এডি কারেন্ট লস | Eddy Current Loss

কোন পরিবাহী চৌম্বক পদার্থের মধ্যে অল্টারনেটিং ম্যাগনেটিক ফ্লাক্স দেয়া হলে ওই চৌম্বক পদার্থের সকল সম্ভাব্য পথে তড়িচ্চালক বল আবিষ্ট হয়। এই আবিষ্ট তড়িচ্চালক বলের প্রভাবে পরিবাহী পদার্থের মধ্যে তড়িৎ প্রবাহের সূচনা ঘটে। এই তড়িৎ প্রবাহকে এডি কারেন্ট বলে। এডি কারেন্টের মান বর্তনীর তড়িচ্চালক বল এবং রেজিস্ট্যান্সের মানের উপর নির্ভর করে।    

এডি কারেন্ট উৎপন্ন হওয়ার পদ্ধতিঃ

কোন পরিবাহীর বদ্ধ বর্তনীতে ম্যাগনেটিক ফ্লাক্সের পরিবর্তনের জন্যই মূলত এডি কারেন্ট উৎপন্ন হয়। আমরা ইতোমধ্যেই জেনেছি যে, ট্রান্সফর্মারের প্রাইমারিতে এসি ভোল্টেজ সাপ্লাই দেয়া হলে অল্টারনেটিং ম্যাগনেটিক ফ্লাক্স উৎপন্ন হয়।

ফ্যারাডের প্রথম সূত্রানুযায়ী অল্টারনেটিং ম্যাগনেটিক ফ্লাক্সের প্রভাবে ট্রান্সফর্মারের কোরে একটি তড়িচ্চালক শক্তি আবিষ্ট হয়। ট্রান্সফর্মারের কোর পরিবাহী পদার্থ হওয়ায় এই আবিষ্ট তড়িচ্চালক বলের প্রভাবে ট্রান্সফর্মারের কোরে একটি তড়িৎ প্রবাহ(এডি কারেন্ট) শুরু হবে। এই তড়িৎ প্রবাহ ট্রান্সফর্মারের আউটপুট কোন ভূমিকা রাখে না বরং তাপ হিসেবে নির্গত হয়। এই তড়িৎ প্রবাহের ফলে যে লস হয় তাকেই ট্রান্সফর্মারের এডি কারেন্ট লস বলে।  

এডি কারেন্টের প্রভাবঃ

  • এডি কারেন্ট I2R লস উৎপন্ন করে।
  • ট্রান্সফর্মারের কোরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে।
  • পরিবাহী পদার্থে স্কিন ইফেক্ট সৃষ্টি করে।

এডি কারেন্ট লসের মানঃ

এডি কারেন্ট লসের সমীকরন নিন্মরুপঃ

Pe=KeBm2t2f2V watts

এক্ষেত্রে,

Pe = এডি কারেন্ট লস  

Ke = এডি কারেন্ট ধ্রুবক

Bm = ফ্লাক্স ডেনসিটির সর্বোচ্চ মান

t = ল্যামিনেশনের বেধ(থিকনেস)

f = চৌম্বক ফ্লাক্সের ফ্রিকোয়েন্সি

V = চৌম্বক পদার্থের আয়তন  

যেহেতু ট্রান্সফর্মার কনস্ট্যান্ট ফ্রিকোয়েন্সি এবং কনস্ট্যান্ট ভোল্টেজ সাপ্লাই এর সাথে যুক্ত থাকে সুতরাং f এবং Bm ধ্রুবক। সমীকরন থেকে দেখা যায়, এডি কারেন্টের মান লোড কারেন্টের মানের উপর নির্ভর করে না। তাহলে বলা যায় এডি কারেন্ট লস সকল লোডের ক্ষেত্রে সমান থাকে।  

এডি কারেন্ট লস কমানোর উপায়ঃ

ট্রান্সফর্মারের কোরের এডি কারেন্ট লস মূলত দুইটি উপায়ে কমানো যায়ঃ

  • কোরের রেজিস্ট্যান্স বাড়ানো।
  • কোর এমন চৌম্বক পদার্থ দ্বারা গঠন করা যায় যার রেজিস্টিভিটি বেশি।

কোরের রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধিঃ

এডি কারেন্ট কমানোর জন্য ট্রান্সফর্মারের কোর অনেকগুলো পাতলা পাতলা শিটে নিয়ে গঠিত হয়। এই পাতলা শিট গুলোকে ল্যামিনেশন বলে। বার্নিশ অথবা অক্সাইড ফিল্মের সাহায্যে প্রতিটা ল্যামিনেশনকে একে অপর থেকে অন্তরিত(ইনসুলেট) করা হয়। ল্যামিনেশনকে ইনসুলেট করায় প্রতিটি পরিবাহক অংশের ক্ষেত্রফল কমে যায় এবং তড়িৎ প্রবাহের পথের মোট দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পায়। ফলে আবিষ্ট তড়িচ্চালক বল ও কমে। আমরা জানি কোন পরিবাহকের(এক্ষেত্রে কোর) রেজিস্ট্যান্সকে গানিতিক ভাবে নিন্মরুপে প্রকাশ করা যায়।      

R= ρ * L / A

যেখানে,  

ρ = স্পেসিফিক রেজিস্ট্যান্স

R = পরিবাহকের রেজিস্ট্যান্স

L = পরিবাহকের দৈর্ঘ্য 

A = পরিবাহকের ক্ষেত্রফল

সুতরাং পরিবাহী পথের ক্ষেত্রফল কমায় রেজিস্ট্যান্স বাড়ে। আর এই বাড়তি রেজিস্ট্যান্সের দরুন এডি কারেন্টের মান কমে যায়।  

এছাড়া কোর এমন চৌম্বক পদার্থ দ্বারা গঠন করা যায় যার রেজিস্টিভিটি বেশি। যেমনঃ ৩% সিলিকন এবং স্টীলের সংকর ধাতুর রেজিস্টিভিটি স্টীলের তুলনায় অনেক বেশি হওয়ায় এই সংকর ধাতু দিয়ে অনেকসময় ট্রান্সফর্মার কোর গঠন করা হয়। এক্ষেত্রে এডি কারেন্ট লসের মান তুলনামূলক কম।