মসফেট সম্বন্ধে সহজ ভাষায় আলোচনা | MOSFET Bangla

আপনি কি কখনো কারেন্ট কন্ট্রোল করার কথা চিন্তা করেছেন? কেউ কেউ হয়তো চিন্তা করতেছেন, কারেন্ট কি কন্টোল করা যায় নাকি!! হ্যা, অবশ্যই কারেন্ট কন্ট্রোল করা যায়। আজকে আমরা এমন একটা ডিভাইস নিয়ে আলোচনা করব, যে নিজেই কারেন্ট কন্ট্রোল করতে পারে। এমনই একটি ডিভাইজের নাম হল “MOSFET”।

তাহলে চলুন জেনে নেই MOSFET সম্পর্কে কিছু জানা-অজানা তথ্য। MOSFET এর পূর্নরুপ হল Metal Oxide Semiconductor Field Effect Transistor। এটি এমন একটি ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস, যে নিজেই ইলেক্ট্রন প্রবাহকে নিয়ন্ত্রন করতে পারে। এজন্য একে Active Device ও বলা হয়ে থাকে।

তাহলে চলুন, ডিভাইস সম্পর্কে একটু জেনে নেই। Device কে সাধারনত দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

যথা: ১) একটিভ ডিভাইস ২) প্যাসিভ ডিভাইস

১) একটিভ ডিভাইসঃ যে সকল ডিভাইস নিজে ইলেক্ট্রন প্রবাহ তথা কারেন্ট প্রবাহকে নিয়ন্ত্রন করতে পারে তারে একটিভ ডিভাইস বলে। যেমন: BJT, JFET, MOSFET ইত্যাদি।

২) প্যাসিভ ডিভাইসঃ যে ডিভাইস নিজে ইলেকট্রন প্রবাহকে তথা কারেন্ট প্রবাহকে নিয়ন্ত্রন করতে পারে না তাকে প্যাসিভ ডিভাইস বলে। যেমন: ডায়োড, ক্যাপাসিটর, ট্রান্সফরমার ইত্যাদি।

MOSFET কে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা: ১) ডিপ্লেশন টাইপ মসফেট। ২) এনহেন্সমেন্ট টাইপ মসফসট।

ডিপ্লেশন টাইপ মসফেট ও এনহেন্সমেন্ট টাইপ মসফেট প্রায় এক শুধু একটা মেজর পার্থক্য ছাড়া। ডিপ্লেশন টাইপ মসফেট এ ইনিশিয়ালি ড্রেইন ও সোর্সের মধ্যে চ্যানেল থাকে। কিন্তু এনহেন্সমেন্ট টাইপ মসফেটে এর ক্ষেত্রে ইনিশিয়ালি ড্রেইন ও সোর্সের মধ্যে কোন চ্যানেল থাকে না। চ্যানেল তৈরি করে নিতে হয়।

এই দুই ধরনের মসফেটের ক্ষেত্রে আমরা এনহেন্সমেন্ট টাইপ মসফেট টা বেশি ব্যবহার করে থাকি। এজন্য, নিচে এনহেন্সমেন্ট টাইপ মসফেট নিয়ে আলোচনা করা হল।

এনহেন্সমেন্ট টাইপ মসফেট কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ১) n-চ্যানেল এনহেন্সমেন্ট টাইপ মসফেট। ২) p-চ্যানেল এনহেন্সমেন্ট টাইপ মসফেট।

চলুন দেখে নেয়া যাক, কিভাবে n-চ্যানেল এনহেন্সমেন্ট টাইপ মসফেট তৈরি করা হয়। মসফেটে সাধারনত তিনটি সংযোগ প্রান্ত থাকে।

এগুলো হলঃ

  1. সোর্স বা উৎস
  2. ড্রেইন বা নিঃসরক
  3. এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গেইট বা নিয়ন্ত্রক।

প্রথমে একটি অর্ধপরিবাহী (সেমিকন্ডাক্টর) নেয়া হয়। তারপর সেমিকন্ডাক্টরে সুনির্ধারিত উপায়ে হোল ডোপিং করে p-টাইপ সেমিকন্ডাক্টর এ পরিনত করা হয়। একে সাবস্ট্রেট বা বডি বলা হয়। তারপর বডির উপরের দিকে দুই পাশে ইলেকট্রন ডোপিং করে দুটি n-টাইপ ওয়াল তৈরি করা হয় (চিত্রে লক্ষ করুন)।

mosfet

প্রথম n- টাইপ ওয়াল টি কে বলা হয় সোর্স বা উৎস এবং ২য় n-টাইপ ওয়াল টি কে বলা হয় ড্রেইন। তারপর ড্রেইন বা সোর্সের মাঝে পাতলা ধাতুর প্রলেপ দেওয়া হয়। সোর্স ও ড্রেইনের মাঝের অংশটি কে বলা হয় গেইট বা নিয়ন্ত্রক।

গেইটের উপরে থাকে পাতলা অক্সাইড (সাধারণত সিলিকন ডাই অক্সাইড) এর স্তর এবং অক্সাইড এর উপর আবার ধাতুর স্তর দেয়া হয়। প্রত্যেকটি থেকে একটি করে টার্মিনাল বের করে মোট চারটি টার্মিনাল বের করা হয়।

বাস্তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সোর্স এবং ড্রেইন টার্মিনাল শর্ট করা থাকে। এজন্য বলা হয়ে থাকে যে, মসফেট এ প্রাধানত তিনটি টার্মিনাল থাকে।

MOSFET কিভাবে কাজ করে?

N Type এর ক্ষেত্রেঃ প্রথমে ভোল্টেজ সোর্সের পজেটিভ প্রান্ত গেইট টার্মিনালে সংযুক্ত করা হয় এবং নেগেটিভ প্রান্ত বডি/সোর্স টার্মিনাল সংযুক্ত করা হয়।

কারন ব্যাটারির পজিটিভ প্রান্ত গেইটের হোল গুলোকে ধাক্কা দিয়ে নিচের দিকে নিয়ে যায় এবং ইলেক্ট্রনগুলো কে উপরের দিকে টেনে নিয়ে আসে। যার ফলে ড্রেইন ও সোর্সের মধ্যে ইলেক্ট্রনের একটি পথ বা চ্যানেল সৃস্টি হয়।

mosfet

গেইট টার্মিনালে যদি বেশি ভোল্টেজ দেয়া হয় তাহলে বেশি ইলেক্ট্রন জমা হবে এবং চ্যানেল প্রশস্থ হবে। যদি গেইট টার্মিনালে কম ভোল্টেজ দেয়া হয় তাহলে কম ইলেক্ট্রন জমা হবে তথা চ্যালেনের প্রস্থ কম হবে।

এখন ড্রেইন ও সোর্স টার্মিনালে একটি ভোল্টেজ সোর্স সংযুক্ত করা হয়। যার ফলে সোর্স এবং ড্রেইনের মধ্যে কারেন্ট প্রবাহিত হতে থাকে।

ফিনিশিং পয়েন্ট যদি গেইট টার্মিনালে পজিটিভ ভোল্টেজ এপ্লাই না করা হত তাহলে ড্রেইন এবং সোর্সের মধ্যে কোন ইলেক্ট্রন থাকত না। যার ফলে কোন কারেন্ট প্রবাহিত হত না। যদি ড্রেইন এবং সোর্স এর মাঝে বেশি ইলেক্ট্রন থাকে তাহলে বেশি ইলেক্টন প্রবাহিত হবে তথা বেশি কারেন্ট প্রবাহিত হবে।

গেইটের ভোল্টেজ কমানো / বাড়ানোর ফলে চ্যানেলে কম/ বেশি ইলেক্ট্রন জমা হচ্ছে তথা কারেন্ট কম বা বেশি প্রবাহিত হচ্ছে।

ট্রানজিস্টর সম্বন্ধে বিস্তারিত পড়ুন

(ড্রেইন এবং সোর্সের ভোল্টেজ সোর্স এর কথা কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না) মসফেট নিয়ে যদি আরো কিছু জানতে চান তাহলে কমেন্টে টাইপ করে জানিয়ে দিবেন। ভাল লাগলে শেয়ার করতে পারেন। ভাল থাকুন, ভাল রাখুন, আল্লাহ হাফেয।

মসফেট সম্বন্ধে ইংরেজিতে বিস্তারিত পড়ুনঃ Working Principle of MOSFET