ভোল্টেজ এবং কারেন্ট এই দুই মহোদয়কে নিয়ে যতই গবেষণা করা হোক না কেন সেটা কম হবে। আমরা ছাত্রাবস্থায় অনেকেই আমরা ভোল্টেজ কারেন্ট নিয়ে প্রিলিমিনারি কনসেপ্ট ক্লিয়ার করতে পারিনা। পরবর্তীতে যখন সুইচগিয়ার সিস্টেম, পাওয়ার সিস্টেমের মত বিশাল কোর্স তাদের সামনে আসে তখন নাকানিচুবানি খেয়ে যায়। তাই ভোল্টেজ কারেন্ট নিয়ে যত খুঁটিনাটি জানা যায় ততই শ্রেয়। আজ ভোল্টেজ কারেন্ট নিয়ে এমন কিছুই মজার এবং বিচিত্র প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করব যা আপনাদের ভোল্টেজ কারেন্টের বেসিক ধারণাকে শাণিত করবে।
Voltage কে V দিয়ে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু Current কে C দিয়ে প্রকাশ না করে i দিয়ে প্রকাশ করা হয় কেন?
C দিয়ে আমরা আরেকটি instrument বুঝি যেটা হল Capacitor এর ক্যাপাসিট্যান্স। তাই সবার যেন ভ্রান্তি না ঘটে সেজন্য i দিয়ে প্রকাশ করা হয়। এত লেটার থাকতে i কেন?? আসলে i নেয়া হয়েছে Current Intensity এর Intensity শব্দটি থেকে।
কারেন্ট প্রবাহিত হলেও ভোল্টেজ প্রবাহিত হয়না কেন?
ভোল্টেজ কারেন্ট নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নগুলোর মধ্যে এই প্রশ্নটি খুব মজার। এ প্রশ্নের উত্তর বুঝতে হলে আগে সুন্দর একটি উদাহরণ দিতে চাই।
ধরুন, শীতের শিশিরভেজা মনোরম সকালে আপনি সুন্দর গ্রাম বাংলার মেঠো পথ ধরে হাটছেন। যদি প্রশ্ন করা হয় আপনি কিভাবে হাঁটছেন? আপনি হাটার কারণ হল আপনি আপনার মধ্যে সঞ্চিত শক্তি ব্যবহার করে ভূমির সাথে ঘর্ষণ এড়িয়ে যেতে পারছেন। তাই সুন্দরভাবে আপনি হেটে বেড়াতে পারছেন। এখন যদি রাস্তাটা মসৃণ না হয় আপনার শক্তি ড্রপ (অপচয়) হবে এবং হাঁটার গতিও হ্রাস পাবে ক্রমানুসারে। এখানে আপনার দেহের শক্তিকে ভোল্টেজের সাথে এবং আপনার পথ চলা কে কারেন্টের সাথে এবং আপনাকে যদি ইলেকট্রনের সাথে তুলনা করে দেখেন তাহলে ব্যপারটা আপনার কাছে ক্লিয়ার হতে বাধ্য।
তাই ভোল্টেজ হল প্রেসার বা ফোর্স যা ইলেকট্রনকে পরিবাহী থেকে বিচ্যুত করে প্রবাহিত করতে সাহায্য করে। তাই ভোল্টেজ প্রবাহিত হচ্ছে এই কথাটি যথেষ্ট বেমানান এবং সঠিক লাগছেনা।
ভোল্টেজ ড্রপ শব্দটি ব্যবহার হলেও, কারেন্ট ড্রপ কথাটি কেন ব্যবহার হয় না?
এই প্রশ্নের উত্তরটিও পূর্বে উল্লেখিত উপমার মাঝে লুকায়িত। রাস্তাটা যখন অমসৃণ হবে তখন সেই রাস্তা পাড়ি দিতে আপনার দেহে মজুত শক্তি অনেক ড্রপ বা খরচ হবে। যেটাকে পরিবাহী থেকে ইলেকট্রনকে স্থানচ্যুত করতে দরকারি শক্তি বা ভোল্টেজের সাথে সামঞ্জস্য করা যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে অমসৃণ পথে আপনার চলমান ক্রিয়া শ্লথ হলেও সেটা চলমান। একইভাবে পরিবাহীতে ইলেকট্রনের চলাচল বা বিদ্যুৎ প্রবাহের ক্ষেত্রে ড্রপ ব্যবহার না করাই শ্রেয়।
E = IR এবং V = IR কি একই জিনিস?
অনেকেই E = IR এবং V = IR সূত্র দুটো ঘুলিয়ে ফেলি। আসলে দুটি ফর্মূলায় ভিন্নতায় আছে।
- E হচ্ছে সোর্সের ভোল্টেজ আর V হচ্ছে সার্কিট এর রোধসমূহে ভাগ হয়ে যাওয়া ভোল্টেজ।
- E = IR সূত্রের মাধ্যমে সোর্স ভোল্টেজ পেতে হলে সার্কিটের মোট কারেন্ট তার মোট রোধ দিয়ে গুণ করতে হবে।
- V = IR সূত্রের মাধ্যমে নিদিষ্ট কোন রোধে ভাগ হওয়া ভোল্টেজ পেতে হলে ঐ রোধের মধ্যে প্রবাহিত কারেন্ট এবং সংশ্লিষ্ট রোধটির মান দিয়ে গুণ করতে হবে। E মূলত E.M.F এর সংক্ষিপ্ত রুপ। যার পূর্ণরুপ হল Electromotive Force।
কারেন্ট যদি ইলেকট্রনের প্রবাহই হয় তাহলে পরিবাহীর ইলেকট্রন ফুরিয়ে যায়না কেন?
আমরা জানি, পরিবাহী পদার্থের পরমাণুর মধ্যে মুক্ত ইলেকট্রন বিদ্যমান। আর পরিবাহী মানে অসংখ্য পরমাণুর আধার। আর অসংখ্য পরমাণু মানেই ইলেকট্রনের মহাসাগর। মহাসাগরের থেকে একশত বালতি পানি তুলে নিলেও মহাসাগরের পানির গভীরতার পরিবর্তন বোঝা সম্ভব না। কারণ মহাসাগরের পানির তুলনায় একশত বালতি পানি খুবই নগণ্য। একইভাবে পরিবাহীর ইলেকট্রন মহাসাগর থেকে পুনঃ পুনঃ ইলেকট্রন বিচ্যুত হলেও তা ফুরিয়ে যাবেনা।
V = IR এবং P = IV এর মধ্যে কখন কোনটি ব্যবহার করব? সূত্রদুটো কি সাংঘর্ষিক নয়?
সূত্র দুটো সাংঘর্ষিক নয় বরং তাদের প্রয়োগের ক্ষেত্রে ভিন্নতা এবং শর্ত রয়েছে। যেমনঃ
- যে সমস্ত ডিভাইসের লিনিয়ার অর্থাৎ যে সমস্ত ডিভাইসে ভোল্টেজ এবং কারেন্ট পরিবর্তিত হলেও তাদের অনুপাত সর্বদাই ধ্রুব সংখ্যা সে সমস্ত ডিভাইসের ক্ষেত্রে V = IR এই ফর্মূলা প্রযোজ্য। যেমনঃ ডিসি সোর্স সংশ্লিষ্ট পিউর রেজিস্টিভ লোড।
- যে সমস্ত ডিভাইস নন-লিনিয়ার অর্থাৎ যে সমস্ত ডিভাইসে ভোল্টেজ এবং কারেন্ট পরিবর্তিত হলে তাদের অনুপাত সর্বদাই এক থাকেনা তাদের ক্ষেত্রে P = IV এই সূত্র প্রযোজ্য। যেমনঃ ট্রান্সফরমার এবং অন্যান্য ইন্ডাক্টিভ, ক্যাপাসিটিভ লোড।
Voltage এবং Current নিয়ে আরো কিছু পোস্ট
ভোল্টেজ এবং কারেন্ট নিয়ে কনফিউশন? ভোল্টেজ ও কারেন্ট গল্পের ছলে পড়ে নিন