“বিদ্যুৎ” এই শব্দটি যেন আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ বিদ্যুৎ বলতেই কেবল পরিবাহী তারের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত চলবিদ্যুৎকেই বুঝে থাকে। কিন্তু স্থির বিদ্যুৎও যে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে সে কথা হয়ত অনেকেই উপলব্ধি করতে পারিনা। আর এজন্যই আজকের আর্টিকেল নিয়ে উপস্থিত হলাম আপনাদের মাঝে। চলুন স্থির বিদ্যুৎ এর কিছু ব্যবহারিক প্রয়োগক্ষেত্র নিয়ে আড্ডা জমানো যাক।
স্থির বিদ্যুৎ বলতে কি বোঝায়?
অনেকেই ভাবছেন এ আর এমন কি? যে বিদ্যুৎ চলাচল করতে পারেনা, স্থির থাকে তাকেই স্থির বিদ্যুৎ বলে। আর এই বিদ্যুৎ তৈরি হয় ঘর্ষণের মাধ্যমে। কিন্তু দুটো বস্তু ঘর্ষণের কারণেই কেন স্থির বিদ্যুৎ তৈরি হবে? ঘর্ষণের সময় কি এমন ঘটে যে স্থির বৈদ্যুতিক আধান তৈরি হয়।
ঘর্ষণের ফলে স্থির বিদ্যুৎ তৈরি হবে কেন?
এই রহস্য লুকিয়ে ছিল বহু বছর পূর্বে পাইন গাছের এম্বার আঠার মধ্যে। ৬০০ খ্রিস্টপূর্বে গণিতবিদ থ্যালিসের জাগল এক আজব ইচ্ছা। কি সেই ইচ্ছা? তিনি এম্বার গাছ থেকে আঠা সংগ্রহ করলেন এবং তা পশুর লোমের সাথে ঘষতে লাগলেন। ঘর্ষণের পরে তিনি পশুর লোমকে অন্য একটি হালকা বস্তুর সংস্পর্শে আনেন। তখন হালকা বস্তুটি পশুর লোম কর্তৃক আকৃষ্ট হতে থাকে। এমন কিছু শক্তি ত আছেই যার কারণেই এই ঘটনাটি ঘটেছে।
শুধুমাত্র থ্যালিসই নয়, খেলার ছলে আপনিও তৈলাক্ত মাথায় কলম ঘষে কাগজকে আকর্ষণ করে স্থির বিদ্যুতের প্রয়োগ করেছেন। বস্তুত এখানে হচ্ছেটা কি? খুবই সিম্পল ব্যাপার। সবই ইলেকট্রনের খেলা। আমরা জানি, পদার্থ হল ইলেকট্রনের আধার। এক এক পদার্থের ইলেকট্রন আসক্তি একেক ধরনের। কেউ ইলেকট্রন গ্রাস করে। পক্ষান্তরে কেউ হাজী মুহাম্মদ মহসীনের ন্যায় ইলেকট্রন দান করে। আর এই গ্রহণ বা ত্যাগের ফলেই তার মধ্যে ইলেকট্রনের ঘাটতি বা বাড়তি হতে পারে। মজার ব্যাপার এই যে, ইলেকট্রন বাড়তি কমতির ঘটনায় প্রোটন মহাশয়ের কোনরুপ পরিবর্তন ঘটেনা। ফলশ্রুতিতে, দুটো বস্তুর মধ্যে একটি ধনাত্নক আধানে আরেকটি ঋনাত্নক চার্জে চার্জিত হয়ে পড়ে।
খুব বেশি বকবক করে ফেলছি। আসল পয়েন্টে ফিরে যাই। বাস্তবজীবনে এই স্থির বিদ্যুতের কিছু ব্যবহারিক ক্ষেত্র দেখে নেয়া যাকঃ
ভ্যান ডি গ্রাফ জেনারেটর
জেনারেটর নাম শুনেই হয়ত চমকে গেলেন? আমরা ত জানি, জেনারেটর কেবলই এসি ভোল্টেজ তৈরি করে থাকে। জেনারেটরের সাহায্যে স্ট্যাটিক চার্জ বা স্থির বিদ্যুৎও তৈরি করে সম্ভব। এই জেনারেটরে সাধারণত উচ্চধরনের ফ্রিকশান ব্যবহার করে একটি গোলকের এরিয়াকে অধিকমাত্রায় চার্জিত করে হাই ভোল্টেজ তৈরি করা হয়ে থাকে। এই জেনারেটরের মাধ্যমে ৫০ লক্ষ ভোল্ট ভোল্টেজ তৈরি করা সম্ভব।
জেরোগ্রাফি
পরীক্ষার হলে আপনি আপনার বন্ধুর খাতা হুবহু কপি করে নিজের খাতায় পেস্ট করলেন। এই কপিবিদ্যাই হল জেরোগ্রাফি। একটু সিরিয়াস ভাষায় বলতে গেলে, আমরা ফটোকপি মেশিনের সাহায্যে যে জেরোক্স কপি বের করি সেই জেরোক্স কপি বের করার প্রক্রিয়াই হল জেরোগ্রাফি। “Xeros” এবং “Graphy” এই দুই শব্দ নিয়েই জেরোগ্রাফি শব্দটি গঠিত। “Xeros” শব্দের অর্থ হল কপি/নকল আর “Graphy” শব্দের অর্থ হল লিখা।
ফটোকন্ডাক্টিং একটি ড্রামকে চার্জিত করে সুপার রেজুলেটেড লেন্স গ্লাস ব্যবহার করে স্ট্যাটিক ইলেকট্রিসিটি ব্যবহার করে জেরোক্স কপি বের করে নেয়া হয়।
লেজার প্রিন্টার
অত্যাধুনিক লেজার প্রিন্টারে হাই লুমিন্যান্সের লেজার সিগন্যালের সাহায্যে ইলেকট্রোস্ট্যাটিক সিস্টেমে যে লেজার প্রিন্ট করা হয় সেক্ষেত্রে স্ট্যাটিক/স্থির বিদ্যুৎ এর ব্যবহার অত্যাবশ্যক।
তবে এক্ষেত্রে লেজার লাইট লুমিন্যান্স বা ইন্টেন্সিটি যত ভাল হবে প্রিন্ট কোয়ালিটি তত ভাল হবে।
এয়ার ক্লিনিং প্রিসিপিটাটর
উন্নত দেশগুলোতে ইলেকট্রোস্ট্যাটিক প্রসেসে ইন্ডাস্ট্রি বা পাওয়ার প্লান্টে ধূলাবালি, ধোয়াযুক্ত বাতাস পরিষ্কার করা হয়। এক্ষেত্রে একটি ইলেকট্রোস্ট্যাটিক প্রিসিপিটাটোর ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
এই প্রক্রিয়ায় বাতাসের চার্জযুক্ত ধূলাবালি, ধোয়া অন্যান্য পার্টিকেল নিম্নোক্ত উপায়ে দূর করা হয়ঃ
- প্রাথমিক ফিল্টারিং
- গ্রীডকে পজিটিভ চার্জে চার্জিত করা
- নেগেটিভ চার্জে চার্জিত করা
- অবশেষে নিউট্রালাইজ করে পরিপূর্ণভাবে ফিল্টারিং করা
আরো কিছু আর্টিকেল পড়ুন
কেমন হবে যদি সমগ্র পৃথিবী বিদ্যুৎ শূন্য হয়ে পড়ে?
পাওয়ার লাইনে বিকট শব্দের পর বিদ্যুৎ চলে যায় কেন? | বিকট শব্দের রহস্য