ট্রান্সফরমারের গঠন | Basic Construction of Transformer

ট্রান্সফরমার এমন একটি স্থির যন্ত্র বিশেষ যেখানে কারেন্টের সাপেক্ষে, এসি সাপ্লাই এর ভোল্টেজ বাড়ানো হয় নয়ত কমানো হয়। সহজ কথায় বলা যায়, ট্রান্সফরমার এমন একটি ইলেক্ট্রনিক/ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্র যেটি ইনপুট হিসেবে ইলেক্ট্রিক পাওয়ার নিয়ে আউটপুটেও ইলেকট্রিক পাওয়ার দিবে, কিন্তু এদের মধ্যে কোন তারের সংযোগ থাকবে না।

ট্রান্সফরমার সাধারণত নিম্মলিখিত অংশের সমন্বয়ে গঠিত।

  • ট্যাংক
  • কোর
  • ওয়াইন্ডিং
  • ট্রান্সফরমার ওয়েল
  • কনজারভেটর
  • ব্রীদার
  • ট্যাপ চেঞ্জার
  • বুখলজ রীলে
  • রেডিয়েটর এবং কুলিং টিউব
  • বুশিং
  • ড্রেইন ভালভ
  • এক্সপালশন ভেন্ট
  • প্রেশার রিলিফ ভালভ
  • আর্থ পয়েন্ট ও অন্যান্য।
ট্রান্সফরমারের-গঠন
ট্রান্সফরমার গঠন
ট্যাংকঃ 

ট্রান্সফরমার ট্যাংক স্টীলের তৈরী একটা সিলিন্ডার আকৃতির পাত্র। এর মাঝে কোর ও ওয়াইন্ডিং অবস্থান করে। ট্রান্সফরমারের ট্যাঙ্কের ভিতরে এক ধরনের তৈল থাকে যার মধ্যে উইন্ডিং এবং কোর ডুবানো থাকে। ট্যাঙ্কের উপর জলবায়ু নিরাধক গেসকেট লাগানো থাকে। ট্যাঙ্কের তলার সঙ্গে কোরকে আটকিয়ে রাখা হয়।

কোরঃ 

ট্রান্সফরমারের কোর সাপোর্ট হিসেবে কাজ করে। এটি ম্যাগনেটিক সার্কিটে উৎপন্ন ফ্লাক্স প্রবাহের জন্য লো রিলাকটেন্স পাথ হিসেবেও কাজ করে। উইন্ডিং যে ইস্পাতের ফ্রেমে মোড়ানো থাকে সেই ফ্রেমকেই কোর বলা হয়। ইস্পাতের কোর ব্যবহারের ফলে প্রাইমারি সাইডে উৎপন্ন ম্যাগনেটিক ফ্লাক্স খুব সহজে সেকেন্ডারির সাথে সংশ্লিষ্ট হতে পারে।

কোর অনেকগুলো ল্যামিনেটেড লোহার অথবা স্টিলের পাত দ্বারা গঠিত হয়। পাতলা ইনসুলেশন অথবা বার্নিশ দ্বারা প্রতিটি পাত অন্তরিত করা থাকে।

ধাতব পাত ব্যবহারের প্রধান কারন এর উচ্চ চৌম্বক প্রবেশ্যতা এবং অপেক্ষাকৃত কম হিস্টেরেসিস লস। ল্যামিনেটেড শিট ব্যবহারের জন্য এডি কারেন্ট লস কম হয়। কোরের গঠন বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে (যেমনঃ ভোল্টেজ, কারেন্ট, ফ্রিকোয়েন্সি) কোরের পরিধি কপার লসের সমানুপাতিক এবং আয়রন লসের ব্যস্তানুপাতিক। কোরের পরিধি কমলে কোরের আয়রনের পরিমান কমে। ফলে কোর লস কমে এবং কপার লস বাড়ে।  

ওয়াইন্ডিংঃ

ট্রান্সফরমার মূলত দুইটি ওয়াইন্ডিং দ্বারা গঠিত। প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি ওয়াইন্ডিং। সাধারণত সুপার এনামেল তামার তার দিয়ে এই কয়েল তৈরি হয়। এই দুই ওয়াইন্ডিং এর মাঝে কোন ইলেকট্রিক্যাল সংযোগ থাকে না বরং এরা ম্যাগনেটিক্যালি সংযুক্ত থাকে।

প্রাইমারি ওয়াইন্ডিং সাধারনত সাপ্লাই এর সাথে যুক্ত থাকে এবং সেকেন্ডারি ওয়াইন্ডিং লোডের সাথে যুক্ত থাকে। এই দুই ওয়াইন্ডিং  ম্যাগনেটিক কোরের দুই বিপরীত বাহুর সাথে যুক্ত থাকে। এই কয়েলগুলো একে অপরের থেকে এবং কোর থেকে ভালোভাবে অন্তরিত করে রাখা হয় যাতে নিজেদের মাঝে ইলেকট্রিক্যালি কানেক্টেড হতে না পারে। প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি ওয়াইন্ডিং এর ভোল্টেজের পার্থক্য প্রাইমারি (NP) এবং সেকেন্ডারি ওয়াইন্ডিং (NS) এর পাক সংখ্যার উপরে নির্ভর করে।

যে ট্রান্সফরমার সেকেন্ডারিতে ভোল্টেজকে বাড়িয়ে দেয় তাকে স্টেপ আপ ট্রান্সফরমার বলে। স্টেপ আপ ট্রান্সফরমারে সেকেন্ডারি কয়েলের পাক সংখ্যা প্রাইমারি কয়েলের পাক সংখ্যার চেয়ে বেশি হয়। এবং যে ট্রান্সফরমার ভোল্টেজকে কমিয়ে দেয় তাকে স্টেপ ডাউন ট্রান্সফরমার বলে। স্টেপ ডাউন ট্রান্সফরমার সেকেন্ডারি কয়েলের পাক সংখ্যা প্রাইমারি কয়েলের পাক সংখ্যার চেয়ে কম হয়।

ট্রান্সফরমার ওয়েলঃ 

ট্যাংকে এবং কনজারভেটরে এক ধরনের মিনারেল ওয়েল ব্যবহৃত হয়। এটি সাধারণত ইন্সুলেশনের জন্য এবং উইন্ডিংকে ঠাণ্ডা রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়।

কনজারভেটরঃ 

কনজারভেটরে ট্রান্সফরমার অয়েল সংরক্ষিত থাকে। এটি বাতাসের সংস্পর্শমুক্ত ধাতব সিলিন্ডার আকৃতির ড্রাম যা ট্রান্সফরমারের উপরে সংযুক্ত থাকে। কনজারভেটরের এক প্রান্ত আটকানো থাকে যাতে বাহ্যিক কোন উপাদান ভেতরে ঢুকতে না পারে। কনজারভেটরের তেলের উচ্চতা সাধারনত কনজারভেটরের উচ্চতার অর্ধেক রাখা হয় যাতে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে তেলের আয়তন বৃদ্ধির সুযোগ পায়। কনজার্ভেটতের অপর প্রান্ত পাইপের মধ্য দিয়ে ট্রান্সফরমারের মেইন ট্যাংকের সাথে যুক্ত থাকে।

ট্রান্সফরমারের তৈলের আয়তন তৈলের গরম এবং ঠাণ্ডা হওয়ার সাথে বাড়ে কমে। বাড়া-কমার সমস্যা সমাধানের জন্য ট্যাঙ্কের উপর এক ধরনের ড্রাম ব্যবহার করা হয়। এই ড্রাম কে কনজারভেটর বলে।

ব্রীদারঃ 

ব্রীদার ট্রান্সফরমারের অয়েলের আর্দ্রতার পরিমান নিয়ন্ত্রন করে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে ট্রান্সফরমারের ওয়েলের আয়তন বৃদ্ধি পেলে কনজারভেটরে চাপ বৃদ্ধি পায়। এই চাপ কমানোর জন্য ট্যাংকে বাতাস প্রবাহিত করানো হয়। এই বাতাসকে জলীয়বাষ্পমুক্ত রাখাই ব্রীদারের কাজ। ব্রীদার সিলিন্ডার আকৃতির একটি পাত্র যার মাঝে সিলিকা জেল থাকে। এই সিলিকা জেল বাতাসের আর্দ্রতা শোষন করে।

ট্রান্সফরমারের তৈলের আয়তন তৈলের গরম এবং ঠাণ্ডা হওয়ার সাথে বাড়ে কমে। বাড়া-কমার সমস্যা সমাধানের জন্য ট্যাঙ্কের উপর এক ধরনের ড্রাম ব্যবহার করা হয়। এই ড্রাম কে কনজারভেটর বলে।

ট্যাপ চেঞ্জারঃ 

ট্রান্সফরমারের আউটপুট ভোল্টেজ সাধারণত ইনপুট ভোল্টেজ এবং লোডের উপরে নির্ভর করে। লোডেড অবস্থায় ট্রান্সফরমারের আউটপুট কমে যায় এবং লোড না থাকলে ট্রান্সফরমারের আউটপুট বেড়ে যায়। এই ভোল্টেজের পরিবর্তন নিয়ন্ত্রন করার জন্য ট্যাপ চেঞ্জার ব্যবহৃত হয়। ট্যাপ চেঞ্জার অন-লোড অথবা অফ-লোড দুই ধরনের হতে পারে।  

বুখোলজ রিলেঃ

বুখোলজ রিলে একটি নিরাপত্তামূলক ডিভাইস যা ট্রান্সফরমারের আভ্যন্তরীন ফল্ট বের করতে ব্যবহৃত হয়। যে ট্রান্সফরমারের ওয়াইন্ডিং তেলে নিমজ্জিত থাকে সেই ট্রান্সফরমারেই কেবল বুখোলজ রিলে ব্যবহার করা যায়। এটি মেইন ট্যাংক এবং কনজারভেটরের মধ্যকার সংযোগ পাইপে সংযুক্ত থাকে। ট্রান্সফরমারে আভ্যন্তরীন কোন ফল্ট হলে ট্যাংকের ট্রান্সফরমার ওয়েল ভেঙে হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন করে। এই গ্যাসের পরিমান অল্প হলে বুখোলজ রিলের সাথে সংযুক্ত এলার্ম বেজে ওঠে।

রেডিয়েটর এবং কুলিং টিউবঃ 

ট্রান্সফরমারের তেলকে ঠান্ডা করার জন্য রেডিয়েটর ব্যবহৃত হত। ট্রান্সফরমারের গায়ে অনেকগুলো কুলিং টিউব লাগানো থাকে। তেলের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে গরম তেল ট্যাংকের উপরের দিকে উঠে যায় এবং কুলিং টিউবের মধ্য দিয়ে উপর থেকে নিচের দিকে প্রবাহিত হয়। কুলিং টিউব বাতাসের সংস্পর্শে থাকে এবং তেলের তাপ শোষন করে তেলকে ঠান্ডা করে। তেল কিভাবে প্রবাহিত হবে তার ভিত্তিতে কুলিং সিস্টেম আবার দুই ধরনের হতে পারে

  1. ন্যাচারাল কুলিং সিস্টেমঃ ট্রান্সফরমার ওয়েল নিজে নিজেই কুলিং টিউবের মাঝে প্রবাহিত হয়।
  2. ফোর্সড কুলিং সিস্টেমঃ একটি আলাদা পাম্প ব্যবহার করা হয় ট্রান্সফরমার ওয়েলের প্রবাহের জন্য।
বুশিংঃ 

ট্রান্সফরমারে ব্যবহিত উইন্ডিং এর টার্মিনাল গুলো বুশিং এর মাধ্যমে ট্যাঙ্কের বাহিরে আনা হয়ে থাকে। এই বুশিং এর মাধ্যমে প্রাইমারি কয়েল এসি উৎসের সাথে এবং সেকেন্ডারি কয়েল লোডে সংযুক্ত থাকে। বুশগুলো লম্বা, চীনামাটির তৈরি ছ্রিদ্রযুক্ত ইনসুলেটর যা ট্রান্সফরমার ট্যাংকের মাথায় বসানো থাকে। ট্রান্সফরমারে দুই ধরনের বুশিং ব্যবহৃত হয়ঃ

  1. হাই ভোল্টেজ বুশিং এবং
  2. লো ভোল্টেজ বুশিং।  
ড্রেইন ভালভঃ 

ট্রান্সফরমার ওয়েল কে রিফাইন অথবা টেস্ট করার জন্য ট্যাংক হতে ড্রেইন কক এর মাধ্যমে বের করা হয়। ড্রেইন ভালভের পাইপ ট্রান্সফরমারের ট্যাংকের সাথে ঝালাই করে সংযুক্ত করা হয়। এই ভালভ হলো টি আকৃতির এবং খোলার জন্য বিশেষ ধরনের চাবির প্রয়োজন হয়। 

এক্সপালশন ভেন্টঃ

ট্রান্সফরমারের মাথায় এলুমিনিয়ামের ডায়াফ্রামযুক্ত যে বাকানো পাইপ বসানো থাকে তাকেই এক্সপালশন ভেন্ট বলে। ট্রান্সফরমারে বড় ধরনের ত্রুটি হলে ট্যাংকে যে উচ্চ চাপের সৃষ্টি হয় সেই চাপ কমানোর জন্যই এক্সপালশন ভেন্ট ব্যবহৃত হয়।  

প্রেশার রিলিফ ভালভঃ

ট্রান্সফরমার ত্রুটি হলে যে উচ্চচাপ সৃষ্টি হয় সেই চাপ কমানোর জন্য প্রেশার রিলিভ ভালভ ব্যবহৃত হয়। এটি স্প্রিং কন্ট্রোলড ডিভাইস এবং ট্রান্সফরমারের মেইন ট্যাংকের উপরে লাগানো থাকে। আভ্যন্তরীন চাপ বেড়ে গেলে এটি ওপেন হয়ে অতিরিক্ত চাপ বের হয়ে যেতে সাহায্য করে।  

 আর্থ পয়েন্টঃ

ট্রান্সফরমারকে নানা ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করার জন্য এর বডির দুটি আর্থ পয়েন্ট থাকে। এই আর্থ পয়েন্ট দুটি মাটির সাথে সংযুক্ত থাকে।

ট্রান্সফরমারের গঠন চিত্রসহঃ

ট্রান্সফরমারের গঠন
ট্রান্সফরমার গঠন
1Oil filter valve17Oil drain valve
2Conservator 18Jacking boss
3Buchholz relay19Stopper
4Oil filter valve20Foundation bolt
5Pressure-relief vent21Grounding Terminal
6High-voltage bushing22Skid base
7Low-voltage bushing23Coil
8Suspension lug24Coil pressure plate
9B C T Terminal25Core
10Tank26Terminal box for protective device
11De-energized tap changer27Rating plate
12Tap changer handle 28Dial thermometer
13Fastener for core and coil29Radiator
14Lifting hook for core and coil30Manhole
15End frame31Lifting hook
16Coil pressure bolt32Dial type oil level gauge

Source:

Wikipedia

Electrical4u web

electricaltechnology org web

আরও পড়ুনঃ

Constructions of Electrical Transformer

ট্রান্সফরমার কি / What is a Transformer