লস কি?
আমরা মোটরে ইনপুট হিসেবে ইলেকট্রিক্যাল এনার্জি দেই এবং আউটপুট হিসেবে মেকানিক্যাল এনার্জি পাই। কিন্তু আমরা যে পরিমাণ এনার্জি ইনপুট দেই পুরোটাই আউটপুটে পাই না। অর্থাৎ কিছু পরিমাণ শক্তি বা এনার্জি মোটরের ভিতরে অপচয় হয়। আর একেই ইন্ডাকশন মোটরের লস বলা হয়। ইন্ডাকশন মোটরে ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার দেওয়া থেকে শুরু করে মেকানিক্যাল আউটপুট পাওয়া পর্যন্ত যত লস হয়ে থাকে তা নিচের চিত্রের মাধ্যমে দেখানো হল।
লস কত প্রকার?
উপরের চিত্র অনুসারে আমরা ৪ ধরণের লস দেখতে পাই। যথাঃ
১। স্ট্যাটর কপার লস
২। স্ট্যাটর আয়রণ লস / কোর লস
৩। রোটর কপার লস
৪। Friction & Windage লস
এছাড়াও আমরা ইন্ডাকশন মোটরের লসকে তাদের প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে আরো ২ ভাগে ভাগ করতে পারি। যথাঃ
১। কনস্টেন্ট বা অপরিবর্তনশীল লস
২। ভেরিয়েবল বা পরিবর্তনশীল লস
কনস্টেন্ট বা অপরিবর্তনশীল লস
যেসব লস লোডের উপর নির্ভর করে না অর্থাৎ মোটরের শ্যাফটের সাথে যে ধরণের লোডই লাগানো হোক না কেন এসব লস সর্বদা একই থাকবে। নো লোড টেস্টের মাধ্যমে মোটরের কনস্টেন্ট লস পরিমাপ করা যায়। কনস্টেন্ট লসকে আবার ২ ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ
১। স্ট্যাটর আয়রণ লস / কোর লস
২। Friction & Windage লস
কোর লস
এডি কারেন্ট লস এবং হিস্টেরেসিস লস এই ২ ধরণের লস নিয়েই আয়রন বা কোর লস গঠিত। ল্যামিনেটেড কোর ব্যবহার করে আমরা এডি কারেন্ট লসের পরিমাণ কমাতে পারি। ল্যামিনেটেড কোরের ফলে ক্ষেত্রফল কমে যায় এবং রেজিস্টেন্স বেড়ে যায়। তাই এডি কারেনটের পরিমাণও অনেক কমে যায়।
হিস্টেরেসিস লস কমানোর জন্য কম Permeability সম্পন্ন পদার্থ দিয়ে মোটরের কোর তৈরি করতে হবে। কোর লস অনেকটাই নির্ভর করে সাপ্লাই ভোল্টেজের ফ্রিকোয়েন্সির উপর। কারণ স্ট্যাটরেই সবসময় সাপ্লাই ভোল্টেজ দেওয়া হয়ে থাকে। মোটরের কোর লস বলতে আমরা স্ট্যাটরের কোর লসকেই বুঝি। কারণ রোটরের কোর লসের পরিমাণ এতই কম যে একে উপেক্ষা করা যায়। আর সাপ্লাই ফ্রিকোয়েন্সির যেহেতু তেমন কোন পরিবর্তন হয় না তাই এ লসের পরিমাণও নির্দিষ্ট থাকে। তাই একে কনস্টেন্ট বা অপরিবর্তনশীল লস বলা হয়।
Friction & Windage লস
মোটর বিয়ারিং এবং ব্রাশের কারণে এ ধরণের লস হয়ে থাকে। এসব লস মোটরের স্পিডের উপর নির্ভরশীল। স্পিড যত বাড়তে থাকবে মোটরের Friction & Windage লসও তত বৃদ্ধি পাবে। আর থ্রি ফেইজ ইন্ডাকশন মোটরের স্পিড সাধারণত পরিবর্তন করা হয় না, তাই এসব লসকেও কনস্টেন্ট বা অপরিবর্তনশীল লস বলা হয়।
ভেরিয়েবল বা পরিবর্তনশীল লস
স্ট্যাটর এবং রোটরের কপার লসই হচ্ছে ভেরিয়েবল লস। স্ট্যাটর এবং রোটরের তার কুন্ডলীতে কারেন্ট প্রবাহিত হওয়ার কারণে যে লস হয়ে থাকে তাকে কপার লস বলা হয়। লোডের পরিবর্তন হওয়ার সাথে সাথে কারেন্ট প্রবাহের মাত্রাও পরিবর্তিত হয়। এর ফলে লসের পরিমাণও কম – বেশি হয়ে থাকে। তাই কপার লসকে ভেরিয়েবল বা পরিবর্তনশীল লস বলা হয়। ব্লক রোটর টেস্ট করার মাধ্যমে একটি ইন্ডাকশন মোটরে কপার লস পরিমাপ করা যায়।
ধরি, স্ট্যাটর কারেন্ট = ISTA
স্ট্যাটর ভোল্টেজ = VSTA
রোটর কারেন্ট = IROT
আমরা মোটরে যে ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার সাপ্লাই দেই তা যদি PSUP হয়, প্রথমে স্ট্যাটর তার কুন্ডলীতে কারেন্ট প্রবেশ করে। এবং PSUP থেকে কিছু শক্তি স্ট্যাটর কপার লস, 3(ISTA)2R (থ্রি-ফেজ মোটর তাই ৩ দিয়ে গুণ করা হয়েছে) হিসেবে ব্যয় হয়।
তারপর কারেন্ট স্ট্যাটরের কোরে প্রবেশ করলে সেখানে স্ট্যাটর কোর লস, 3(VSTA)2/R সংঘটিত হয়। এর পর ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার মেকানিক্যাল পাওয়ারে পরিণত হয়। এ অবস্থায় যে শক্তি অবশিষ্ট থাকে তাকে এয়ার গ্যাপ পাওয়ার, PAG বলা হয়। তারপর কারেন্ট রোটরে প্রবেশ করে এবং রোটর তার কুন্ডলীতে রোটর কপার লস, 3(IROT)2R হিসেবে কিছু শক্তির অপচয় ঘটে। তারপর Friction & Windage লস হিসেবে আরও কিছু শক্তি ব্যয় হওয়ার পর আমরা আউটপুট পাওয়ার, POUT পেয়ে থাকি।
ইন্ডাকশন মোটরের কর্মদক্ষতা
সহজ কথায় আউটপুট পাওয়ার এবং ইনপুট পাওয়ারের অনুপাতকে কর্মদক্ষতা বলা হয়।
Efficiency = Output Power / Input Power
আমরা ইন্ডাকশন মোটরে যে পরিমাণ পাওয়ার তথা PSUP দিয়েছিলাম তার একটা বিশেষ অংশ বিভিন্ন ভাবে অপচয় হওয়ার পর আউটপুট পাওয়ার তথা POUT পাই। এখন POUT এবং PSUP এর অনুপাতকেই ইন্ডাকশন মোটরের কর্মদক্ষতা বলা হবে।
Efficiency = POUT / PSup ।
লোডের সাথে কর্মদক্ষতার সম্পর্ক নিম্নে দেওয়া হল।
ইন্ডাকশন মোটর সম্পর্কে অন্যান্য লেখা সমূহঃ
ইন্ডাকশন মোটরঃ প্রকারভেদ এবং গঠন
থ্রী ফেইজ ইন্ডাকশন মোটরের কার্যপদ্ধতি