পিএফআই প্যানেল এর (পাওয়ার ফ্যাক্টর ইমপ্রুভমেন্ট প্যানেল) সাথে আমরা সকলেই সুপরিচিত। এই নামটি শুনলেই বুঝা যায় যে পাওয়ার ফ্যাক্টরের মান আদর্শ মান থেকে হ্রাস পেলে এই প্যানেলটি তা বৃদ্ধি পেতে বা আদর্শ মানে পৌছে দিতে সাহায্য করে। ইতোমধ্যেই আগের বিভিন্ন আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সাথে পাওয়ার ফ্যাক্টর ইমপ্রুভমেন্টের জন্য ক্যাপাসিটর সিলেকশনের বিষয়টি তুলে ধরেছি। আজ পাওয়ার ফ্যাক্টর ইমপ্রুভমেন্ট প্যানেলের ওয়্যারিং ডায়াগ্রাম এবং তার অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন ডিভাইসের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট তুলে ধরার চেষ্টা করব।
তাহলে তার পূর্বে বুঝার সুবিধার্থে পাওয়ার ফ্যাক্টর ইমপ্রুভমেন্ট প্যানেলের ময়নাতদন্ত করলে কি কি ডিভাইস পাওয়া যাবে সেগুলোর তালিকা তুলে ধরতে চাই।
- বাসবার
- HRC (High Rupturing Capacity) ফিউজ
- ম্যাগনেটিক কন্ট্যাক্টর
- ফিক্সড ক্যাপাসিটর
- পাওয়ার ফ্যাক্টর কারেকশন রিলে
- ইন্ডিকেটর লাইট
উল্লেখ্য যে, পাওয়ার ফ্যাক্টর ইমপ্রুভমেন্ট প্যানেল দুই উপায়ে কন্ট্রোল করা যায়। যথাঃ
- পুশ সুইচ দিয়ে ম্যানুয়ালি
- পাওয়ার ফ্যাক্টর রিলের সাহায্যে অটোমেটিকভাবে
প্রথমে ম্যানুয়াল অপারেশনটি তুলে ধরার চেষ্টা করব। প্রথমে চিত্রের সাহায্যে কানেকশন ডায়াগ্রামটি তুলে ধরা হল। ভালভাবে লক্ষ্য করুন এবং ঠান্ডা মাথায় বুঝার চেষ্টা করুন। চিত্রে বেলনাকৃতির যে ডিভাইসটি দেখতে পাচ্ছেন সেটি হল ফিক্সড ক্যাপাসিটর। এগুলোর মাধ্যমেই পাওয়ার ফ্যাক্টর ইমপ্রুভ করা হয়। এই ক্যাপাসিটরগুলো বিভিন্ন স্টেজে সাজানো হয়।
কতটি স্টেজে সাজানো থাকে এবং কিভাবে বুঝব কতটি স্টেজে সাজাতে হবে?
৬, ১২ এবং ২৪ স্টেজেই সাজানো থাকে। সেটি নির্ভর করছে আপনার ফ্যাক্টরির লোডের ক্যাপাসিটির উপর। তবে সাধারণভাবে ফ্যাক্টরির ট্রান্সফরমারের পাওয়ার রেটিং বিবেচনায় নিম্নোক্তভাবে ফিক্সড ক্যাপাসিটর বিভিন্ন স্টেজে সাজানো থাকে।
- যদি ৫০০ kVA হয় তাহলে ৬ স্টেজে।
- ৫০০ থেকে ১০০০ kVA হয় তাহলে ১২ স্টেজে।
- ১০০০ kVA এর বেশি হলে ২৪ স্টেজে ।
আর সাজানোর প্রসেসটা হল আপনাকে মানের উর্ধক্রমানুসারে সাজাতে হবে। যেমন ধরেন যদি আপনার টোটাল ৬০ kVAR এর রিয়েক্টিভ পাওয়ার দরকার হয় এবং সেটি যদি ৬ স্টেজে সাজাতে চান তাহলে ৬, ৮, ৯, ১০, ১২, ১৫ kVAR এই সিকুয়েন্সে সাজানোটাই শ্রেয়। আর ক্যাপাসিটরগুলো পরস্পরের সাথে প্যারালালে সংযুক্ত থাকে যেন প্রতিটি ক্যাপাসিটর LT প্যানেলের ৩৮০/৪০০/৪৪০ ভোল্ট পায়।
পিএফআই প্যানেল ওয়্যারিং ডায়াগ্রাম এবং ময়নাতদন্ত
এবার ডায়াগ্রাম থেকে বুঝা যাচ্ছেঃ
- LT প্যানেলের MCCB হয়ে ৩৮০/৪০০/৪৪০ ভোল্ট সাপ্লাই পিএফআই প্যানেলের বাসবারে অনুপ্রবেশ করে।
- বাসবার আর LT প্যানেলের মাঝে অতন্দ্র প্রহরীর ন্যায় কাজ করে HRC ফিউজ।
- এরপর বাসবার থেকে ম্যাগনেটিক কন্টাক্টরের সাহায্যে প্রতিটি ক্যাপাসিটর ৩৮০/৪০০/৪৪০ ভোল্ট সাপ্লাই পেয়ে থাকে।
- এখানে ক্যাপাসিটরগুলোর সাথে ম্যাগনেটিক কন্টাক্টরের ডাইরেক্ট অনলাইন স্টাটার কানেকশন দেয়া আছে।
- এখানে ৬ স্টেজে ক্যাপাসিটর সাজানো আছে।
- অন পুশ সুইচ এ চাপ দিলেই ম্যাগনেটিক কন্ট্যাক্টরের নরমালি ওপেন কন্ট্যাক্ট ক্লোজ হয়ে যাবে এবং ক্যাপাসিটর পাওয়ার পাবে।
- পাওয়ার পাওয়া ক্যাপাসিটরটি পাওয়ার ফ্যাক্টর কারেকশনে কাজ করবে।
যদি কাজটি অটোমেটিকভাবে করতে চান তাহলে পুশ সুইচ ব্যবহার না করে পাওয়ার ফ্যাক্টর রিলে ব্যবহার করতে হবে যেটা পাওয়ার ফ্যাক্টর কমে গেলেই ম্যাগনেটিক কন্ট্যাক্টরের মাধ্যমে পাওয়ার ফিক্সড ক্যাপাসিটরে পৌঁছে দিবে। এই রিলের সাথে ইন্ডিকেটর লাইটের সংযোগও থাকে। যে ক্যাপাসিটরটি অপারেশনে থাকবে তার সংশ্লিষ্ট ইন্ডিকেটর লাইটটি জ্বলে উঠবে।
পাওয়ার ফ্যাক্টর ইন্ডাস্ট্রির জন্য খুব সেন্সিটিভ একটি ইস্যু। যদি পাওয়ার ফ্যাক্টর নিয়ন্ত্রণে না থাকে তাহলে কোম্পানিকে গুণতে হয় হাজার টাকার জরিমানা যাকে বলা হয় পেনাল্টি চার্জ। তাই জরিমানা থেকে মুক্তি লাভ এবং লাইন লস কমাতে পিএফআই প্যানেল মোক্ষম হাতিয়ার।
পাওয়ার ফ্যাক্টর ইমপ্রুভমেন্ট নিয়ে আরো কিছু পোস্ট
বর্তমান পাওয়ার ফ্যাক্টর 0.80, কোম্পানির প্রয়োজন 0.99, এক্ষেত্রে কি করবেন?
PFI – Power Factor Improvement | পাওয়ার ফ্যাক্টর ইমপ্রুভমেন্ট ও ক্যালকুলেশন