মোটামুটি আমরা সকলেই এই নামটার সাথে পরিচিত। সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করলে অনেক বড় একটা ক্ষেত্র এই ইলেকট্রিক পাওয়ার সিস্টেম। ইলেকট্রিক পাওয়ার সিস্টেম পুরো ক্ষেত্র বা প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় অনেকগুলো ধাপের মাধ্যমে। আমরা এই লেখাতে ধাপগুলো নিয়ে আলোচনা করব।
- বৈদ্যুতিক শক্তির উৎস
- ট্রান্সমিশন লাইন
- শর্ট ট্রান্সমিশন, লং ট্রান্সমিশন, মিডিয়াম ট্রান্সমিশন
- ট্রান্সমিশন লাইন ট্রান্সপজিশন, ডিস্ট্রিবিউশন লাইন
- ট্রান্সমিশন সিস্টেম, ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম
- ফীডার ও ফীডারের বৈশিষ্ট্য
- হাই ও লো ভোল্টেজ ট্রান্সমিশনের সুবিধা সমূহ
- গ্রীড সিস্টেম
- জাতীয় গ্রীড
- ইন্টারকানেক্টেড গ্রীড সিস্টেম
বৈদ্যুতিক শক্তির উৎস
বৈদ্যুতিক শক্তির উৎস (Source of Electrical Power): পানি, বাতাস, সূর্যের আলো, জীবশ্ব জ্বালানি, নিউক্লিয়ার এনার্জি ইত্যাদি।
আধুনিক ইলেকট্রিক পাওয়ার সিস্টেম এ পাওয়ার ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন এসি বা ডিসি দুইভাবেই হতে পারে। এসি ব্যবস্থায় ট্রান্সমিশন তিন ফেজ তিন তার এবং ডিস্ট্রিবিউশন এর ক্ষেত্রে তিন ফেজ চার তার ব্যবস্থা সাধারণত ব্যবহৃত হয়।
সাধারণত একটি আধুনিক ইলেকট্রিক পাওয়ার সিস্টেম উপাদান সমূহ (Elements of a modern AC Power System)
১. উৎপাদন কেন্দ্র।
২. স্টেপ আপ কেন্দ্র।
৩. ট্রান্সমিশন লাইন।
৪. সুইচিং স্টেশন।
৫. স্টেপ ডাউন উপকেন্দ্র।
৬. প্রাইমারি ডিস্ট্রিবিউশন লাইন বা নেটওয়ার্ক।
৭. সার্ভিস ট্রান্সফর্মার।
৮. সেকেন্ডারি ডিস্ট্রিবিউশন লাইন।
ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন এর জন্য কতিপয় স্ট্যান্ডার্ড ভোল্টেজ সমগ্র বিশ্বব্যাপী প্রচলিত। জেনারেটর এর ক্যাপাসিটি, জেনারেটিং ভোল্টেজ ট্রান্সমিশন লাইনের দৈর্ঘ্য, স্ট্যান্ডার্ড ট্রান্সমিশন ভোল্টেজ, স্ট্যান্ডার্ড ডিস্ট্রিবিউশন ভোল্টেজের প্রতি লক্ষ্য রেখে সিস্টেমের জন্য সর্বোচ্চ সুবিধাজনক মান নির্ধারণ করা হয়।
বিঃদ্রঃ সকল ইলেকট্রিক পাওয়ার সিস্টেম এ ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমে সবগুলো উপাদান নাও থাকতে পারে।
ট্রান্সমিশন লাইন
ট্রান্সমিশন লাইন (Transmission Line): বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র হতে উচ্চ পাওয়ার ট্রান্সমিশন এর জন্য যে উচ্চ ভোল্টেজের বিশাল সার্কিট গড়ে তোলা হয় সেটি ট্রান্সমিশন লাইন। অধিক পাওয়ার ট্রান্সমিশন এর জন্য ট্রান্সমিশন লাইন সিঙ্গেল সার্কিট, ডাবল সার্কিট, ত্রিপল সার্কিট হয়ে থাকে।
অপারেটিং ভোল্টেজ এর ভিত্তিতে ট্রান্সমিশন লাইন দুই প্রকার
১. প্রাইমারি ট্রান্সমিশন: 230 KV, 132 KV
২. সেকেন্ডারি ট্রান্সমিশন: 66KV, 33KV
ট্রান্সমিশন লাইন অর্থাৎ শর্ট, মিডিয়াম এবং লং লাইনের বৈশিষ্ট্য
১. শর্ট ট্রান্সমিশন: যদি কোন ট্রান্সমিশন লাইনের দৈর্ঘ্য 80KM এর কম হয় এবং লাইন ভোল্টেজ 20KV এর কম হয় তবে তাকে শর্ট ট্রান্সমিশন লাইন বলে।
২. মিডিয়াম ট্রান্সমিশন: যদি কোন ট্রান্সমিশন লাইনের দৈর্ঘ্য 80 কিলোমিটারের বেশি কিন্তু 200KM এর কম হয় এবং লাইন ভোল্টেজ 20KV এর বেশি কিন্তু 100 KV এর কম হয় তবে তাকে মিডিয়াম ট্রান্সমিশন লাইন বলে।
৩. লং ট্রান্সমিশন: যদি কোন ট্রান্সমিশন লাইনের দৈর্ঘ্য 200KM এর বেশি হয় এবং লাইন ভোল্টেজ 100KV এর বেশি হয় তবে তাকে লং ট্রান্সমিশন লাইন বলে।
ট্রান্সমিশন লাইন ট্রান্সপজিশন(Transposition in Transmission Line)
ট্রান্সমিশন লাইন ট্রান্সপজিশন করলে প্রত্যেক লাইনের গড় ইন্ডাক্টান্স ক্যাপাসিট্যান্স সমান হয় ফলে ভোল্টেজ রেগুলেশন পরিবহন দক্ষতা অপেক্ষাকৃত উন্নত হয়।
ডিস্ট্রিবিউশন লাইন (Distribution Line)
গ্রাহক পর্যায়ে অর্থাৎ দোকানপাট বাড়িঘর শিল্প-কারখানা প্রভৃতি স্থানে ইলেকট্রিক পাওয়ার সিস্টেম পৌঁছে দেওয়া বা বিতরনের জন্য যে সার্কিট গড়ে তোলা হয় সেটি ডিস্ট্রিবিউশন লাইন। এতে অনেক শাখা থাকে এবং অসংখ্য ট্যাপিংয়ের মাধ্যমে সার্ভিস সংযুক্ত থাকে।
ভোল্টেজ এর ভিত্তিতেডিস্ট্রিবিউশন লাইন দুই প্রকার
১. প্রাইমারি ডিস্ট্রিবিউশন: 11 KV, 6.6 KV, 3.3 KV.
২. সেকেন্ডারি ডিস্ট্রিবিউশন: 400V, 220V.
ট্রান্সমিশন সিস্টেম এবং ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমে সরবরাহ ও এর ধরন (Supply and Supply style in Transmission and Distribution system):
বৈদ্যুতিক পাওয়ার ট্রান্সমিশন এর ক্ষেত্রে AC 3Phase-3wire পদ্ধতি সর্বাধিক প্রচলিত। ডিস্ট্রিবিউশন এর ক্ষেত্রে AC 3Phase-4wire পদ্ধতি বহুল ব্যবহৃত। এছাড়া ও যে সকল পদ্ধতিতে বৈদ্যুতিক পাওয়ার ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন করা যায় তা হলো:
- DC system: (DC two wire, DC two wire main pointed earthed, DC three phase system.)
- Single phase AC system: (Single phase two wire, AC two wire main pointed earthed, Single phase three wire.)
- Phase AC system: (Two phase three wire, Two phase four wire)
- 3 phase AC system: (Three phase three wire, Three phase four wire.)
ফিডার(Feeder)
বিভিন্ন জনবহুল এলাকা শিল্পাঞ্চল বা আবাসিক এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণের জন্য উচ্চ ভোল্টেজ উপকেন্দ্র বা গ্রিড উপকেন্দ্র থেকে বিভিন্ন লোড সেন্টারে বিদ্যুৎ সরবরাহের নিমিত্তে যে বৈদ্যুতিক লাইন নির্মিত হয় তাকেই ফিডার বলে অর্থাৎ এটা হলো উচ্চ ভোল্টেজ বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র হতে নিম্নচাপ এর বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র মধ্যে সংযুক্ত লাইন।
ফিডারের বৈশিষ্ট্য (Feature of Feeder)
১. ফিডারে কোন ট্যাপিং থাকেনা।
২. কারেন্ট ডেন্সিটি সর্বত্র সমান থাকে।
৩. কারেন্ট ক্যাপাসিটর এর উপর ভিত্তি করে ফিডার ডিজাইন করা হয়।
৪. ইহা একটি মোটা আকৃতির কেবল, যা সাব-স্টেশন থেকে কোন এলাকায় পাওয়ার ভিতরের জন্য ব্যবহৃত হয়।
৫. ভোল্টেজ ড্রপকে তত গুরুত্ব দেওয়া হয় না কারন ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা বিদ্যমান।
হাই-ভোল্টেজ ট্রান্সমিশনের সুবিধা (Advantage of High voltage Transmission Line)
১. High Voltage Power transmission এ আয়তন কম লাগে।
২. High Voltage এ Transmission line এর দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
৩. High Voltage Transmission line এর ভোল্টেজ ড্রপ এর হার কম।
৪. Transmission line এর Voltage বেশী হলে Line Current এর পরিমান কমে যায়, ফলে Line লস এর মান কম হয়।
লো-ভোল্টেজ ট্রান্সমিশন এর সুবিধা (Advantage of Low voltage Transmission Line)
১. Line support এর পরিমান কম লাগে বলে খরচ কম হয়।
২. Transmission খরচ কম হয়।
৩. Ground Clearance & Conductor Spacing কম হলেও কোনো সমস্যা হয়না।
গ্রিড সিস্টেম (Grid system)
একাধিক পাওয়ার প্ল্যান্টের উৎপাদিত বিদ্যুৎ শক্তি কে একটি নেটওয়ার্কের আওতায় নির্দিষ্ট উচ্চ মানের ভোল্টেজে ট্রান্সমিশন লাইনের মাধ্যমে সম্মিলিত সরবরাহ করার ব্যবস্থা কে গ্রিড বলে।
অর্থাৎ কোন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে মোট যে বৈদ্যুতিক শক্তি উৎপাদন হয় সেই বৈদ্যুতিক শক্তি উচ্চ ভোল্টেজের ট্রান্সমিশন লাইন দ্বারা দূরবর্তী বিভিন্ন উৎপাদন কেন্দ্র হতে বিদ্যুৎ গ্রহন করা, বহন করা এবং বিতরন লাইন দ্বারা উৎপাদিত বিদ্যুৎ গ্রাহকদের নিকট পৌছে দেবার ব্যবস্থাকে গ্রিড সিস্টেম বলে।
জাতীয় গ্রিড কি?
উৎপাদিত বিদ্যুৎ পুরো দেশে সরবরাহ করা হলে সরবরাহকৃত বিদ্যুতের মোট পরিমাণকে বলা হয় জাতীয় গ্রীড
জাতীয় গ্রিড কে সাধারণত মেগাওয়াট (MW) দিয়ে প্রকাশ করা হয়। বর্তমানে আমাদের দেশে সর্বোচ্চ জাতীয় গ্রিড ৭০০০ মেগাওয়াট এর উপরে এবং এটি ধীরে ধীরে বাড়ছে।
ইন্টারকানেক্টেড গ্রিড সিস্টেম
Generating Station কে যখন Series এ সংযোগ করে মোট উৎপাদিত বৈদ্যুতিক শক্তি একত্রে সরবরাহ করা হয় তখন তাকে ইন্টারকানেক্টেড গ্রিড সিস্টেম বলে।