বৈদ্যুতিক পাওয়ার উৎপাদন ব্যবস্থা | Electric Power Generation

বৈদ্যুতিক পাওয়ার উৎপাদন – বিদুৎ উৎপাদন ব্যবস্থাকে সাধারনত তিন ভাগে বিভক্ত করা হয় – বিদ্যুৎ উৎপাদন, ট্রান্সমিশন ও বিতরণ। এখানে আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করবো। সাধারনত বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তিকে রুপান্তরের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক শক্তিতে পরিনত করা হয়।

এই প্রাকৃতিক শক্তির উৎস গুলিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় –

  1. অ-নবায়নযোগ্য উৎস
  2. এবং নবায়নযোগ্য উৎস

বর্তমানে বেশিরভাগ বৈদ্যুতিক শক্তি কয়লা, তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের মতো অ-নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উত্পাদন করা হয়। কিন্তু এই উৎস গুলো  সীমিত তাই আমাদের বিদুৎ উত্পাদনের বিকল্প উৎস খুঁজতে হবে। বিকল্প উৎস গুলি হলো সৌরশক্তি, বায়ু, পানি, জোয়ার ইত্যাদি। এই উত্সগুলো পরিবেশ বান্ধব ও বিনামূল্যে পাওয়া যায়।

নিচে বিভিন্ন প্রকার শক্তি ব্যবহার করে বৈদ্যুতিক পাওয়ার উৎপাদন পদ্ধতি আলোচনা করা হলো-

সৌর শক্তি

এটি বিকল্প শক্তির একটি অন্যতম উৎস। সূর্যালোক থেকে বৈদ্যুতিক শক্তি উৎপন্ন করার দুটি উপায় রয়েছে –

  1. আমরা ফোটোভোলটাইক (pv) সেল ব্যবহার করে সরাসরি বিদ্যুৎ তৈরি করতে পারি। ফোটোভোলটাইক সেল সিলিকন দ্বারা গঠিত । বহু সংখ্যক ফোটোভোলটাইক সেল নিয়ে একটি সৌর প্যানেল গঠিত হয়।
  2. আমরা সূর্যের আলোকে  আয়নার  সাহায্যে তাপ শক্তিতে রূপান্তর করতে পারি এবং এই তাপকে বাষ্পে রূপান্তর করে ওই বাষ্প দিয়ে টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উত্পাদন করতে পারি।
সৌর সিস্টেমের সুবিধা
  • ট্রান্সমিশন খরচ প্রায় শূন্য।
  • সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা পরিবেশ বান্ধব।
  • রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম।
সৌর শক্তি সিস্টেমের অসুবিধা
  • প্রাথমিক খরচ বেশি।
  • এর জন্য বড় এলাকার প্রয়োজন।
  • সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা আবহাওয়ার উপর নির্ভরশীল।
  • সৌর শক্তি স্টোরেজ (ব্যাটারি) ব্যয়বহুল।

বায়ু শক্তি

বায়ুমন্ডলে তাপমাত্রার পরিবর্তনের কারণে বায়ু প্রবাহিত হয়। টারবাইন এর মাধমে এ বায়ু প্রবাহের শক্তিকে  কাজে লাগিয়ে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তর করা যায়। বায়ু তার গতি দ্বারা টারবাইনকে গতিশীল করে, এ টারবাইন একটি জেনারেটর এর সাথে সংযুক্ত থাকে, টারবাইন এ ঘূর্ণন এর সৃষ্টি হলে এর সাথে সংযুক্ত জেনারেটর ঘুরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে।

বায়ু শক্তি সিস্টেমের সুবিধা
  • এটি একটি বিনামূল্যের শক্তির উৎস।
  • অপারেটিং খরচ প্রায় শূন্য।
বায়ু শক্তি সিস্টেমের অসুবিধা
  • এটি সব সময় একই পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে না।
  • এর জন্য বড় খোলা এলাকা প্রয়োজন।
  • একটি বায়ু টারবাইন নির্মাণ প্রক্রিয়া ব্যয়বহুল।
  • এটি কম বিদ্যুৎ আউটপুট দেয়।

হাইড্রো পাওয়ার সিস্টেম

নদী বা মহাসাগরের পানির থেকে প্রাপ্ত শক্তিকে হাইড্রো পাওয়ার বলা হয়। হাইড্রো পাওয়ার প্লান্টগুলি মহাকর্ষীয় প্রভাবের উপর ভিত্তি করে কাজ করে। এ প্রক্রিয়ায় একটি বাঁধ বা জলাধারের মধ্যে জল সংরক্ষণ করা হয়। ওই বাঁধ কে খুলে দিলে পানি তীব্র বেগে নিচের দিকে ধাবিত হয়, এই পানিকে পেনস্টকের বা সরু পাইপ এর ভিতর দিয়ে প্রবাহিত করে টারবাইন গুলিকে গতিশীল করা হয় আর এই টারবাইন এর ঘূর্ণনের ফলে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়।

হাইড্রো শক্তি সিস্টেমের সুবিধা:
  • এটি উৎপাদন ব্যবস্থায় খরচ অনেক কম।
  • এই প্রক্রিয়ার শেষে পানি সেচ এবং অন্যান্য উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম।
  • কোন জ্বালানী পরিবহনের প্রয়োজন হয় না।
হাইড্রো শক্তি সিস্টেমের অসুবিধা
  • এ পাওয়ার প্ল্যান্ট এর প্রাথমিক খরচ বেশি।
  • হাইড্রো পাওয়ার প্লান্ট পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত হয় এবং এটি লোড থেকে অনেক দূরে থাকে। সুতরাং, দীর্ঘ ট্রান্সমিশন লাইন প্রয়োজন।
  • এটি আবহাওয়ার উপর নির্ভরশীল।

কয়লা পাওয়ার সিস্টেম

কয়লার দহনের মাধ্যমে তাপ সৃষ্টি করে এ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। এই তাপ দ্বারা পানিকে উত্তপ্ত করে বাষ্পে পরিনত করা হয়। এই উচ্চ চাপ এবং উচ্চ তাপমাত্রার বাষ্প টারবাইনের মধ্যে প্রবাহিত হয়ে টারবাইনকে ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। এটি টারবাইনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর বাষ্পটি একটি কনডেন্সারে ঠান্ডা হয়ে যায় ও আবার বাষ্প তৈরির জন্য বয়লারে পুনরায় প্রেরণ করা হয়।

কয়লা শক্তি সিস্টেমের সুবিধা
  • কয়লা সস্তা।
  • এটির প্রাথমিক খরচ কম।
  • কম জায়গা প্রয়োজন।
কয়লা শক্তি সিস্টেমের অসুবিধা
  • কয়লা একটি অ-নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস।
  • জ্বালানি মূল্য উচ্চ।
  • এর ধোঁয়া বায়ু দূষিত করে।
  • এতে প্রচুর পরিমাণে পানি প্রয়োজন।

পারমাণবিক শক্তি সিস্টেম

পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র এবং একটি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ব্যবস্থা প্রায় একই। একটি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে তাপ উৎপাদনের জন্য বয়লারের মধ্যে কয়লা ব্যবহার করা হয় এবং একটি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে  তাপ উৎপন্ন করার জন্য পরমাণু চুল্লীতে ইউরেনিয়াম ব্যবহার করা হয়। উভয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে, তাপ শক্তি বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।

১ কেজি ইউরেনিয়াম ৪৫০০ টন কয়লা বা ২০০০ টন তেল জ্বালিয়ে উৎপাদিত শক্তির মতো শক্তি উৎপাদন করতে পারে।

পারমাণবিক শক্তি সিস্টেমের সুবিধা
  • এতে একটি তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র এবং একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের চেয়ে কম স্থান প্রয়োজন।
  • এটি CO2 নির্গত করে  না।
  • কম জায়গার প্রয়োজন।
পারমাণবিক শক্তি সিস্টেমের অসুবিধা
  • এটির  প্রাথমিক নির্মাণ খরচ বেশি।
  • এটির  অপারেটিং এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বেশি।
  • এতে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য আছে।
  • এতে বিস্ফোরণের একটি ঝুঁকি আছে।