১৮ শতাব্দীর দিকে বিজ্ঞানী জেমস ওয়াট (James Watt) আবিষ্কার করেন যে, পানিতে তাপ প্রয়ােগ করলে তা বাষ্পে পরিণত হয় এবং এই বাষ্পের চাপকে কাজে লাগিয়ে কোনাে কিছু ঘুরানো ও উত্তোলন করা সহ অনেক কাজ করা যায়। পরবর্তীতে তার এই তত্ত্বের উপর ভিত্তি করেই স্টিম ইঞ্জিন (Steam Engine) ও তাপ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র (Thermal Power Plant) গড়ে উঠেছিলো।
তাপ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র সাধারণত বাষ্প টারবাইন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র (steam turbine power plant) ও বাষ্প বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র (steam power plant) হিসেবে পরিচিত।
এই লেখাটিতে বাষ্প বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র (steam power plant) সম্বন্ধে বেসিক কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
আলোচনায় যা যা থাকছেঃ
- বাষ্প বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র কাকে বলে?
- বাষ্প বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের প্রকারভেদ।
- বাষ্প বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের উপাদান সমূহ।
- বাষ্প বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের কার্য পদ্ধতি সম্বন্ধে প্রাথমিক ধারণা।
বাষ্প বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র কাকে বলে?
যে জেনারেটিং স্টেশনে বাষ্পের চাপে টারবাইনকে ঘুরিয়ে যান্ত্রিক শক্তিকে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তরিত করা হয় সেই জেনারেটিং স্টেশনকে বাষ্প বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বা Steam Power Plant বলা হয়।
বাষ্প বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের আনুষঙ্গিক যন্ত্রাংশের সংখ্যা অন্যান্য পাওয়ার প্ল্যান্টের তুলনায় অনেক বেশি হওয়ায় এই ধরনের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বিস্তৃত এলাকা নিয়ে অবস্থিত। জ্বালানির সহজলভ্যতা ও অন্যান্য কারণে এই পাওয়ার প্ল্যান্টকে অধিক ক্ষমতা সম্পন্ন পাওয়ায় প্ল্যান্ট হিসেবে সর্বত্র ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশে যে সকল বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে তার মধ্যে তাপ (বাষ্প) বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের সংখ্যাই বেশি।
নিচে একটি বাষ্প বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র দেখানো হলোঃ
বাষ্প বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের প্রকারভেদ:
বাষ্প বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রকে নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করা যায়ঃ
- Central stations (কেন্দ্রীয় স্টেশন)।
- Industrial power stations (শিল্প বিদ্যুৎ কেন্দ্র)।
Central stations (কেন্দ্রীয় স্টেশন): এই ধরণের পাওয়ার স্টেশনের বিদ্যুৎ সাধারণ গ্রাহকদের নিকট বিক্রয়ের জন্য উৎপাদন করা হয় এবং এর সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা কোন কেন্দ্রীয় ব্যক্তি গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের নিকট ন্যাস্ত থাকে।
Industrial power stations (শিল্প বিদ্যুৎ কেন্দ্র): এই ধরণের পাওয়ার স্টেশন উৎপাদন সংস্থা তার নিজস্ব ব্যবহারের জন্য বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে এবং এর আউটপুট সাধারণ গ্রাহকদের নিকট বিক্রয় করা হয় না।
বাষ্প বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের কার্য পদ্ধতি সম্বন্ধে প্রাথমিক ধারণাঃ
একটি আধুনিক বাষ্প বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে নিম্নোক্ত উপাদান সমূহ লক্ষ্যনীয়ঃ
- Cooling tower
- Cooling water pump
- Transmission line 3-phase
- Step-up transformer (3-phase)
- Electrical generator (3-phase)
- Low pressure steam turbine
- Condensate pump
- Surface condenser
- Intermediate pressure steam turbine
- Steam Control valve
- High pressure steam turbine
- Deaerator
- Feed water heater
- Coal conveyor
- Coal hopper
- Coal pulverizer
- Boiler steam drum
- Bottom ash hopper
- Super heater
- Forced Draught (draft) fan
- Re heater
- Combustion air intake
- Economizer
- Air preheater
- Precipitator
- Induced draught (draft) fan
- Flue gas stack
বাষ্প বিদ্যুৎ কেন্দ্র কার্যপদ্ধতি সম্বন্ধে প্রাথমিক ধারণাঃ
একটি বাষ্প বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বা স্টিম পাওয়ার প্ল্যান্টের মূল কার্যকরী উপাদান হচ্ছে জলীয় বাষ্প বা steam. এই কেন্দ্রে কাঁচামাল হিসেবে পানি এবং প্রধান জ্বালানী হিসেবে কয়লা (coal) ব্যবহার করা হয়।
নিচে একটি চিত্রের মাধ্যমে বাষ্প বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের কার্য পদ্ধতি দেখানো হলোঃ
এখানে, কয়লার দহনে বয়লারে পানিকে বাষ্প (steam) করা হয়। তারপর এই বাষ্পের চাপে স্টিম টারবাইন চালিত হয়ে অল্টারনেটরকে চালিত করে যা যান্ত্রিক শক্তিকে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রুপান্তরিত করে।
এক্ষেত্রে ঠান্ডা বাতাসকে একটি Air Preheater এর মাধ্যমে গরম করে ফার্নেসে প্রবেশ করানাে হয়। তখন এই বাতাস সরবরাহকৃত কয়লা দহনের জন্য অক্সিজেন সরবরাহ করে। কয়লা দহনের পর যে গরম গ্যাস তৈরি হয় তা উপরে উঠে Water tube এর চারপাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়।
সাধারণত এখানে কতগুলাে বাফেল প্লেট এমনভাবে সাজানাে থাকে যাতে উক্ত গরম গ্যাস ওয়াটার টিউবের চারপাশে বেশ কয়েকবার ঘুরতে পারে। এখান থেকে বাতাস বের করার পর চিমনি দিয়ে তা নির্গত হবার পূর্বে উক্ত গরম গ্যাস Economizer এর নল ও Air Preheater পাতের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পরে চিমনি দিয়ে তা বায়ুমণ্ডলে চলে যায়।
অপরদিকে Feed Water Pump এর মাধ্যমে পানির উৎস থেকে পানি সংগ্রহ করে তা Economizer এ প্রদান করা হয়। Economizer এই পানিকে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় গরম করে বয়লারে প্রেরন করে। এতে বয়লার অল্প সময়ে স্টিম তৈরি করতে পারে কিন্তু বয়লার কর্তৃক উৎপন্ন এ স্টিম ভেজা থাকে তাই একে সুপারহিটারে পাঠিয়ে শুষ্ক স্টিম করা হয়। এরপর স্টিমকে টারবাইনে প্রেরণ করা হয়।
টারবাইনকে চালনা করার পর অনাবশ্যকীয় বা পরিত্যাক্ত বাষ্প এগজস্ট স্টিম (Exhaust Steam) হিসাবে বাতাসে ছেড়ে দেওয়া হয়। আবার কোন কোন পাওয়ার প্ল্যান্টে পূনরায় এই Exhaust Steam-কে শীতলীকরণের মাধ্যমে ঘনীভূত করা করা হয় এবং Reheat করে আবার টারবাইনে পাঠানো হয় অর্থাৎ, এখানে যে প্রক্রিয়ায় এই স্টিম উৎপন্ন করা হয়, প্রয়োজন শেষে সেটাকে পুনরায় ব্যবহার করা হয়। এবার পর্যায়ক্রমে চলতে থাকে এবং এই সম্পূর্ণ কাজটি একটি Rankine cycle অনুযায়ী সম্পন্ন হয়।
References:
Principles of Power system by V. K. Metha & Rohit Metha
Electrical4u.com
অন্যান্য লেখাসমূহঃ
ইলেকট্রিক্যাল এনার্জির প্রাথমিক উৎসগুলো সম্বন্ধে আলোচনা।
পাওয়ার প্ল্যান্ট: সংজ্ঞা, প্রকারভেদ ও কার্যপদ্ধতি সম্বন্ধে পড়ুন।
পাওয়ার প্লান্টে টারবাইন নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্বন্ধে পড়ুন।
প্রাইম মুভারঃ সংজ্ঞা, প্রকারভেদ, ব্যাখা ও টারবাইন সম্বন্ধে আলোচনা।