয়ে কম।

এতক্ষন একটি পরমাণু সম্পর্কে জানলাম কিন্তু যদি একটি সিলিকন বা জার্মেনিয়ামের ক্রিস্টাল হয় তাহলে গঠন কেমন হবে?

সেমিকন্ডাক্টরের বৈশিষ্ট্য
Covalent bonding of the silicon atom

পিওর সিলিকন বা জার্মেনিয়ামের ক্রিস্টালে চারটি valance ইলেকট্রন একে অপরের সাথে বন্ধনে আবদ্ধ থাকে। এভাবে ইলেকট্রন শেয়ারের মধ্যমে বন্ধন গঠন করাকে সমযোজী বন্ধন বলা হয়। আমরা জানি সমযোজী বন্ধনে কোন মুক্ত ইলেকট্রন থাকে না। মুক্ত ইলেকট্রন না থাকলে তড়িৎ প্রবাহিত হবে কিভাবে? সমযোজী বন্ধন শক্তিশালী হলেও বাইরের কোন উৎস হতে প্রয়োজনীয় Kinetic energy পেলে বন্ধন ভেঙ্গে যায় এবং ইলেকট্রন মুক্ত হয়ে যায়।

এবার একটু এনার্জি লেভেল নিয়ে আলোচনা করা যাক।

সেমিকন্ডাক্টরের বৈশিষ্ট্য
Discrete levels in isolated atomic structures

আমরা জানি কঠিন, তরল ও বায়বীয় পদার্থের আনবিক বিন্যাস ভিন্ন ভিন্ন। গ্যাসীয় পদার্থের ক্ষেএে কনা গুলো বেশ দূরে দূরে অবস্থান করে। তরলের ক্ষেএে কিছু নিকটে এবং কঠিন এর ক্ষেএে বেশ নিকটে। আমরা বোর মডেল থেকে জানি পরমানুর প্রতিটি শক্তিস্তরের শক্তির মান রয়েছে।

একটি পরমানুর বিভিন্ন শক্তিস্তরে অবস্থানরত ইলেকট্রন সমূহের শক্তির মান যে চিএের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় তাকে Energy Level Diagram বা Energy Band Diagram বলা হয়। যখন একটি পরমাণুর জায়গায় পুরো একটি ক্রিষ্টাল চলে আসে তখন শক্তি স্তর গুলোকে একএে বলা হয় Energy Band.

সেমিকন্ডাক্টরের বৈশিষ্ট্য
Energy Level Diagram

Conduction Band: মুক্ত ইলেকট্রন গুলো যখন কোন পদার্থে তড়িৎ প্রবাহিত করে তখন তাদের কন্ডাকশন ইলেকট্রন বলে। যেই ব্যান্ডে এই ইলেকট্রন গুলো চলাফেরা করে তাদেরকে কন্ডাকশন ব্যন্ড বলা হয়।

Forbidden Gap: একটি ব্যান্ডের পর আরেকটি ব্যান্ডের মাঝখানে কিছু ফাঁকা স্থান রয়েছে এদের Forbidden Gap বলা হয়। এখানে কোন ইলেকট্রন থাকে না। দুটো ব্যান্ডের মাঝে ফাঁকা স্থান বেশি থাকার অর্থ ভ্যা-লেন্স ব্যান্ডের ইলেকট্রন গুলোকে স্থানান্তরিত করতে বেশি শক্তির প্রয়োজন। 

Valance Band: পরমাণুর শেষ কক্ষপথের ইলেকট্রন গুলোকে ভ্যা-লেন্স ইলেকট্রন বলা হয়। যে ব্যান্ডে এই ইলেকট্রন গুলো চলাফেরা করে তাকে ভ্যা-লেন্স ব্যান্ড বলা হয়। এই বন্ডের ইলেকট্রন গুলো পর্যাপ্ত এনার্জি পেলে মুক্ত হয়ে কন্ডাকশন ব্যান্ডে পৌঁছে যায় এবং তড়িৎ প্রবাহিত করে।

সেমিকন্ডাক্টরের বৈশিষ্ট্য
Semiconductor energy band diagram 

অর্ধ-পরিবাহী (Semiconductor): সেমিকন্ডাক্টর এর মধ্য দিয়ে নির্ধারিত পরিমাণ বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। ভ্যালেন্স ব্যান্ডে মোটামুটি ভাবে ভ্যালেন্স ইলেকট্রনে পূর্ণ থাকে অন্যদিকে কন্ডাকশন ব্যান্ডে কোন ইলেকট্রন থাকে না।  উপরের চিএ হতে দেখা যায় ভ্যা-লেন্স ব্যান্ড এবং কন্ডাকশন ব্যান্ডের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থানের পরিমাণ খুব কম এটি প্রায় (1 eV) এর সমান। সামান্য কিছু বাহ্যিক শক্তি প্রদান করা হলে ইলেকট্রন মুক্ত হয়ে যায় এবং কন্ডাকশন ব্যান্ডে প্রবেশ করে ফলে তড়িৎ প্রবাহিত হয়। 

সেমিকন্ডাক্টরের বৈশিষ্ট্য
Conductor energy band diagram 

পরিবাহী (Conductor): পরিবাহী পদার্থের মধ্যদিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হতে পারে, কারন পরিবাহী পদার্থের কন্ডাকশন ব্যান্ডে প্রচুর পরিমান মুক্ত ইলেকট্রন থাকে। উপরের চিএ হতে দেখা যায় ভ্যা-লেন্স এবং কন্ডাকশন ব্যান্ডের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থান নেই বললেই চলে একটি আরেকটিকে ওভার ল্যাপ করেছে।

সেমিকন্ডাক্টরের বৈশিষ্ট্য
Insulator energy band diagram 

অপরিবাহী(Insulator): অপরিবাহী পদার্থের মধ্য দিয়ে কোন তড়িৎ প্রবাহিত হয় না, কারন অপরিবাহী পদার্থের কন্ডাকশন ব্যান্ডে কোন মুক্ত ইলেকট্রন থাকে না। উপরের চিএ হতে দেখা যায় অপরিবাহী পদার্থের ক্ষেএে ভ্যা-লেন্স এবং কন্ডাকশন ব্যান্ডের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থানের পরিমাণ অনেক বেশি প্রায় (15 eV) এর সমান। তাই প্রচুর শক্তির প্রয়োজন ইলেকট্রন মুক্ত করতে।