টেস্ট কি
বর্তমান পৃথিবীতে শক্তির চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শক্তি উৎপাদনকারী যন্ত্রসমূহের সংখ্যা। আর এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে সকল যন্ত্রকে কিছু পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আসতে হয়। আর একেই বলা হয় টেস্ট।
ইন্ডাকশন মোটরের টেস্ট বলতে মূলত এর ইনপুট এবং আউটপুট পাওয়ার বের করা এবং মোটরের কর্মদক্ষতা নির্ণয় করাকে বোঝায়।
প্রকারভেদ
ইন্ডাকশন মোটরকে সাধারণত ২ টি উপায়ে টেস্ট করা যায়। যথাঃ
১। নো লোড টেস্ট
২। ব্লক রোটর টেস্ট
এছাড়া বাহ্যিক বিভিন্ন বিষয় যেমন- তাপমাত্রা, ভাইব্রেশন, নয়েজ, ইত্যাদি বিষয়ের উপর ভিত্তি করেও টেস্ট করা হয়
নো লোড টেস্ট
যে টেস্টের সময় রোটরে কোনরূপ লোড দেওয়া হয় না তথা রোটরকে সম্পূর্ণ মুক্ত ভাবে ঘুরতে দেওয়া হয় তাকে নো লোড টেস্ট বলে।
নো লোড টেস্টের সাহায্যে মোটরের রোটেশনাল লস বের করা যায় এবং এর ম্যাগনেটাইজিং কারেন্ট সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এই টেস্টের সময় মোটরে শুধুমাত্র যে লোডটি কাজ করে তা হল Friction & Windage Loss। এ সময় মোটরের স্লিপ সর্বনিম্ন থাকে, ০.০০১ অথবা তার চাইতেও কম।
নো লোড টেস্টের সার্কিট ডায়াগ্রাম এবং ইকুইভ্যালেন্ট সার্কিট নিচে দেওয়া হলঃ
এই টেস্টের সময় মোটরে খুব অল্প পরিমাণ পাওয়ার সাপ্লাই দিতে হয় এবং অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে কারেন্ট যেন মোটরের রেটেড কারেন্টের চাইতে বেশি না হয়।
অন্যথায় রোটর তার সীমারেখার বাইরে গিয়ে ঘুরতে থাকে এবং রোটর কয়েল পুড়ে যায়। যদি স্ট্যাটর কপার লস PSCL হয় তাহলে আমরা বলতে পারি,
PSCL = 3(I1)2R1
এখন ইনপুট পাওয়ার তথা Pin কে নিন্মোক্ত উপায়ে লিখতে পারি,
Pin = PSCL + PCore + PF&W + PMisc
Or, Pin = 3(I1)2R1 + PRot
PRot যদি রোটেশনাল লস হয় তাহলে,
PRot = PCore + PF&W + PMisc
এইভাবেই নো লোড টেস্টের সাহায্যে মোটরের রোটেশনাল লস বের করা যায়।
ব্লক রোটর টেস্ট
যে টেস্টের সময় রোটরকে ঘুরতে দেওয়া হয় না অর্থাৎ হাত বা অন্য কিছু দিয়ে রোটরকে ধরে রাখা হয় যাতে ঘুরতে না পারে, তাকে ব্লক রোটর টেস্ট বলা হয়।
এ টেস্টের সাহায্যে মোটরের সকল প্যারামিটার যেমন ভোল্টেজ, কারেন্ট, পাওয়ার ইত্যাদি মাপা যায়। এই টেস্ট অনেকটা ট্রান্সফর্মারের শর্ট সার্কিট টেস্টের মত।
ব্লক রোটর টেস্টের সময় মোটরে এসি ভোল্টেজ দেওয়া হয় এবং কারেন্টের মান এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় যেন মোটর ফুল লোডে থাকে। যখন মোটর ফুল লোডে পৌছায় তখন এর ভোল্টেজ, কারেন্ট এবং পাওয়ার পরিমাপ করা হয়। ব্লক রোটর টেস্টের ডায়াগ্রাম এবং ইকুইভ্যালেন্ট সার্কিট নিম্নে দেওয়া হল।
এই টেস্টের সময় যেহেতু রোটর ঘুরতে পারে না তাই মোটর এর স্লিপ সর্বোচ্চ থাকে, প্রায় ১ এর কাছাকাছি।
ব্লক রোটর টেস্টের সময় মোটরে পাওয়ার সাপ্লাই দেওয়ার পর ভোল্টেজ এমন ভাবে বাড়াতে হবে যেন কারেন্ট কোন ভাবেই এর রেটেড ভ্যালুর উপরে না যায়। আর যেহেতু রোটর লকড অবস্থায় আছে তাই অনেক কম ভোল্টেজেই কারেন্ট এর রেটেড ভ্যালুতে পৌছে যাবে। মোটর অত্যাধিক গরম হওয়ার পূর্বেই মোটরের কারেন্ট, ভোল্টেজ এবং পাওয়ার পরিমাপ করে নিতে হবে।
আমরা জানি মোটরের ইনপুট পাওয়ার, Pin.
Pin = VSC ISC cosθ
এখানে,
VSC = ব্লকড রোটর কন্ডিশনে মোটরের লাইন ভোল্টেজ
ISC = ব্লকড রোটর কন্ডিশনে মোটরের লাইন কারেন্ট
cosθ = ব্লকড রোটর কন্ডিশনে মোটরের পাওয়ার ফ্যাক্টর
স্ট্যাটরকে নির্দেশ করে মোটরের ইকুইভ্যালেন্ট রেজিস্টেন্স যদি R হয় তাহলে,
R = Pin / (ISC)2
আবার স্ট্যাটরকে নির্দেশ করে মোটরের ইকুইভ্যালেন্ট ইম্পিডেন্স যদি Z হয় তাহলে,
Z = VSC / ISC
সুতরাং ইকুইভ্যালেন্ট রিয়েক্টেন্স হবে,
X = (Z2 – R2)
এভাবে আমারা ব্লকড রোটর টেস্টের মাধ্যমে মোটরের ইকুইভ্যালেন্ট রেজিস্টেন্স, ইম্পিডেন্স এবং রিয়েক্টেন্স পরিমাপ করতে পারি।
ইন্ডাকশন মোটর সম্পর্কে অন্যান্য লেখা সমূহঃ
ইন্ডাকশন মোটরঃ প্রকারভেদ এবং গঠন
থ্রী ফেইজ ইন্ডাকশন মোটরের কার্যপদ্ধতি