মোবাইল ফোন কিভাবে বোঝে যে ব্যাটারিতে কত চার্জ হল?
এই ব্যাপারটি বুঝতে হলে আপনাকে নিয়ে যেতে চাই আপনার অফিসে। আপনার অফিসে আপনার উপরে বস থাকে। অফিসের যাবতীয় ফাইলপত্র, ইনফরমেশন বসের কাছেই আপনাকে হস্তান্তর করতে হয়। তারপর বস সেই অনুযায়ী অফিসের কাজকর্মের চলমান অবস্থা মালিককে জানায়। এই প্রশ্নের উত্তরটির সাথে এই বাস্তবিক উদাহরণের যথেষ্ট সামঞ্জস্যতা রয়েছে। মোবাইলফোনে সাধারণত লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়। লিথিয়ামের ক্ষেত্রে একটি সুনিয়ন্ত্রিত এলগরিদমের সাহায্যে এই কাজটি করা হয়।
আর এই কাজের জন্য ফুয়েল গেজ ব্যবহার করা হয়। ফুয়েল গেজের সাথে এমপ্লিফায়ারসহ একটি কারেন্ট শান্ট থাকে যা ব্যবহারের মাধ্যমে কারেন্ট পরিমাপ করা হয় এবং সময়ের সাথে সাথে এটির যোগফল দেয় এবং প্রোগ্রামযুক্ত ব্যাটারির ক্ষমতার সাথে তুলনা করে।
ফুয়েল গেজ ব্যাটারির ইম্পিড্যান্স মাপার চেষ্টা করে। লিথিয়াম ব্যাটারির প্রত্যেকটি স্টেজে এই ইম্পিড্যান্সের আলাদা আলাদা মান পাওয়া যায়। সেই মান এলগরিদমের সাহায্যে ক্যালকুলেশন করে পারসেন্টেজে দেখানো হয়।
সাধারনত ফুয়েল গেজের নিজস্ব তাপমাত্রা পরিমাপক বা সেন্সর থাকে। তাপমাত্রাজনিত নানা রিপোর্ট দেয়ার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়।
আর এই ফুয়েল গেজ থেকে ইনফরমেশন চলে যায় মোবাইলের অপারেটিং সিস্টেমের কাছে। এখানে ফুয়েল গেজ হল আপনি এবং অপারেটিং সিস্টেম হল আপনার বস। অপারেটিং সিস্টেমে থাকা বিভিন্ন কন্ডিশন অনুযায়ী আপনি নানা ধরনের স্ট্যাটাস দেখতে পান। যেমন: লো-ব্যাটারি, ফুল চার্জড, ওভারহিটেড ইত্যাদি। যেমনটি কোম্পানির মালিক আপনার বসের কাছ থেকে তথ্যাদি নিয়ে কোম্পানির চলমান অবস্থা পর্যবেক্ষণে রাখেন। আবার অনেক সময় অপারেটিং সিস্টেম ব্যাটারি স্ট্যাটাস অনুযায়ী কিছু সার্ভিস অন অফ করে নেয়। যেমনটি কোম্পানির বস চাইলেই যেকোন প্রজেক্ট বা এসাইনমেন্ট আপাতত স্থগিত রাখতে পারেন।
স্মার্টফোনের ব্যাটারি কত mAh হলে সবচেয়ে ভালো?
কথায় আছে, মিষ্টি বেশি খেলেও এক সময় তা তেতো হয়ে যায়। হ্যাঁ এটাই মূল সমস্যা। বর্তমানে স্মার্টফোনে লিথিয়াম আয়ন এবং লিথিয়াম পলিমার ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়। এই ব্যাটারির সমস্যা হলো ক্যাপাসিটি বাড়ার সাথে সাথে এগুলো ভারী এবং আকারে বড় হতে থাকে। ৫০০০ mAh একটি ব্যাটারি আপনার ফোনে থাকলে মাঝারি ব্যবহারে আপনার সারাদিন চলে যাবে। অতিরিক্ত ব্যবহার করলেও ৯ – ১২ ঘণ্টা ব্যাকআপ পাওয়া উচিত। কিন্তু সেই ফোনটি যথেষ্ট ভারী হবে। যেহেতু স্মার্টফোন হাতে রেখে ব্যবহার করা হয় তাই এগুলো বেশি ভারী হলে ব্যবহার করা কষ্টকর হবে। এজন্য ক্যাপাসিটি এবং ওজনের মধ্যে একটা সামঞ্জস্য রেখে ব্যাটারি ডিজাইন করা হয়।
তবে সেই সাথে আরো অনেক কিছু দেখা হয় যেমন স্ক্রিন টাইপ এবং সাইজ, SoC (state of charge) এবং RAM ইত্যাদি। অনেক সময় SoC অনেক power efficient হয়। সেক্ষেত্রে ২৫০০ mAh ব্যাটারি দিয়েও সারাদিন ব্যাকআপ পাওয়া যায়। আবার ডিসপ্লে AMOLED (Active Matrix Organic Light Emitting Diodes) হলেও ব্যাটারি সেইভ হয়।
ফোনের অপারেটিং সিস্টেম ও অনেক জরুরি ভূমিকা পালন করে ব্যাটারি সেভিং এর ক্ষেত্রে। এমন আরো অনেক ব্যাপার আছে সবকিছুর উপর নির্ভর করেই ব্যাটারি নির্বাচন করা হয়।
সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, মূল ব্যাপার এখানে ব্যাটারির টোটাল ক্যাপাসিটি না। অনেকগুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করে ব্যাটারি কতক্ষণ ব্যাকআপ দিবে।
একটা ৩০০০ mAh ব্যাটারি একবার ফুল চার্জ করতে কত টাকার বিদ্যুৎ খরচ হয়?
ধরুন, ব্যাটারির রেটিং দেখে বোঝা যাচ্ছে এটি ৩০০০ মিলি এম্পিয়ার বা ৩ অ্যাম্পিয়ার করে বিদ্যুৎ ১ ঘন্টা সরবরাহ করতে পারে।
আমরা জানি, ব্যাটারির চার্জিং কারেন্ট তার চার্জিং ক্যাপাসিটির ১০%। ৩০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি চার্জ করতে হলে ন্যুনতম ৩০০০ x ০.১ = ৩০০ মিলি অ্যাম্পিয়ার কারেন্ট দিয়ে চার্জ করতে হবে।
অর্থাৎ, পূর্ণ চার্জ হতে সময় লাগবে, t= Q/I = ৩০০০ / ৩০০ = ১০ ঘন্টা
বিদ্যুৎ বিলের হিসেব করতে হলে ইউনিট সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে, কিলোওয়াট-ঘন্টা কে ইউনিট বলা হয়। অর্থাৎ, এক কিলোওয়াট বৈদ্যুতিক ক্ষমতা এক ঘন্টা ব্যবহৃত হলে এর পরিমাণ কে এক ইউনিট বলে।
তাহলে ব্যাটারি পূর্ণ চার্জ হতে কত ইউনিট খরচ হয়?
চার্জারের সরবরাহকৃত ভোল্টেজ যদি ৫ ভোল্ট হয় এবং কারেন্ট ৩০০ মিলি অ্যাম্পিয়ার বা ০.৩ অ্যাম্পিয়ার হয়, তাহলে চার্জারের ক্ষমতা,
P = IV = ৫ ভোল্ট x ০.৩ অ্যাম্পিয়ার = ১.৫ ওয়াট
১.৫ ওয়াট ক্ষমতা ১৪ ঘন্টা ব্যবহারে ব্যাটারিটি পূর্ণ চার্জ হয়। সুতরাং, প্রয়োজন হয়,
W = Pt = ০.০০১৫ কিলো ওয়াট x ১০ ঘন্টা = ০.০১৫ ইউনিট।
বাসা-বাড়িতে ব্যবহৃত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম যদি ৬ টাকা হয় তাহলে,
মোট খরচ = ০.০১৫ x ৬ টাকা = ০.০৯০ টাকা বা, ৯ পয়সা।
প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ১০ টাকা করে হলে,
খরচ হবে, ০.০১৫ x ১০ = ০.১৫ টাকা বা, ১৫ পয়সা।
মোবাইলে ফুল চার্জ হলেও বিদ্যুৎ প্রবাহ কি চলতে থাকে ?
এই ধারণাটি পুরোপুরিভাবে ভূল নয় আবার সঠিকও নয়। এই বিষয়টি নির্ভর করে মোবাইলটি কোন কন্ডিশনে চার্জ দেয়া হয়েছে।
যদি মোবাইলটি পাওয়ার অফ করে বা ফ্লাইট অন মোডে চার্জ দেয়া হয়
এই অবস্থায় পুরোপুরিভাবে চার্জ হওয়ার পর সেখানে আর বিদ্যুৎ প্রবাহিত হবেনা। আমরা জানি, দুটি প্রান্তের ভোল্টেজ পার্থক্য থাকলেই কেবল সেখানে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। কিন্তু এখানে সোর্স ও লোডের ভোল্টেজ পার্থক্য শুণ্য। কারণ চার্জারের রেক্টিফায়ার সাপ্লাই দিচ্ছে 4 ভোল্ট এবং আমার ব্যাটারি 4 ভোল্ট।
যদি পাওয়ার অন রেখে, ওয়াইফাই, ডাটা অন রেখে চার্জে দেয়া হয়
সেক্ষেত্রে ব্যাটারি ১০০% চার্জ হলেও বিদ্যুৎ প্রবাহিত হবে। কারণ নেটওয়ার্ক উঠানামায় চার্জ ক্ষয় হওয়ার দরুণ ভোল্টেজ পার্থক্য পুরোপুরিভাবে শূণ্য হয়না। তাই সামান্য পরিমাণে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হবে।
ব্যাটারি নিয়ে আরো কিছু পোস্ট
মোবাইল ব্যাটারির গায়ে লিখা mAh দ্বারা কি বুঝায়?
সেল ও ব্যাটারি সম্বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর যা আপনার জেনে রাখা উচিত