ইন্ডাকশন মোটরে উৎপন্ন টর্কের সাথে স্পিডের সম্পর্ককে টর্ক স্পিড লেখচিত্র বলা হয়। এই লেখচিত্রের মাধ্যমে আমরা উৎপন্ন টর্কের পরিবর্তনের সাথে কিভাবে স্পিড পরিবর্তিত হয় তা পর্যবেক্ষণ করতে পারি। নিচে ইন্ডাকশন মোটরের একটি টর্ক স্পিড লেখচিত্র দেখানো হলঃ
![Torque-speed Curve](https://blog.voltagelab.com/wp-content/uploads/2020/08/MPgs2vpDoy.png)
বিভিন্ন প্রকার টর্ক-স্পিড লেখচিত্রঃ
আমরা জানি, মোটরের সিনক্রোনাস স্পিড এবং রোটর স্পিডের পার্থক্যের সাথে সিনক্রোনাস স্পিডের অনুপাতকেই ইন্ডাকশন মোটরের স্লিপ বলা হয়। স্লিপের উপর ভিত্তি করে টর্ক স্পিড লেখচিত্রকে ৩টি অংশে বিভক্ত বিভক্ত করা হয়ে থাকে। যথাঃ
- Low Lip Region
- Moderate Slip Region
- High Slip Region
এসব অংশে যখন মোটর চলবে তদের বিভিন্ন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। সেসব বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে নিচে বর্ণনা করা হলঃ
Low Slip Region
ইন্ডাকশন মোটরের টর্ক স্পিড লেখচিত্র শুরু হয় Low Lip Region দিয়ে। এইখানে মোটরের লোড বাড়ার সাথে সাথে স্লিপ তার সমান্তরালভাবে বাড়তে থাকে এবং রোটরের স্পিডও লোডের সাথে সমান্তরালভাবে বাড়তে থাকে। এই অংশে রোটরের রিয়েক্ট্যান্সকে উপেক্ষা করা যায়, তাই রোটরে কারেন্ট বাড়তে শুরু করলেও পাওয়ার ফ্যাক্টর ১ এর আশে পাশেই থাকে। স্বাভাবিকভাবে ইন্ডাকশন মোটর সব সময় Low Lip Region-এ তার কার্যক্রম সম্পাদন করে থাকে।
Moderate Slip Region
এই অংশে রোটরের ফ্রিকোয়েন্সি Low Slip Region থেকে অনেক বেশি হয়। Moderate Slip Region-এ রোটর কারেন্ট আর আগের মত বৃদ্ধি পায় না এবং পাওয়ার ফ্যাক্টরও কমতে শুরু করে। মোটরে যখন লোড বাড়তে শুরু করে কিন্তু একটা অংশে এসে পাওয়ার ফ্যাক্টর কমে গিয়ে রোটর কারেন্ট ভারসাম্য অর্জন করে, এই অংশেই মোটরের সর্বোচ্চ টর্ক অর্থাৎ Pull Out Torque সংঘটিত হয়।
High Slip Region
এই অংশে লোড বাড়ার সাথে সাথে মোটরের টর্ক কমতে থাকে। আর রোটর কারেন্ট যে পরিমাণে বৃদ্ধি পায় তা পাওয়ার ফ্যাক্টর কমে যাওয়ার হার থেকে খুবই কম হয়।
নোটঃ ইন্ডাকশন মোটরের Pull Out Torque টর্ক হল ঐ মোটরের জন্য সর্বোচ্চ টর্ক যাকে কোনভাবেই অতিক্রম করা সম্ভব না। Pull Out Torque, ফুল লোড টর্কের প্রায় ২০০-২৫০ ভাগ পর্যন্ত বেশি হয়। আর স্টার্টিং টর্ক ফুল লোড টর্কের ১৫০ ভাগ পর্যন্ত হতে পারে। তাই ইন্ডাকশন মোটর অনেক বড় বড় লোড নিয়েও নির্বিঘ্নে স্টার্ট হতে পারে।
মোটরের অপারেশনের উপর ভিত্তি করে মোটরের টর্ক স্পিড লেখচিত্রকে আমরা আরো ৩ ভাগে ভাগ করতে পারি। যথাঃ
- Motoring Mode
- Generating Mode
- Braking Mode
![Torque-speed Curve](https://blog.voltagelab.com/wp-content/uploads/2020/08/5ShqjkyFiL-1024x720.png)
এবার আমরা উপরোক্ত ৩ টি অবস্থা সম্বন্ধে সংক্ষেপে আলোচনা করবঃ
Motoring Mode
এই অবস্থা হল ইন্ডাকশন মোটরের স্বাভাবিক অবস্থা। এই অবস্থায় স্ট্যাটরে পাওয়ার সাপ্লাই দেওয়া হয় এবং রোটর সব-সময় সিনক্রোনাস স্পিডের নিচে ঘুরতে থাকে। ইন্ডাকশন মোটরের স্লিপ ০ থেকে ১ এর মধ্যেই থাকবে। নো লোড অবস্থায় এর স্লিপ হবে ০ এবং রোটর স্থির অবস্থায় এর স্লিপ হবে ১। এছাড়া স্লিপের উপর ভিত্তি করে টর্ক ০ থেকে ফুল লোড পর্যন্ত হতে পারে। সুতরাং টর্ক স্লিপের উপর পরস্পর সমান্তরাল অবস্থায় থাকে।
Generating Mode
এই অবস্থায় মোটরের রোটরকে একটি প্রাইম মুভারের সাহায্যে সিনক্রোনাস স্পিডের থেকে বেশি স্পিডে ঘুরানো হয়। যার ফলে মোটরে যান্ত্রিক শক্তি দেওয়া হয় এবং তড়িৎ শক্তি উৎপন্ন হয়। কিন্তু ইন্ডাকশন মোটরকে জেনারেটর হিসেবে তেমন বেশি ব্যবহার হয় না কারণ ইন্ডাকশন জেনারেটর চলতে হলে কিছু পরিমাণ তড়িৎ শক্তির প্রয়োজন। আর এই অবস্থায় মোটর বিদ্যুৎ শক্তি সরবরাহ করার পরিবর্তে নিজেই সেটা ব্যবহার করে।
Braking Mode
ইন্ডাকশন মোটর যখন স্বাভাবিক ভাবে চলতে থাকে তখন এর পাওয়ার সাপ্লাই এর পজিটিভ এবং নেগেটিভ তারকে উল্টো করে লাগিয়ে দেওয়া হয়, যার ফলে মোটর হঠাৎ করে থেমে যায়। যাকে মোটরের ব্রেকিং বলা হয়। যখন মোটর রানিং অবস্থায় অতি দ্রুত বন্ধ করার প্রয়োজন পড়ে তখন এই পদ্ধতিকে কাজে লাগানো হয়। এই অবস্থায় মোটরের স্লিপ সাধারণত ১ এর চাইতেও কম হয়ে থাকে।
ইন্ডাকশন মোটর সম্পর্কে অন্যান্য লেখা সমূহঃ
ইন্ডাকশন মোটরঃ প্রকারভেদ এবং গঠন
থ্রী ফেইজ ইন্ডাকশন মোটরের কার্যপদ্ধতি