পাওয়ার ফ্যাক্টর শব্দটি কারোই অজানা বিষয় নয়। তবুও কিছু প্রশ্ন মাঝেমধ্যে মনের মধ্যে উঁকি দেয় যা সত্যিই ভাবিয়ে তুলে। আমরা শুনেছি পাওয়ার ফ্যাক্টর লিডিং, ল্যাগিং এমনকি ইউনিটিও হতে পারে। আচ্ছা, এমন প্রশ্ন কি মাথায় এসেছে পাওয়ার ফ্যাক্টর কি শূন্য হতে পারে? হলেও কোন শর্তে শূন্য হবে? ঐ অবস্থায় পাওয়ার সিস্টেমে কি ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে? মূলত এ নিয়েই আজকের আলোচনার আসর। বাইরে খুব শীত। শুনশান পরিস্থিতি বিরাজমান। আর এই মূহুর্তে যদি হয়ে যায় এক কাপ চা/কফি তবে মন্দ হয়না। চা আসতে আসতে আলোচনা শুরু করা যাক।
পাওয়ার ফ্যাক্টর এবং রোমিও-জুলিয়েট
পাওয়ার ফ্যাক্টরের সংজ্ঞায় যেতে চাই প্রথমে। জানি পাওয়ার ফ্যাক্টরের সংজ্ঞা কথাটা শুনেই কেমন যেন একঘেয়ে ভাব চলে এসেছে মনে তাইনা? এইতো সব মজার ছিল। হুট করে নিয়ে এলাম চিরায়ত সেই পাওয়ার ফ্যাক্টরের সংজ্ঞা তাইনা? আমিও জানি, এই পাওয়ার ফ্যাক্টরের সংজ্ঞা বিভিন্ন বই, ব্লগসাইটে এতবার দেখা হয়েছে যে, একঘেয়ে বিরক্তিকর অনুভূতি আসাটা খুব স্বাভাবিক। তাই চলুন গদবাধা বইপুস্তকের ভাষায় আর না।
আজ রোমান্টিকভাবে পাওয়ার ফ্যাক্টরের পরিচয় তুলে ধরার প্রচেষ্টা করব। ফেব্রুয়ারি মাস এসে গেল। সামনে ভ্যালেন্টাইন ডে। সে হিসেবে সময়োপযোগী পোস্ট বলা যায়। ভোল্টেজ এবং কারেন্ট হল রোমিও জুলিয়েটের চেয়েও রোমান্টিক কাপল। তারা সর্বদাই কাছকাছি থাকতে চায়। দূরে যেতে চায়না। আর কারেন্ট আপু ভোল্টেজ ভাইয়ার যত কাছাকাছি আসবে (লিডিং) তাদের মধ্যে বিরহ কমে যাবে এবং আপনার পাওয়ার ফ্যাক্টরের মানও বাড়তে থাকবে। তাই পিএফআই প্যানেল সাজিয়ে এই কাপলের বিরহ কমানোর চেষ্টা করা হয়ে থাকে। আবার যদি ভোল্টেজ এবং কারেন্ট যুগল যদি পরস্পর থেকে দূরে সরে যায় (ল্যাগিং) তাহলে তাদের মধ্যবর্তী ফেজ এংগেল বেড়ে যায় এবং পাওয়ার ফ্যাক্টর কমে যায় এবং আপনার কোম্পানিকেও লসের বোঝা বহন করতে হয়। আর যদি তাদের মিলন ঘটে (একই ফেজ) তাহলে ত কথাই নেই। পাওয়ার ফ্যাক্টর চলে যাবে ইউনিটিতে।
এবার গদবাধা বইপুস্তকের ভাষায় বললে বলা যায়, “কারেন্ট এবং ভোল্টেজের মধ্যবর্তী কোণের কোসাইন মানকে পাওয়ার ফ্যাক্টর বলে”। পাওয়ার ফ্যাক্টর নির্দেশ করে থাকে যে শতকরা কতভাগ বিদ্যুৎ আমরা প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করতে পারি। পাওয়ার ফ্যাক্টরের মান (০-১) পর্যন্ত হয়ে থাকে। cosθ দ্বারা পাওয়ার ফ্যাক্টরকে প্রকাশ করা হয় কিন্তু θ দ্বারা কারেন্ট এবং ভোল্টেজের মধ্যবর্তী কোণকে বুঝায়। আর এই কোণ যত বাড়ে পাওয়ার ফ্যাক্টরের মান তত কমে এবং কোণের মান যত কমে কোসাইন মান তথা পাওয়ার ফ্যাক্টর তত বাড়ে।
পাওয়ার ফ্যাক্টর শুন্য হতে পারে কি?
থিওরিটিক্যালি পাওয়ার ফ্যাক্টর শূন্য হতে পারে। আপনার ব্যবহার করা লোডটি যদি পিউর ইন্ডাক্টিভ/ক্যাপাসিটিভ হয় তাহলে সেই ক্ষেত্রে পাওয়ার ফ্যাক্টর শূন্য হতে পারে।
কিভাবে?
আমরা জানি, ইন্ডাক্টিভ/ক্যাপাসিটিভ লোডের ক্ষেত্রে কারেন্ট ভোল্টেজের সাথে ৯০ ডিগ্রী ল্যাগিং/লিডিং কন্ডিশনে থাকে। আর পাওয়ার ফ্যাক্টরের চিরায়ত সূত্রে এই এংগেলের মান বসালে আমরা শূন্য পাব। কারণ কোসাইন অপারেটরের জন্য ৯০ ডিগ্রীর মান শূন্য। এই অবস্থা আসলে কোন পরিস্থিতির ইংগিত বহন করে?
এই অবস্থা মূলত এটাই নির্দেশ করছে যে আমার সিস্টেমের সম্পূর্ণ অংশ জুড়ে রিয়েক্টিভ পাওয়ার বিরাজমান। তার মানে সেখানে রিয়েল পাওয়ার (কিলোওয়াট) এর কোন হদিস নাই। এই ব্যাপারটিকে যদি আনুপাতিকভাবে দেখানো হয় তাহলে এভাবে দেখানো যায়,
পাওয়ার ফ্যাক্টর = রিয়েল পাওয়ার / এপারেন্ট পাওয়ার
এখানে যেহেতু রিয়েল পাওয়ার শূণ্য তাহলে পাওয়ার ফ্যাক্টরও শূণ্য হচ্ছে। এমন কোন পাওয়ার সিস্টেম নেই যেখানে নূন্যতম রিয়েল পাওয়ার নেই। মোটর ইন্ডাক্টিভ লোড হলেও তার রোটর ঘুরবে রিয়েল পাওয়ারে। যদি হাইপোথিটিক্যালি চিন্তা করেন, রিয়েল পাওয়ারই যদি না থাকে তাহলে সেই মোটর ঘুরাই বন্ধ হয়ে যাবে। রিয়েক্টিভ কম্পোনেন্টের ১০০% আধিপত্যের কারণে পাওয়ার সিস্টেমই নষ্ট হয়ে যাবে।
আমরা জানি,
I = P/Vcosθ
তার মানে পাওয়ার ফ্যাক্টর যদি শূন্য হয় তাহলে অসীম কারেন্ট নিবে। ফলে শর্ট সার্কিট হবার ঝুঁকিও প্রকট হচ্ছে।
পাওয়ার ফ্যাক্টর নিয়ে আরো কিছু পোস্ট