কারেন্ট শব্দটার সাথে আমরা সবাই কম বেশী পরিচিত। আমাদের বাসা-বাড়ি বা অফিসে বিদ্যুৎ চলে গেলে আমরা বলি কারেন্ট চলে গেছে আবার বিদ্যুৎ চলে আসলে বলি কারেন্ট চলে আসছে। কিন্তু আসলে এই কারেন্ট কি? কোন দিক থেকে কোন দিকে আসে যায়? এ সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই সুস্পষ্ট ধারণা নেই। তাই আজ আমরা কারেন্ট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
আজকের আলোচনায় যেসব বিষয় থাকছেঃ
- কারেন্ট কি?
- কারেন্টের প্রতীক ও একক।
- কারেন্ট কোন দিকে প্রবাহিত হয়।
- কারেন্টের প্রকারভেদ ও ব্যখ্যা।
কারেন্ট কি?
আমরা সবাই জানি, পরমাণুর ভিতরে ইলেকট্রন থাকে। আবার যে তারের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় সে তারের মধ্যেও ইলেকট্রন থাকে। সাধারণ অবস্থায়, তারের ভিতরের ইলেকট্রনগুলো এলোমেলো ভাবে ছড়ানো থাকে। কিন্তু যখন এই তারের সাথে কোন সোর্স বা ব্যাটারি যুক্ত করা হয় তখন সোর্স বা ব্যাটারি অনেকটা পাম্পের মতো কাজ করে এবং এলোমেলো ইলেকট্রন গুলোকে ধাক্কা দিতে থাকে। তখন এই ইলেকট্রন গুলো একদিকে গতি প্রাপ্ত হয় এবং তখনই তারের ভিতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহ শুরু হয়ে যায়।
এবার আসুন একটি উদাহরণের মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করি –
মনে করি, কোন পানির পাইপের সাথে একটি পাম্প লাগানো আছে। পাইপের ভিতরে পানি আছে কিন্তু পানির কণাগুলো স্থির অবস্থায় রয়েছে এবং পাইপের ভিতরের পানি কোথাও প্রবাহিত হচ্ছেনা। কিন্তু যখনই পাম্প চালু করা হলো তখনই পাইপের ভিতর দিয়ে পানির প্রবাহ শুরু হয়ে গেলো। এক্ষেত্রে পাম্প চাপ প্রয়োগ করে পানির কণাকে একটি নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহিত করছে।
এখানে,
পাইপ হচ্ছে পরিবাহী বা তার, পানির কণা হচ্ছে ইলেকট্রন এবং পাম্প হচ্ছে ব্যাটারি।
উপরের আলোচনা হতে আমরা বলতে পারি, ইলেকট্রনের প্রবাহই হচ্ছে কারেন্ট।
ইলেকট্রিক্যাল বা ইলেকট্রনিক্সের ভাষায় “নির্দিষ্ট সময়ে কোন পরিবাহীর মধ্য দিয়ে যে পরিমাণ ইলেকট্রন বা চার্জ প্রবাহিত হয় তাকে কারেন্ট বলে”।
অর্থাৎ,
কারেন্ট = ইলেকট্রন প্রবাহের হার / সময়ের পার্থক্য।
প্রতীক ও এককঃ
কারেন্টের প্রতীক হলোঃ ইংরেজী বড় অক্ষরের “I” এবং একক হচ্ছে এম্পিয়ার (Ampere)
সংক্ষেপে A দিয়ে প্রকাশ করা হয়।
কোন পরিবাহী বা তারের মধ্য দিয়ে এক সেকেন্ডে এক কুলম্ব চার্জ প্রবাহিত হলে তাকে এক এম্পিয়ার বলে।
কুলম্ব হচ্ছে চার্জের একক। কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ চার্জের সমষ্টিকে এক কুলম্ব বলা হয়।
যেভাবে কারেন্ট মাপতে হয়ঃ
Ampere meter বা Ammeter দিয়ে কারেন্ট পরিমাপ করা হয়। পরিমাপের সময় এমিটার সিরিজ কানেকশনে কানেক্ট করতে হয় । নিচের লিংকে ক্লিক করে চিত্রসহ দেখে নিনঃ
কারেন্ট কোন দিকে প্রবাহিত হয়ঃ
ধরা যাক, কোন তারের দুইটি প্রান্ত আছে। এবং প্রান্ত দুইটি হচ্ছে P প্রান্ত ও N প্রান্ত। P প্রান্ত হচ্ছে পজেটিভ প্রান্ত এবং N প্রান্ত হচ্ছে নেগেটিভ প্রান্ত। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কারেন্ট কোন দিকে প্রবাহিত হবে? পজিটিভ থেকে নেগেটিভ এর দিকে নাকি নেগেটিভ থেকে পজিটিভ এর দিকে। আমরা এখন এ বিষয়টি জানবো-
যখন বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন প্রথম কারেন্ট সম্পর্কে জানলেন, তখন তিনি মনে করছিলেন কারেন্ট পজিটিভ থেকে নেগেটিভের দিকে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেলো কারেন্ট নেগেটিভ থেকে পজিটিভ এর দিকে যায়। আরো গবেষণার ফলে জানা গেলো, কারেন্ট পজিটিভ থেকে নেগেটিভ এর দিকে যাক বা নেগেটিভ থেকে পজিটিভ এর দিকে যাক না কেন, এতে হিসেবের কোন পরিবর্তন হয় না। তাই ইতিহাসের প্রতি সম্মান জানিয়ে বলা হলো কারেন্ট পজিটিভ থেকে নেগেটিভ এর দিকে যায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কারেন্ট নেগেটিভ থেকে পজিটিভ এর দিকে যায়। আগেই বলা হয়েছে, কারেন্ট যেদিকে যাক না কেনো এর হিসেবের কোন পরিবর্তন হয় না। তাই আমরা হিসেবের সময় যেকোনো একটি দিক ধরে হিসেব করতে পারি।
কারেন্টের প্রকারভেদঃ
কারেন্ট কে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায় যথা-
- এসি বা অল্টারনেটিং কারেন্ট (AC বা Alternating Current)।
- ডিসি বা ডাইরেক্ট কারেন্ট (DC বা Direct Current)।
এসি ও ডিসি কারেন্ট সম্পর্কে বিস্তারিত পড়তে নিচে ক্লিক করুনঃ
উপরোক্ত দুই প্রকার ছাড়াও কারেন্টকে এডি কারেন্ট (Eddy Current) হিসেবে আলাদা ভাগে ভাগ করা হয়।
এডি কারেন্ট বলতে কি বুঝায় ?
মুলত তামার তার দিয়ে তৈরী কয়েল হতে এডি কারেন্ট উৎপন্ন হয়। যেমনঃ মোটর, ট্রান্সফরর্মার ইত্যাদি। কোন কয়েলের ভিতর দিয়ে যখন এসি কারেন্ট চলাচল করে, তখন এডি কারেন্ট কয়েলের ভিতরে এবং কয়েলের চারপাশে ম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি করে। এই ম্যাগনেটিক ফিল্ড তারের চারিদিকে ফিতার মত জড়িয়ে থাকে।
পরবর্তীতে এই ফিতার মতো অসংখ্য ম্যাগনেটিক ফিল্ড গুলো একত্রিত হয়ে বড় একটি লুপের সৃষ্টি করে। যদি কোন কারণে এই লুপের কোন একটির কারেন্ট বেড়ে যায়, তাহলে এই কারেন্ট আশেপাশের সমস্ত লুপের ম্যাগনেটিক ফিল্ডকে বাড়িয়ে দেয়। এডি কারেন্টকে লস (Loss) ধরা হয়। কারণ এ কারেন্ট আমাদের কোন কাজে আসে না ।
আরো জানতে ভিজিট করুনঃ