ইঞ্জিনের পাওয়ারকে হর্সপাওয়ারে প্রকাশ করা হয় কেন? | জেমস ওয়াটের ঘোড়ার গল্প

দৈনন্দিন জীবনে আমরা বিভিন্ন একক ব্যবহার করে থাকি এবং তার সংখ্যা খুব বেশি। তাপমাত্রা, বল এবং দূরত্ব অনেক কিছুর পরিমাপের একক ব্যবহার করে থাকি। সেলসিয়াস, নিউটন এবং মিটার এসবে যেন আমরা অভ্যস্ত হয়ে উঠছি। কিন্তু হর্সপাওয়ার এককটি যেন একটু ভিন্ন প্রকৃতির। এত প্রাণী থাকতে কেন শুধুমাত্র ঘোড়াকে মডেল ধরা হল? তাই আজ আমরা জানব মোটর বা বৈদ্যুতিক ইঞ্জিনের ক্ষমতাকে কেন হর্সপাওয়ারে প্রকাশ করা হয়ে থাকে?

অশ্বশক্তি (এইচ পি) হল পাওয়ার বা ক্ষমতা পরিমাপের একক বা কাজের হারকে বোঝানো হয়। এটি সাধারণত ইঞ্জিন বা মোটরের আউটপুটকে বোঝায়। অশ্বশক্তি বিভিন্ন ধরণের আছে। এর বহুল ব্যবহৃত একক হল মেকানিক্যাল হর্সপাওয়ার বা ইম্পেরিয়াল হর্স পাওয়ার) যা প্রায় 745.7 ওয়াটের সমতুল্য এবং মেট্রিক হর্স পাওয়ার যা প্রায় 735.5 ওয়াটের সমতুল্য। এছাড়াও এটিকে ৫৫০ ফুট-পাউন্ড/সেকেন্ডেও হিসেব করা হয়।

ইঞ্জিনের পাওয়ারকে হর্সপাওয়ারে প্রকাশ করার কারণ

মোটর আবিষ্কারের আগে প্রাচীনকালের মানুষেরা যেকোন প্রকার ভারী কাজ বা প্রচুর যান্ত্রিক শক্তির জন্য ঘোড়াকে ব্যবহার করত। অতঃপর ফ্যারাডের ইলেকট্রোম্যাগনেটিক থিওরি প্রদানের পর আবিষ্কৃত হল বৈদ্যুতিক মোটর। কিন্তু মানুষের মধ্যে কনফিউশন থেকে যায়। আর সেই কনফিউশন দূর করার জন্য মোটর/ইঞ্জিনের ক্ষমতাকে কিলোওয়াটের পাশাপাশি হর্স পাওয়ারেও প্রকাশ করা হয়। এখন জানা জরুরি যে, এই হর্স পাওয়ার এবং কিলোওয়াটের সাথে গাণিতিক সম্পর্ক নিরুপণ করলেন কে? চলুন এ ব্যাপারে আলোচনা করা যাক।

জেমস ওয়াট নামে এক স্কটিশ ইঞ্জিনিয়ারের কারণে ইঞ্জিন শক্তিটি ‘অশ্বশক্তি’ বা হর্স পাওয়ারে পরিমাপ করা হয়। জেমস ওয়াটের পর্যবেক্ষণ অনুসারে, প্রতি মিনিটে 1 হর্স পাওয়ার = 33,000 ফুট -পাউন্ড/মিনিট। হর্সপাওয়ারের এই মান স্পষ্টভাবে পুরোপুরিভাবে নির্ভূল ছিল না, তবে এই মান ব্যবহার করেই পাওয়ারের হিসেব কার্য চলছিল। জেমস ওয়াট আবিষ্কার করে নিলেন স্টিম ইঞ্জিন। এটি জানা দরকার যে ওয়াটের স্টিম ইঞ্জিন একটি ঘোড়ার চেয়ে 5 গুণ বেশি কাজ করতে পারত। জেমস ওয়াটের এই হিসেবের পেছনে আবার একটি গল্প লুকিয়ে আছে। চলুন গল্পটি শুনে ফেলা যাক।

জেমস ওয়াটের ঘোড়ার গল্প

গল্পে দেখা যায় যে, ওয়াট একটি কয়লা খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের কাজ পর্যবেক্ষণ করছিলেন এবং তিনি ঘোড়া থেকে পাওয়া শক্তি নিয়ে গবেষণার উপায় খুজছিলেন। তিনি দেখতে পান যে, গড়ে একটি ঘোড়া এক মিনিটে 22,000 ফুট-পাউন্ড কাজ করতে পারে। তারপরে তিনি এই সংখ্যাটি 50 শতাংশ বাড়িয়েছিলেন এবং এক মিনিটের মধ্যে হর্স পাওয়ারের পরিমাপটি 33,000 ফুট-পাউন্ডে নির্ধারণ করেছিলেন। এটিই হল ইঞ্জিনের পাওয়ার পরিমাপের সেই ইউনিট যা শতাব্দীর পর শতাব্দী পেরিয়ে গেছে এবং এখন আপনার গাড়ীর ইঞ্জিন, টাওয়ার ক্রেনের মোটর এসব ক্ষেত্রে প্রদর্শিত হচ্ছে।

হর্সপাওয়ার এর হিসেব
হর্সপাওয়ার এর হিসেব

জেমস ওয়াটের বিচারে, একটি ঘোড়া প্রতি মিনিটে 33,000 ফুট-পাউন্ড কাজ করতে পারে। সুতরাং, উপরের চিত্রে দেখানো একটি কয়লা খনি থেকে একটি ঘোড়ার কয়লা উত্তোলন কল্পনা করুন। 1 হর্সপাওয়ার ব্যবহারকারী একটি ঘোড়া এক মিনিটে 330 পাউন্ড কয়লা 100 ফুট বা এক মিনিটে 33 পাউন্ড কয়লা এক হাজার ফুট বা এক মিনিটে 1,000 পাউন্ড কয়লা 33 ফুট থেকে উত্তোলন করতে পারে। আপনার পছন্দ মতো ফুট এবং পাউন্ডের যে কোনও সংমিশ্রণ তৈরি করতে পারেন। যতক্ষণ না পণ্যটি এক মিনিটের মধ্যে 33,000 ফুট-পাউন্ড হয় ততক্ষণ এক হর্সপাওয়ার ব্যবহার হবেনা।

আরো কিছু আর্টিকেল

মোটরের আর পি এম উঠানামা করার কারণ কি? | RPM

একটি জেনারেটর কখন মোটর হিসেবে কাজ করবে? | জেনারেটরের রহস্য

কিভাবে ট্রান্সফরমার পোলারিটি টেস্ট করতে হয়?