এয়ার কন্ডিশন আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে বহুলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। অফিস, ইন্ড্রাস্ট্রি, ব্যাংক, শপিং মল, আবাসিক বাসাবাড়ি এবং হোটেল সব জায়গায় এয়ার কন্ডিশন ব্যবহার হচ্ছে। গরমে এবং শীতে এয়ার কন্ডিশন ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। তবে এই এয়ার কন্ডিশনে নানা ধরনের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। এমনকি ঘটতে পারে বড়সড় বিস্ফোরণ। কিছুদিন আগেই নারায়নগঞ্জের এক মসজিদে এয়ার কন্ডিশন বিস্ফোরিত হয়ে বড় ধরনের ট্র্যাজেডি ঘটে গেল। তাই এই এয়ার কন্ডিশন যেকোন সময় হতে পারে মৃত্যুর কারণ। তবে এয়ার কন্ডিশন ব্যবহারে সতর্ক হলে এসব দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভবনা থাকেনা। আজ এয়ার কন্ডিশনের ৮ টি সমস্যা ও সমাধান, বিস্ফোরণের কারণ এবং প্রতিরোধ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
এয়ার কন্ডিশনের ৮টি সমস্যা ও সমাধান
ফিল্টার পরিষ্কার করা
ফিল্টার কয়েকদিন পর পর বদলানো উচিত। এসির কার্যকারিতা এই অংশটির পরিচ্ছন্নতার উপর নির্ভর করে। ময়লাযুক্ত ফিল্টার এসিকে মূল ফাংশনে বাধা দেয়। ফলশ্রুতিতে অনেকসময় ঘর ঠান্ডা করার বদলে ঘরকে গরম করে তুলে আপনার খুব প্রিয় এয়ার কন্ডিশনটি।
সার্কিট ব্রেকার রক্ষণাবেক্ষণ
কোনো ধরণের ইলেকট্রিক্যাল ক্ষতি থেকে ডিভাইসগুলোকে রক্ষা করতে সার্কিট ব্রেকার অতন্দ্র প্রহরীর মত কাজ করে। কোন কারণে এসি যদি কাজ না করে তাহলে প্রথমেই সার্কিট ব্রেকার চেক করুন। অনেকগুলো ডিভাইসের পাওয়ার কানেকশন একটি সার্কিট ব্রেকারে সংযুক্ত থাকলে অনেকসময় এসি কাজ করেনা, তাই এসির জন্য আলাদা সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করাই উত্তম।
এসিকে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা
কোনো ঝামেলা হলেই প্রথমেই এসি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করুন। প্রত্যেকটি ওয়্যার খুলে ফেলুন এবং পুনরায় সংযুক্ত করুন এসির সাথে দেওয়া ব্যবহার বিধি অনুসারে এবং পুনরায় এসি চালু করুন।
কম্প্রেসার পরিষ্কার রাখা
কম্প্রেসারের মূল কাজ হল ভেতরের গরম বাতাস বাইরে বের করে দেওয়া। তবে এই কাজটি করতে করতে অনেক ধুলোবালি এবং ময়লা জমে ওঠে এ অংশটিতে। এই অংশটিতে যদি ময়লা জমে ওঠে তাহলে গরম বাতাস বের হবেনা। স্বাভাবিকভাবে ফলে ঘর ঠান্ডা হবেনা ঠিকমত। তাই একটি ব্রাশ দিয়ে আলতো ভাবে এসির এই অংশটি নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।
ইউনিট ফ্যান পরিষ্কার রাখুন
আপনার এসির ফ্যানের কাজ ক্রমাগত গরম বাতাস বের করে দেওয়া। এই কাজটি করতে করতে অনেক ধুলোবালি ও ময়লাকেও আকৃষ্ট করে এই ফ্যান। এ কারণে ফ্যান থেকে আসতে পারে আওয়াজ, ফলে এসির স্বাভাবিক কাজে আসবে বাধা। তাই এই ফ্যানটির ব্লেডকে খুব সাবধানতার সাথে পাতলা কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করা উচিত।
ইউনিট ব্যাটারি পরিবর্তন করা
আপনার এসি যদি ব্যাটারি চালিত হয় তবে তা নির্দিষ্ট সময় পরপর বদলাতে হয়। তাই কখনও যদি এসি কাজ না করে তাহলে ভয় না পেয়ে ব্যাটারি চেক করুন।
সাপ্লাই ভোল্টেজ উঠানামার সমস্যা
আপনার ঘরের সাপ্লাই ভোল্টেজ যদি অতিরিক্ত উঠানামার সমস্যা থাকে তাহলে আপনার এসি কার্যকরী হবেনা। বরং যন্ত্রটি আরও ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তাই, ঘরে এসি বসানোর আগে আপনার সাপ্লাই ভোল্টেজ সম্বন্ধে জেনে নিন।
ভেতরে জমা বরফ দূরীকরণ
যদি ভেতরে বরফ জমে থাকে এসি কাজ করবেনা। বরফ জমলে এসি বন্ধ করে শুধু ফ্যানটি ছেড়ে রাখুন। এতে বরফ জমাট ভাঙতে থাকবে এবং একসময় ঝামেলার সমাধান হয়ে যাবে।
এসি বিস্ফোরণের কারণ ও প্রতিরোধের উপায়
এবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশে আসা যাক। সাম্প্রতিককালে এসি বিস্ফোরণ খুব আতংকের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় বিস্ফোরণের দুঃসংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। তাই আজ এয়ার কন্ডিশন বিস্ফোরণের কারণ এবং যেসব সতর্কতা অবলম্বন করলে এই দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে সেগুলো তুলে ধরা হলঃ
বিস্ফোরণের কারণ
রক্ষণাবেক্ষণের অভাব
এসি দূর্ঘটনার একটি বড় কারণ রক্ষণাবেক্ষণের অভাব। ফলে কারিগরি ত্রুটির কারণে এসিতে আগুন ধরে যেতে পারে বা এসির গ্যাসে আগুন লেগে সেটি ঘরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
নিম্নমানের এসি ক্রয় করলে
নিম্নমানের এসি কিনলে সেগুলোর ভেতরে ফ্যান, তারের, বিদ্যুতের ব্যবস্থাগুলো ঠিক থাকে না। ফলে সেখানেও কারিগরি ত্রুটি দেখা যায়, যা অনেক সময় আগুনের সূত্রপাত করতে পারে।
রুমের লোড অনুপাতে এসি ব্যবহার না করা
অনেকে রুমের লোড অনুপাতে এসি ব্যবহার করেন না। ফলে এসিটি অনেকক্ষণ ধরে চললে অতিরিক্ত গরম হয়ে যায়।
সঠিক মানের পাওয়ার ক্যাবল ব্যবহার না করলে
সঠিক মানের পাওয়ার ক্যাবল ব্যবহার না করলে এসি থেকে শর্ট সার্কিট হবার সম্ভবনা বেশি থাকে।
এসির কনডেনসারে ময়লা থাকলে
এসির কনডেনসারে অপরিষ্কার থাকলে কম্প্রেসারে অধিক তাপমাত্রা ও উচ্চচাপের সৃষ্টি হয়।
এসির ভেতরের পাইপের কোথাও ব্লকেজ হলে
এসির ভেতরের পাইপে ব্লকেজ হলে উচ্চমাত্রায় চাপ তৈরি হয়ে কম্প্রেসার ব্লাস্ট হতে পারে।
কম্প্রেসারে লিমিটের চেয়ে বেশি রেফ্রিজারেন্ট (refrigerant) চার্জ করলে
কম্প্রেসারে প্রয়োজনের বেশি রেফ্রিজারেন্ট চার্জ করলে এবং সঠিক পদ্ধতিতে রেফ্রিজারেন্ট চার্জ না করলে অধিক মাত্রায় চাপ তৈরি হয়।
কম্প্রেসারে প্রয়োজনীয় পরিমাণ রেফ্রিজারেন্ট না থাকলে
কম্প্রেসারে নির্দিষ্ট পরিমাণ রেফ্রিজারেন্ট বিদ্যমান না থাকলে ভেতরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে গিয়ে বিস্ফোরণের কারণ হতে পারে।
সঠিকভাবে এসির ভ্যাকুয়াম না করলে
সঠিকভাবে এসি থেকে বায়ু নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকলে এসি যেকোন সময় বিস্ফোরিত হতে পারে।
সঠিক রেটিং এর সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার না করলে
সঠিক রেটিং এর সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার না করলে শর্ট সার্কিট এর কবলে পড়ে এসি বিস্ফোরিত হতে পারে।
এসি বিস্ফোরণ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়
- কম্প্রেসারে অধিক চাপ অথবা তাপমাত্রা তৈরি হচ্ছে কিনা তা অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান এর মাধ্যমে পরীক্ষা করা।
- এসির কনডেন্সার নিয়মিত পরিষ্কার রাখা।
- ভালো মানের এবং সঠিক পাওয়ার ক্যাবল ব্যবহার করা।
- এসির ভেতরের পাইপের কোথাও ব্লকেজ আছে কিনা পরীক্ষা করা।
- সঠিকভাবে এসির ভ্যাকুয়াম করা।
- কম্প্রেসারে লিমিটের চেয়ে বেশি রেফ্রিজারেন্ট চার্জ না করা এবং সঠিক পদ্ধতিতে রেফ্রিজারেন্ট চার্জ করা।
- নিম্নমানের অখ্যাত কিংবা নকল ব্র্যান্ডের এসি এবং কম্প্রেসার ক্রয় এবং ব্যবহার থেকে বিরত থাকা।
- বিশ্বস্ত এবং নির্ভরযোগ্য ব্র্যান্ডের এসি, কম্প্রেসার এবং রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহার করা।
- কম্প্রেসারে প্রয়োজনীয় পরিমাণ রেফ্রিজারেন্ট আছে কি না তা অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান দ্বারা পরীক্ষা করা নিম্নমানের অখ্যাত কিংবা নকল ব্র্যান্ডের এসি এবং কম্প্রেসার ক্রয় এবং ব্যবহার থেকে বিরত থাকা।
- সঠিক রেটিংয়ের সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করা।
- বারান্দা কিংবা খুব কাছে না রেখে ঘরের বাইরে এসি আউটডোর সেট করা।
- দীর্ঘদিন পর এসি চালু করার আগে একজন দক্ষ সার্ভিস এক্সপার্ট দিয়ে এসিটি পরীক্ষা করে নেওয়া।
উপরোক্ত বিষয়গুলো শুধু পড়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলবেনা। আমাদের ব্যবহারিক জীবনেও এগুলোর সঠিভাবে প্রয়োগ করতে হবে। তাহলে আমরা এসি বিস্ফোরণের মত দূর্ঘটনা অনেকাংশে কমিয়ে আনতে সক্ষম হব।
বিদ্যুৎ নিয়ে মজাদার কিছু পোস্ট
বিদ্যুৎ নিয়ে জনমনের ভ্রান্ত ধারণা এবং সমাধান যা জেনে রাখা জরুরী
লোডশেডিং কি ও জনসাধারণের ধারণা এবং কারিগরি বাস্তবতা | বিদ্যুৎ গেলেই কি লোডশেডিং