ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে অনেক আড্ডা হয়েছে। তবে এবার কিছু ব্যতিক্রম দেয়ার চেষ্টা করব। আজকে আপনাদের সামনে এমন একটি মজার গল্প উপস্থাপন করব যে গল্পে পুরো ইলেকট্রিক্যাল ডিপার্টেমেন্টের সিলেবাস কাভার হবে। এখন নিশ্চয়ই কৌতূহল হচ্ছে কি সেই গল্প? চলুন শুনে নেয়া যাক।
ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে মজার গল্প
- আজকের দিনটা বেশ মেঘলা। বারান্দায় বসে বৃষ্টিবিলাস করছি এবং গল্প লিখছি। বজ্রপাত হতেই মনে পড়ে গেল এক দম্পতির কথা। বহুকাল আগে একটি শহরে এক দম্পতি বাস করত। যাদের নাম ছিল ভোল্টেজ এবং কারেন্ট।
- তারা দুজন একটা গৃহে অবস্থান করত। যার নাম ছিল কন্ডাক্টর বা পরিবাহী।
- এই গৃহটিতে তিনটি দরজা আছে। একটি প্রবেশ করার জন্য যার নাম ফেজ, অপরটি বের হবার জন্য যার নাম নিউট্রাল এবং শেষেরটি ইমার্জেন্সি মূহুর্তের জন্য যার নাম আর্থিং।
- গৃহটি ছিল জরাজীর্ণ যার অবস্থা রেজিস্ট্যান্সের মতই ভাবা যায়। কারেন্ট এবং ভোল্টেজ সবসময় একসাথেই অবস্থান করে। একজন অন্যজন থেকে আলাদা হতে চায়না।
- বছর দুয়েকের মধ্যেই তাদের ঘরে জন্ম নিল এক ফুটফুটে সন্তান। খুব যত্ন করে যার নামকরণ করা হল পাওয়ার। পাওয়ার ছিল তাদের প্রাণভ্রোমরা। তার মানে পাওয়ারের মধ্যেই ছিল তাদের প্রাণ।
- আস্তে আস্তে এরপর পাওয়ারের বিয়ে হল। পাওয়ারের ঘরেও জন্ম নিল এপারেন্ট পাওয়ার, রিয়েক্টিভ পাওয়ার এবং রিয়েল পাওয়ার।
- তাদের ফ্যামিলি বড় হতে লাগল। তাই তারা আগের বাড়ি ছেড়ে আরো বড় বাড়িতে উঠল যার নাম সাবস্টেশন। সাধারণত বৈদ্যুতিক লোড যেমন ৫০ মেগাওয়াটের বেশি হলে সাবস্টেশন ব্যবহার করতে হয় এখানেও ব্যাপারটা তেমনই।
- অতঃপর তারা সিদ্ধান্ত নিল হাত পা গুটিয়ে বসে না থেকে মানবসেবায় নিজেদের নিয়োজিত করবে। ভোল্টেজ, কারেন্ট, পাওয়ারের কাছে অলৌকিক ক্ষমতা ছিল। তারা মানুষের বাড়ির সব ইলেকট্রিক্যাল সরঞ্জামে ছোয়া দিলেই সেগুলো চালু হয়ে যেত। এই যাদুকরি ক্ষমতা দেখে ত সবাই অবাকবনে গেল৷
- তারা ভারী ভারী যন্ত্রপাতি পরিচালনার জন্য অধিক যাদুকরি ক্ষমতা দেখাত। আবার অল্প ক্ষমতার যন্ত্রপাতির জন্য অল্প ক্ষমতা প্রদর্শন করত। একটি স্পেশাল ম্যাজিকাল গ্যাজেটের সাহায্যে তারা এই ক্ষমতা বাড়িয়ে বা কমিয়ে নিত যার নাম ট্রান্সফরমার।
- কোন কোন সময় তাদের মধ্যে তাদের যাদুকরি ক্ষমতা কমে যেত। তখন আরেকটি স্পেশাল গ্যাজেটের সাহায্যে তারা তাদের যাদুশক্তি ফিরিয়ে আনত যার নাম রেগুলেটর। এলাকার মানুষ সুবিধা ভোগ করলেও একটি চিন্তা তাদের মাথায় ভর করে বসল৷ কি সেই চিন্তা?
- যারা এত যাদুকরি শক্তি দিয়ে কল্যাণ করতে পারে তারা অসন্তুষ্ট হলে তাদের ক্ষতির কারণও হতে পারে। যাদুর বলে তাদের বিনাশ ঘটাতে পারে। তাই এলাকাবাসী মিলে সিদ্ধান্ত নিল তারা ক্ষতিকর যাদু রদ করার জন্য একটি তাবিজ তৈরি করবে। সেই তাবিজের নাম হল সুইচগিয়ার। এই সুইচগিয়ারের মাধ্যমে যাদুকরি শক্তিসম্পন্ন ভোল্টেজ, কারেন্ট, পাওয়ারদের তারা বশে আনতে সক্ষম হয়েছিল। যেমন আমরা বিদ্যুৎ শক্তিকে সার্কিট ব্রেকার, আইসোলেটর, সুইচ, রিলে দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করি।
- অতঃপর এক বুদ্ধিমান লোক রিলের সাথে ভোল্টেজ কারেন্টের যাদুশক্তির একটি যোগসাযোগ খুজে পেল। সে ভাবল এই রিলে, সেন্সর এবং যাদুশক্তি দিয়ে যেকোন কাজ অটোমেটিকভাবে করা সম্ভব। এই ধারণা সবার অনেক উপকার বয়ে আনল। আর এই ধারণার উন্নত সংস্করণ হল পি এল সি বা প্রোগ্রামেবল লজিক কন্ট্রোলার। এভাবে পুরো এলাকার অনেক উন্নয়ন বয়ে আসতে লাগল। অন্ধকার সভ্যতা দেখল আলোর পথ।
গল্পটিতে পুরো ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেমকে এক জায়গায় একত্রীভূত করার প্রচেষ্টা করেছি। নবীন ছাত্রদের জন্য এই গল্পটি তাদের কোর্সের সারাংশ হিসেবে কাজ করবে বলে আশা রাখি। ধন্যবাদ।
আরো কিছু আর্টিকেল
ইলেকট্রিক্যাল এনার্জির প্রাথমিক উৎসগুলো সম্বন্ধে আলোচনা | Electrical energy source
বিদ্যুৎ নিয়ে অজানা এবং মজাদার কিছু তথ্য
বিদ্যুৎ নিয়ে জনমনের ভ্রান্ত ধারণা এবং সমাধান যা জেনে রাখা জরুরী