গুগল ম্যাপ বর্তমানে আমাদের জন্য এক ভার্চুয়াল ট্রাভেল গাইডের মত কাজ করে। আপনি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ভ্রমণ করবেন। কিন্তু রোড ম্যাপ আপনার জানা নেই। সেই ক্ষেত্রে গুগল ম্যাপ যেন এক আর্শীবাদের মত হাজির হয় আমাদের জন্য। শুধুমাত্র রোড ম্যাপ ই নয়, রাস্তায় কোন পয়েন্টে জ্যাম আছে নাকি ফ্রি সেটাও গুগল ম্যাপ নির্দেশ করতে পারে। আচ্ছা, এগুলো ত সবাই জানে। কিন্তু যেটা অনেকেই জানেনা সেটা হল যে, কিভাবে গুগল আমাদের রোড-ঘাটের অবস্থান সম্পর্কে অবগত হল? কিভাবে এই গুগল ম্যাপ কাজ করে? সেই সাথে আরো অনেক অজানা প্রশ্নের উত্তর আমরা আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানতে চলেছি৷ চলুন শুরু করা যাক।
গুগল ম্যাপ কিভাবে কাজ করে?
বর্তমান যুগ ডিজিটাল যুগ। আর এই ডিজিটাল যুগে এমন ব্যক্তি খুজে পাওয়া দুষ্কর যার হাতে এন্ড্রোয়েড সেট নেই। এন্ড্রোয়োড মোবাইল ম্যানুফেকচারার বেশিরভাগ কোম্পানিগুলোই গুগলের ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে থাকে। আর আপনার ফোনে রয়েছে জিপিএস (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম) সেন্সর। যেটা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আপনার লোকেশান ট্র্যাক করে গুগল সার্ভারে সহজেই পৌছে দিতে পারে। ধরুন, কোন একটা এরিয়া থেকে আপনি রওনা হবেন। গুগল ম্যাপ আসার পূর্বে অনেক ম্যাপ সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট ছিল যেখানে বার বার রিফ্রেশ করে আপনার কাংখিত জায়গাটি সম্পর্কে কিছু তথ্য নেয়া যেত। কিন্তু আপনার বর্তমান অবস্থান থেকে গন্তব্য পর্যন্ত কোন ক্লিয়ার রুট পাওয়া যেত না। কিন্তু গুগল ম্যাপ আসার ফলেই সেটি সম্ভব হয়েছে। এখন কোটি টাকার প্রশ্ন হল গুগল কি করে এত ডিটেইলে বিভিন্ন রুট সম্পর্কে অবগত। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন এলাকার ডাটা সংগ্রহের জন্য গুগল মহাশয়ের কিছু পদ্ধতি রয়েছে। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে এই চার পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। সেগুলো হলঃ
- স্থানীয় সরকার থেকে তথ্য নিয়ে
- স্যাটেলাইট ক্যামেরার সাহায্যে
- হেলিকাপ্টারের সাহায্যে থ্রি-ডি ভিউ নিয়ে
- ৩৬০° ক্যামেরা সংযুক্ত গাড়ির মাধ্যমে
স্থানীয় সরকার থেকে তথ্য নিয়ে
যেসমস্ত এলাকা স্থানীয় সরকার বা কর্পোরেশনের ডাটাবেজভুক্ত সেসব এলাকার নকশাচিত্র গুগল সহজেই পেতে পারে।
স্যাটেলাইট ক্যামেরার সাহায্যে
কিন্তু কিছু দুর্গম এলাকা রয়েছে যেমন পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত এলাকা যেগুলোর তথ্য স্থানীয় সরকার হয়ত দিতে পারেনা। সেক্ষেত্রে গুগল স্যাটেলাইট ক্যামেরার মাধ্যমে ডাটা সংগ্রহ করে থাকে।
হেলিকাপ্টারের সাহায্যে থ্রি-ডি ভিউ নিয়ে
আবার মনে করুন, কোন একটি এলাকায় সাত তলা বিল্ডিং আছে। এখন স্যাটেলাইট ক্যামেরার মাধ্যমে এই ভিউটা ভাল হবেনা। সেজন্য হেলিকপ্টারের মাধ্যমে থ্রি-ডি ভিউ নিয়ে এই তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
৩৬০° ক্যামেরা সংযুক্ত গাড়ির মাধ্যমে
তাছাড়া নীচু জায়গা যেমন একতলা, দুইতলা ভবন, দোকানপাট, স্টোর সংক্রান্ত তথ্য নেয়ার জন্য গুগলের ৩৬০° ক্যামেরাযুক্ত গাড়ি রয়েছে। গাড়িটি ঘুরে ঘুরে এই এলাকাগুলো স্ক্যানিং করে থাকে।
ডাটা সোর্সিং এবং ক্রাউড সোর্সিং
বাহ! কি চমৎকার পদ্ধতি সব গুগলের তাইনা? আর প্রত্যেক ব্যক্তি চাইলে যেকোন রুটের ছবি, তথ্য গুগল ম্যাপে আপ্লোড করে গুগলের তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করতে পারেন। যেটাকে বলে ডাটা সোর্সিং মেথড। তাছাড়া গুগল এখন ক্রাউড সোর্সিং এর মাধ্যমে সহজেই রাস্তার জ্যামের খবরও বলে দিতে পারছে অতি সহজেই। যে এলাকায় ট্রাফিক বেশি সেই এলাকার তথ্যচিত্র স্থানীয়দের থেকে সংগ্রহ করার নামই হল ক্রাউড সোর্সিং।
গুগল কত সহজই না করে দিল আমাদের জীবনযাত্রা। স্যাটেলাইট এবং জি পি এস প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে গুগল ম্যাপের মত এত সুন্দর একটি উপহার সত্যিই অনেক প্রশংসনীয়। আর্টিকেলটি লিখতে লিখতে আমার একটি জায়গায় ইনভাইটেশনে যাবার কথা মনে পড়ে গেল৷ কিন্তু জায়গাটির নাম শুনলেও রুট ত চিনা নেই। আরে সমস্যা কি? গুগল ম্যাপ আছেনা?
আরো কিছু মজার আর্টিকেল
ফেসবুকে ফেইক আইডিধারী অপরাধীকে পুলিশ কিভাবে ট্রেস করে?
মোবাইল টাওয়ার বাড়ির ছাদে বসানো থাকে কেন? | Base Transceiver Station
পুলিশ কিভাবে মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে অপরাধীকে ধরে?