ব্যাংক এ টি এম মেশিন (ATM) কিভাবে কাজ করে?

বর্তমান যুগ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের গতি চিতাবাঘের চেয়েও দ্রুত গতিসম্পন্ন। তাই প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলাটা বেশ কষ্টসাধ্য। তারপরেও মানুষ থেমে নেই। নিত্যদিনের বিভিন্ন কার্যাবলিতে ব্যবহার করছে ডিজিটাল প্রযুক্তি। এ টি এম মেশিনও তার বাইরে নয়।

অর্থ আমাদের জীবন পরিচালনার এক বিশেষ হাতিয়ার। মানুষ তার উপার্জিত অর্থ বিভিন্ন ব্যাংকে জমা রাখে। বর্তমানে ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট এবং ক্লায়েন্টের মধ্যবর্তী লেনদেনেও ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোয়া লেগেছে।

এখন প্রয়োজনে টাকা তুলতে ব্যাংকে যাওয়া লাগেনা। দেশের যেকোন জায়গার সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বুথ থেকে আপনি টাকা তুলতে পারবেন এ টি এম মেশিনের সাহায্যে। তাই আজ এ টি এম মেশিন কিভাবে কাজ করে সে বিষয়ে আলোকপাত করতে ইচ্ছুক।

এ টি এম মেশিন কি? কবে থেকে চালু হয়?

এ টি এম (ATM)-এর পুরো নাম হল Automated Teller Machine। এছাড়াও এটি বিভিন্ন দেশে Automated cash Machine, banking Machine, Cashpoint, Cashline নামেও পরিচিত। ব্যাংক লেনদেনের নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে। সাধারণত ১০.০০ টা থেকে ৪.০০ টা পর্যন্তই খোলা থাকে।

কিন্তু হঠাৎ করে রাতের ১২টায় আপনার টাকার দরকার হল। এ সময় কি করবেন? এই অসুবিধার কথা মাথায় রেখেই চালু হয় এ টি এম ব্যবস্থা।

এই ব্যবস্থা কখন চালু হয়?

১৯৬১ সালে আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরের City Bank of New York-এ প্রথম এটিএম মেশিন স্থাপিত হয়। কিন্তু সাধারণ মানুষ তখনও প্রযুক্তির ওপর এতটা নির্ভরশীল না থাকায় খুব কম মানুষই এই এটিএম মেশিন ব্যবহার করেছেন। তাই মাসখানেক পরেই বন্ধ করে দেয়া হয় এটিএম ব্যবস্থা।

কিন্তু এরপরেও এই মেশিন প্রযুক্তি হাল ছাড়েনি। কাস্টমারদের মন জয় করেই নিল। ১৯৬৭ সালে লন্ডন শহরের Barclays Bank-এ আবার স্থাপন করা হয় এটিএম মেশিন। এরপর থেকে এই প্রযুক্তির জয়গান শুরু হতে থাকে।

এ টি এম মেশিন কিভাবে কাজ করে?

এ টি এম সুবিধা ভোগ করার জন্য ব্যাংক তার ক্লায়েন্টদের একটি এ টি এম কার্ড দিয়ে থাকে। এটিএম মেশিনগুলো একটি সুশৃঙ্খল নেটওয়ার্ক টপোলজিতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সাথে যুক্ত থাকে।

যার ফলে এ টি এম কার্ড প্রবেশ করালে ক্লায়েন্টের একাউন্ট সম্পর্কিত তথ্য সহজেই চলে আসে এটিএম মেশিনে। এখন ব্যাপারটা যখন টাকার তখন সিকিউরিটি সিস্টেম অবশ্যই থাকবে।

প্রত্যেক ক্লায়েন্টের কাছে তাঁর জন্য নির্ধারিত বিশেষ একটি PIN নম্বর থাকে। কার্ড প্রবেশ করানোর পর এটিএম মেশিনে সেই নম্বরটি টাইপ করতে হয়। এই ব্যবস্থার কারণে কারও কার্ড হারিয়ে গেলে অন্য কেউ সেই কার্ড ব্যবহার করে টাকা তুলতে পারবে না। এই পাসওয়ার্ড আপনার জন্য আলিবাবার গুহার দরজা খোলার মন্ত্রের মত।

সঠিক PIN নম্বর প্রবেশ করানোর পর প্রয়োজনীয় টাকার অংক টাইপ করতে হয়। ঐ পরিমাণ টাকা যদি ক্লায়েন্টের একাউন্টে থাকে, তাহলে এটিএম মেশিন মুহূর্তেই ৫০০ বা ১০০০ টাকার নোটে ঐ অংকের টাকা বের করে দেয়।

এ টি এম মেশিন কি কি নিয়ে গঠিত?

এ টি এম মেশিন
এ টি এম মেশিন

একটি এটিএম মেশিন সাধারণত নিম্নোক্ত অংশগুলো নিয়ে তৈরি হয়ঃ

CPU

এটিএম মেশিনের মূল তথ্য সংগ্রহকারী অংশ। একে এ টি এম মেশিনের মস্তিষ্ক বলা যায়।

Magnetic Card Reader

এর সাহায্যে প্রবেশকৃত কার্ড সংশ্লিষ্ট ক্লায়েন্টের কিনা তা পরখ করে নেয়া হয়।

PIN PAD

এটি অনেকটা ক্যালকুলেটর বা ল্যাপটপের কি-প্যাডের মতো দেখতে PIN Pad-এ টাইপ করে PIN নম্বর দিতে হয়।

Display

ডাটা প্রদর্শন করার জন্য মনিটর। HMI বা বাটন সিস্টেমে ইউজার ইনপুট দেয়ার সারফেস হল ডিসপ্লে।

Function Key Buttons

ডিসপ্লের পাশে থাকা কিছু বাটন যেগুলোতে প্রেস করে ব্যাংকিং ব্যবস্থার বিভিন্ন অপশন বেছে নেয়া যায়।

Record Printer

লেনদেনের তথ্য সংরক্ষণের জন্য এর সাহায্যে ক্লায়েন্টকে লেনদেনের তথ্যসম্বলিত কাগজ দেয়া হয়।

Vault

এটিএম মেশিনের যে সংরক্ষিত অংশে টাকা রাখা হয়।

Sensor & Indicator

এছাড়াও এতে সেন্সর এবং ইন্ডিকেটর থাকে যা ক্লায়েন্টের ডিমান্ড বুঝতে এবং তাকে নির্দেশনা দিতে সাহায্য করে।

আরো কিছু আর্টিকেল

সি এন সি (CNC) মেশিন নিয়ে সহজ ভাষায় আলোচনা

আমাদের যে সমস্ত ভূলের কারণে মেশিনের আয়ু কমে যায়

1G, 2G, 3G, 4G বলতে কি বুঝায়? এদের মধ্যে পার্থক্য কি?