প্রতিটি পাওয়ার প্ল্যান্টের যেমন কিছু সুবিধা রয়েছে তেমনই কিছু অসুবিধাও রয়েছে। তদ্রুপ হাইড্রো-ইলেকট্রিক পাওয়ার প্ল্যান্টেরও বেশ কিছু সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছ। নিচে তা উল্লেখ করা হলো-
সুবিধা সমূহঃ
- হাইড্রোইলেকট্রিক পাওয়ার প্ল্যান্টে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য যেহেতু সঞ্চিত পানি ব্যবহার করা হয় সেহেতু এখানে অন্য কোন জ্বালানীর প্রয়োজন হয় না।
- এই পাওয়ার প্ল্যান্ট খুবই পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন (Neat and Clean) এবং এই প্ল্যান্ট হতে কোন ধোঁয়া বা ছাই উৎপন্ন হয় না।
- যেহেতু এই পাওয়ার প্ল্যান্ট বসত এলাকা থেকে দূরে বা পার্বত্য অঞ্চলে স্থাপন করা হয় সেহেতু জমির মূল্য কম হয় এবং নির্মাণকালীন বা পরবর্তী সময়ে জনসাধারণের কোন অসুবিধা হয় না।
- অন্যান্য পাওয়ার প্ল্যান্টের তুলনায় এর নির্মাণ কৌশল তুলনামূলকভাবে অনেক সহজ এবং এর রক্ষণাবেক্ষণও কম লাগে।
- এই পাওয়ার প্ল্যান্ট চালু করতে স্টিম পাওয়ার প্ল্যান্টের মতো দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয় না, তাৎক্ষণিকভাবেই চালু করা যায়।
- এই পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মানের সময় highly skilled ইঞ্জিনিয়ার প্রয়োজন হলেও নির্মাণের পর অল্প কয়েকজন অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা সম্পূর্ণ পাওয়ার প্ল্যান্টটি পরিচালনা করা যায়।
- এতে ব্যবহৃত ইউনিট সমূহের উৎপাদন ক্ষমতা অনেক বেশি।
- পানির উচ্চতা ও প্রবাহ বেশি থাকলে অনেক বেশি বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করা যায় যার ফলে উৎপন্ন প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ শক্তির মূল্য অনেক কম হয়।
- এই জাতীয় পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন ছাড়াও সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে থাকে।
- এই পাওয়ার প্ল্যান্ট খুবই মজবুত এবং এর স্থায়ীকাল প্রায় ৪৫ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত হয়।
- যেহেতু এই পাওয়ার প্ল্যান্ট হতে তাৎক্ষনিক কোন দুর্ঘটনার সম্ভবনা নেই সেহেতু ইচ্ছে করলে দর্শনার্থীরা খুব কাছ থেকে উপভোগ করতে পারেন।
অসুবিধা সমূহঃ
- হাইড্রোইলেকট্রিক পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করতে উচ্চ মূলধনের প্রয়োজন হয়।
- এর বাঁধ নির্মাণ খরচ অনেক বেশি এবং খুব ভালো মানের বাঁধ নির্মাণ করা আবশ্যক।
- প্রচুর পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদিত না হলে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।
- খরস্রোতা বা পানির অত্যাধিক চাপ বিশিষ্ট পানি অঞ্চল ছাড়া এই পাওয়ার প্ল্যান্ট চালানো সম্ভব না। আবার বিদেশ হতে পানি আমদানি করা একটি অচিন্ত্যনীয় ও অবাস্তব ব্যাপার।
- যেহেতু বিপুল পরিমাণ জমি নিয়ে এর বাঁধ তৈরি করা হয় সেহেতু এই জমিটুকুর প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়।
- বড় বাঁধ নির্মাণের ফলে গুরুতর ভূতাত্ত্বিক ক্ষতি হতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হুভার বাঁধ (Hoover Dam) নির্মাণের ফলে পৃথিবীতে বেশ কয়েকটি ভূমিকম্প শুরু হয়েছিল এবং পৃথিবীর উপরিভাগকে তার অবস্থান হতে অবনমিত করেছিল।
- সচরাচর এই পাওয়ার প্ল্যান্ট কেন্দ্রীয় ও মূল শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে সর্বত্র ব্যবহৃত হওয়ায় এর কোন ইউনিট স্থানান্তর করা যায় না এবং সাময়িকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ করা বেশ অসুবিধাজনক।
- যেহেতু এই পাওয়ার প্ল্যান্ট পার্বত্য অঞ্চলে পানির উৎসের কাছে স্থাপন করা হয় সেহেতু ভোক্তাদের নিকট বিদ্যুৎ সেবা পৌঁছাতে অন্যান্য পাওয়ার প্ল্যান্টের তুলনায় অনেক বেশি খরচ হয় ও দীর্ঘ ট্রান্সমিশন লাইনের প্রয়োজন হয়।
- হাইড্রোইলেকট্রিক পাওয়ার প্ল্যান্ট করতে অনেক বেশি যোগ্যতা সম্পন্ন ও দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার প্রয়োজন পড়ে।
- এই পাওয়ার প্ল্যান্টের উৎপাদন ক্ষমতা দিন দিন কমতে থাকে।
References: Technology Student Principles of Power system by V. K. Metha & Rohit Metha
অন্যান্য লেখাসমূহঃ
পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইতিহাস ও সংক্ষিপ্ত আলোচনা।
পাওয়ার প্ল্যান্ট: সংজ্ঞা, প্রকারভেদ ও কার্যপদ্ধতি সম্বন্ধে পড়ুন।
পাওয়ার প্লান্টে টারবাইন নির্বাচন প্রক্রিয়াসম্বন্ধে পড়ুন।
ইলেকট্রিক্যাল এনার্জির প্রাথমিক উৎসগুলো সম্বন্ধে আলোচনা।