ইন্ডাকট্যান্স এর মৌলিক বিষয়গুলো সম্বন্ধে জেনে নিন | Inductance in Bangla

0
8832
ইন্ডাকট্যান্স

ইন্ডাকট্যান্স হচ্ছে ইন্ডাক্টর এর ক্ষমতা বা সামর্থ্য যার দ্বারা সে পরিবর্তনশীল কারেন্ট মানে এসি কারেন্ট পরিবহনে বাধা দেয় এবং এটি অনবরত ঘটতে থাকে।

অন্যদিকে এটি ডিসি কারেন্ট পরিবহন হতে বাধা দেয় খুব অল্প সময়, যখন এটি স্টিডি স্টেট অবস্থায় আসে তখন সে একটা শর্ট পাত হিসেবে কাজ করে যার রেজিস্টিভিটি শূন্য, তখন সে আর ডিসি কারেন্ট পরিবহন হতে বাধা দেয় না। সে তখন একটা রেজিস্টর এর মত আচরণ করে।

অন্যকথায় ইন্ডাকট্যান্স হচ্ছে ইন্ডাক্টর এর এমন ক্ষমতা বা এবিলিটি যার দ্বারা সে নিজের মধ্যে অস্থায়ীভাবে এনার্জি স্টোর করে ম্যাগনেটিক ফিল্ড আকারে। আবার প্রয়ােজনে সার্কিট এ ডিসচার্জ করে দেয়। ইন্ডাকট্যান্স কে L দ্বারা প্রকাশ করা হয় এর একক হেনরি।

ইন্ডাক্টর হচ্ছে একটা তারের কয়েল বা অনেকগুলাে প্যাঁচের সমষ্টি। এককথায় একটা তারকে প্যাঁচিয়ে প্যাঁচিয়ে কয়েল বানালে যা হয় তাই একটা ইন্ডাক্টর।

ইন্ডাকট্যান্স

এখন ইন্ডাকট্যান্স এর আসল বিষয় টা ব্যাক্ষা করি

আমরা যদি একটি ইন্ডাক্টর এ মানে তারের একটি কয়েলে ভােল্টেজ এপ্ল্যাই করি তাহলে কয়েল এর মধ্য দিয়ে কারেন্ট প্রবাহিত হবে। প্রকৃত পক্ষে এসি কারেন্ট কয়েল বা তারের সার্ফেস দিয়ে যায় আর ডিসি কারেন্ট সার্ফেস ও ভিতর দিয়ে যাই।

আমরা জানি যে, কয়েল এর মধ্য দিয়ে কারেন্ট প্রবাহিত হলে এর চারপাশে ফ্লাক্স তৈরি হয়, মানে ম্যাগ্নেটিক ফিল্ড তৈরি হয়। একে ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক ফিল্ড বা ইলেক্ট্রো ম্যাগনেট বলে।

যদি কয়েল এর মধ্য দিয়ে ডিসি কারেন্ট প্রবাহিত হয় তাহলে কয়েল এর চতুর্দিকে স্থির
ম্যাগ্নেটিক ফিল্ড তৈরি হয়। আর যদি এসি কারেন্ট প্রবাহিত হয় তাহলে কয়েল এর
চতুর্দিকে পরিবর্তনশীল ম্যাগ্নেটিক ফিল্ড তৈরি হয়।

কারেন্ট পরিবর্তন এর সাথে সাথে ম্যাগ্নেটিক ফিল্ড এর ও পরিবর্তন ঘটে। যেমনঃ কয়েল এ যদি বেশি কারেন্ট প্রবাহিত হয় তাহলে বেশি ফ্লাক্স তৈরি হবে মানে শক্তিশালী
ম্যাগ্নেটিক ফিল্ড, আর যদি অল্প কারেন্ট প্রবাহিত হয় তাহলে অল্প ফ্লাক্স তৈরি হবে মানে দূর্বল ম্যাগ্নেটিক ফিল্ড।

এখন আমরা জানি ফ্যারাডের ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক ইন্ডাক্সন “ল” অনুযায়ী, যদি কোন কয়েল এ পরিবর্তনশীল কারেন্ট মানে এসি কারেন্ট প্রবাহিত হয় তাহলে কয়েল এর চতুর্দিকে পরিবর্তনশীল ফ্লাক্স তৈরি হয়। এই ফ্লাক্স যদি তার আশে পাশে কোন কয়েল পায় তাহলে সেই কয়েলে ফ্লাক্স কাট হয় ফলে সেই কয়েলে ভােল্টেজ ইন্ডিউসড করে। B

আমরা জানি,

ইন্ডিউজড ভােল্টেজ = – N dϕ / dt বা L di/dt

এখানে, N হচ্ছে কয়েল এর টার্ন বা প্যাঁচ, dϕ/dt হচ্ছে পরিবর্তনশীল ফ্লাক্স, L হচ্ছে কয়েল এর ইন্ডাক্ট্যান্স এবং di/dt হচ্ছে পরিবর্তনশীল কারেন্ট। প্যাঁচের সংখ্যা যত বেশি হবে ইন্ডিউসড ভােল্টেজ ও তত বেশি হবে আবার ফ্লাক্স যত বেশি পরিবর্তনশীল হবে ইন্ডিউসড ভােল্টেজ ও তত বেশি হবে।

এসির ফ্রিকুয়েন্সি যত বেশি হবে কারেন্ট ও তত বেশি পরিবর্তনশীল হবে কাজেই ফ্লাক্স ও তত বেশি পরিবর্তনশীল হবে।

যখন কয়েল এর মধ্য দিয়ে পরিবর্তনশীল মানে এসি কারেন্ট প্রবাহিত হবে তখন কয়েল এর চতুর্দিকে পরিবর্তনশীল ফ্লাক্স তৈরি হবে।

এখন এই পরিবর্তনশীল ফ্লাক্স পাশে কোন কয়েল না পেয়ে নিজ কয়েলে ফ্লাক্স কাট করে ভােল্টেজ ইন্ডিউসড করবে।

এই ইন্ডিউজড ভােল্টেজ কয়েল এ কারেন্ট প্রবাহিত করলে এতে নতুন ফ্লাক্স তৈরি হবে। এখন এই নতুন ফ্লাক্স ওরিজিনাল ফ্লাক্স কে তৈরি হতে বাধা দিবে। তার মানে হচ্ছে কয়েলের ইন্ডিউজড কারেন্ট ওরিজিনাল কারেন্ট কে কয়েলে স্লো হতে বাধা দিবে।

এটিই হলাে কয়েল এর সেলফ ইন্ডাকট্যান্স। যার কারনে ইন্ডিউসড ভােল্টেজ ইকুয়েশন এর আগে একটি (-) চিহ্ন দেয়া হয়। এটি দিয়েছেন বিজ্ঞানী Lenz। তিনি বলেছেন যে ইন্ডিউসড ইফেক্ট এমন যে, সেটা যে কারনে তৈরি হয় সেই কারন কেই বাধা দেয়।

যদিও ইন্ডাক্টর পরিবর্তনশীল কারেন্ট প্রবাহিত হতে বাধা দেয় তার সেলফ ইন্ডাক্ট্যান্স এর কারনে কিন্তু কারেন্ট ম্যাগ্নিচুড কে বাধা দেয় না। যেমন কোন সার্কিট এ ১০ এম্পিয়ার কারেন্ট প্রয়ােজন হলে ইন্ডাক্টর ১০ এম্পিয়ার ই কারেন্ট সরবরাহ করবে কিন্তু সেলফ ইন্ডাক্ট্যান্স এর কারনে কারেন্ট বাধা প্রাপ্ত হয়ে সরবরাহ করবে।

অন্যদিকে ইন্ডাক্টরে ডিসি কারেন্ট যার ফ্রিকুয়েন্সি জিরাে মানে অপরিবর্তনশীল কারেন্ট সরবরাহ করলে ইন্ডাক্টর ধীরে ধীরে ম্যাগনেটিক ফিল্ড আকারে এনার্জি স্টোর করবে। যতক্ষণ না সে একটি শক্তিশালী ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেট এ পরিণত হয় ততক্ষণ সে কারেন্ট পরিবহণ হতে বাধা দিবে। যখন সে সম্পন্ন রুপে একটি শক্তিশালী ম্যাগনেট এ পরিণত হবে তখন সে আর কারেন্ট পরিবহন হতে বাধা দিবে না।

কারণ সে একটা স্থির ইলেক্ট্রো ম্যাগনেট এ পরিণত হবে যার ফ্লাক্স অপরিবর্তনশীল যেটা নিজ কয়েল এ ভােল্টেজ ইন্ডিউজড করতে পারবে না, কাজেই সেটা একসময় আর কারেন্ট পরিবহণ এ বাধা দিবে না ফলে সেটা একটা রেজিস্টর এর মত আচরণ করবে।

সাধারণত ইন্ডাক্টর এর ব্যবহার ব্যাপক হারে হয় যেমনঃ জেনারেটর, মোটর, ট্রান্সফরমার ইত্যাদিতে।

courtesy: Samirul Islam

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here