কোনো একটি এলাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করার পূর্বে সবার প্রথমে উপযুক্ত প্রাইম মুভার বা টারবাইন নির্বাচন করতে হয়। আর এই প্রাইম মুভার নির্ধারণ বা নির্বাচন করার সময় প্রধান ৩ টি দিক সর্বাধিক গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়। যেমনঃ
- বিদ্যুৎ চাহিদার মাত্রা।
- ব্যবহারের ধরণ।
- প্রাকৃতিক শক্তি উৎসের প্রাপ্যতা।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে উপরোক্ত বিষয় গুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হলো:
1. বিদ্যুৎ চাহিদার মাত্রা:
প্রথমত বিবেচনা করতে হবে যে, যেখানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে সেখানকার আবাসিক, শিল্প কারখানা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত ইত্যাদিতে বিদ্যুৎ চাহিদা কেমন। যদি বিদ্যুৎ চাহিদার পরিমাণ ১০ মেগাওয়াট অথবা তার চেয়ে কম হয় সেক্ষেত্রে ডিজেল ইঞ্জিন প্রাইম মুভার চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা যেতে পারে।
তবে বিদ্যুৎ চাহিদার মাত্রা ১০ মেগাওয়াট এর বেশি হলে যথাক্রমে গ্যাস টারবাইন, বাষ্প টারবাইন, পানি টারবাইন ইত্যাদি প্রাইম মুভার চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা যুক্তি সঙ্গত।
2. ব্যবহারের ধরণ (স্থায়ী বা অস্থায়ী):
প্রাইম মুভার নির্বাচনের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় যে বিষয়টি বিবেচনা করা হয় তা হচ্ছে স্থাপিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র কি স্থায়ী হবে না অস্থায়ী হবে।
লোকালয় বা শিল্প প্রধান এলাকায় স্থায়ীভাবে বিদ্যুৎ চাহিদার প্রয়োজন হয়। এজন্য সে সব এলাকায় চাহিদা অনুসারে যথাক্রমে গ্যাস টারবাইন, বাষ্প টারবাইন, ডিজেল টারবাইন, পানি টারবাইন প্রভৃতি প্রাইম মুভার চালিত যে কোনো একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা যেতে পারে।
তবে যখন প্রত্যন্ত অঞ্চল বা বিভিন্ন খনি প্রাপ্ত এলাকা যখন সাময়িকভাবে বিদ্যুতায়িত করার জন্য অস্থায়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের প্রয়োজন পড়ে সেক্ষেত্রে স্থানান্তর উপযোগী ডিজেল প্রাইম মুভার চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা অধিক যুক্তি যুক্ত।
3. প্রাকৃতিক শক্তি উৎসের প্রাপ্যতা:
যে এলাকায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে সেই এলাকায় প্রাকৃতিক শক্তি উৎসের প্রাচুর্য কেমন আছে তা বিবেচনা করা প্রয়োজন। নয়তো দেখা যাবে এনার্জি সোর্স বা জ্বালানির অভাবে এক সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র অচল হয়ে পরবে। তাই সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রাকৃতিক শক্তি উৎসের প্রাচুর্যতার উপর গুরুত্ব দেওয়া খুবই জরুরী।
যেমন বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে প্রচুর প্রাকৃতিক গ্যাস এবং কিছু পানি শক্তি রয়েছে। তাই ঐ এলাকায় প্রাকৃতিক গ্যাসকে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করে গ্যাস এবং বাষ্প টারবাইন প্রাইম মুভার চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এসব এলাকায় প্রয়োজন অনুসারে এক বা একাধিক সংখ্যক প্রাইম মুভার খুব সহজেই স্থাপন করা যায়।
অন্যদিকে খরস্রোতা নদী বহুল এলাকায় পানি টারবাইন প্রাইম মুভার চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা যুক্তি যুক্ত। আর যেখানে ডিজেল জ্বালানির প্রাচুর্য বিদ্যমান সেখানে এক বা একাধিক ডিজেল প্রাইম মুভার চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করা উচিত।
আর যে এলাকায় কোন রকম প্রাকৃতিক শক্তির উৎস নেই কিন্তু জ্বালানী আমদানি ও পরিবহনের সুযোগ সুবিধা রয়েছে সে সব এলাকায় কয়লা, ডিজেল ইঞ্জিন, গ্যাস টারবাইন ইত্যাদি প্রাইম মুভার চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করা যেতে পারে।
যেমনঃ বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রসমুহ।
References:
Power Plant Engineering – Bisbonath Majumdar
নিচের লেখাগুলো পড়ূনঃ
“পাওয়ার প্ল্যান্টে সংজ্ঞা, প্রকারভেদ ও কার্যপদ্ধতি সম্বন্ধে পড়ুন“
“সর্বোত্তম প্রাইম মুভারঃ ডিজেল ইঞ্জিন প্রাইম মুভার“
“টারবাইন সম্বন্ধে সংক্ষিপ্ত ধারণা ”
“প্রাইম মুভার সম্বন্ধে পড়ুন “