সিরিজে সংযুক্ত দুটো বাতির মধ্যে কোনটি বেশি আলো দিবে? | ভূতুড়ে আলো

তামিম এবং জামিল দুই বন্ধু। সিরিজ-প্যারালাল সার্কিট কানেকশন নিয়ে পড়ার পর তাদের মধ্যে এসব নিয়ে ব্যবহারিক কাজ করার তীব্র ইচ্ছা জন্মাল। একদিন তামিমের আব্বু-আম্মু তাদের এক আত্নীয়ের বাসায় বেড়াতে গেল। তাই তামিম রাতে জামিলকে বাসায় ডেকে আনল। আজ তামিম জামিলের সাথেই থাকবে এবং তারা বৈদ্যুতিক বাতির সিরিজ, প্যারালাল কানেকশন করে দেখবে।

তাই জামিল রাতের বেলায় দুটো বৈদ্যুতিক বাতি নিয়ে তামিমের বাসায় হাজির। বাতি দুটির পাওয়ার যথাক্রমে ৩০ এবং ৬০ ওয়াট। রাতের খাবার সেরেই তারা নেমে গেল কারিগরি কাজ নিয়ে। প্রথমে তারা বাতি দুটোকে প্যারালালে কানেকশন দিল। দুটি বাতিই সমানভাবে আলো দিতে লাগল। কিন্তু যখন সিরিজে কানেকশন দেয়া হল তখন ঘটে বসল এক প্রকার ভূতুড়ে ঘটনা।

কি সেই ভূতুড়ে ঘটনা?

৩০ এবং ৬০ ওয়াটের দুটো বাতি সিরিজে সংযোগ করতেই দেখা গেল ৬০ ওয়াটের বাতিটি মিটমিট করে জ্বলতে শুরু করল যেন রুমে কোন ভূতুড়ে আত্নার আগমন হল। তামিম ব্যাপারটি বুঝতে পারল এবং জামিল বেশ ভয় পেয়ে বসল। তামিম জামিলের অবস্থা দেখে হাসতে লাগল এবং তাকে এই ঘটনার পেছনে কারিগরি ব্যাখ্যা দিল। তারপর জামিল সাহস ফিরে পেল।

এই ঘটনার নেপথ্যে কারিগরি ব্যাখ্যা কি?

কোন বাতি কি পরিমাণ আলো দিবে সেটা নির্ভর করে তার ফিলামেন্ট কি পরিমাণ ভোল্টেজ হজম করে নিচ্ছে। আমরা জানি, ইনক্যান্ডিসেন্ট বাতির ফিলামেন্ট রেজিস্টিভ লোড। আর বাতির পাওয়ার রেটিং যত কম হবে, তার রেজিস্ট্যান্স ততই বেশি থাকে। আর লোড রেজিস্ট্যান্স বেশি হওয়া মানেই তার ভোল্টেজ লুফে নেওয়ার প্রবণতাও বেশি। কি বিলিফ হচ্ছেনা? তাহলে চলুন গাণিতিক ব্যাখ্যার সাহায্যে সমাধান করা যাক।

গাণিতিক ব্যাখ্যা

বাতি এর সিরিজ প্যারালাল কানেকশন
সিরিজ প্যারালাল কানেকশন

জামিলের নিয়ে আসা দুটো ইনক্যান্ডিসেন্ট বাতির পাওয়ার যথাক্রমে ৩০ এবং ৬০ ওয়াট। ধরি, বাতি দুটোর ভোল্ট রেটিং ২৩০ ভোল্ট। তাহলে,

৩০ ওয়াট ক্ষমতাবিশিষ্ট ইনক্যান্ডিসেন্ট বাতির ফিলামেন্টের রোধ R = V*V/P = ২৩০*২৩০/৩০ = ১৭৬৩ ওহম।

৬০ ওয়াট ক্ষমতাবিশিষ্ট ইনক্যান্ডিসেন্ট বাতির ফিলামেন্টের রোধ R = V*V/P = ২৩০*২৩০/৬০ = ৮৮১ ওহম।

উপরোক্ত হিসেব থেকে বোঝা যাচ্ছে, ৩০ ওয়াট ক্ষমতাবিশিষ্ট বাতির ফিলামেন্টের রোধ বেশি। তাই সিরিজে সংযুক্ত অবস্থায় ৩০ ওয়াট ক্ষমতাবিশিষ্ট বাতিটিই বেশি পরিমাণ ভোল্টেজ লুফে নিতে চাইবে। আর ৬০ ওয়াট ক্ষমতাবিশিষ্ট বাতিটি তার অর্ধেক পরিমাণ ভোল্টেজ লুফে নিতে পারবে। এবার তাহলে তাদের হজম করা ভোল্টেজের পরিমাণ হিসেব করে দেখা যাক।

যেহেতু বাতি দুটো সিরিজে সংযুক্ত তাহলে তাদের মোট রোধ হবে = ১৭৬৩ + ৮৮১ = ২৬৪৪ ওহম। যদি সাপ্লাই ভোল্ট ২৩০ ভোল্ট হয়,

৩০ ওয়াটের বাতিটিতে ভোল্টেজ ড্রপের পরিমাণ = ১৭৬৩*২৩০/২৬৪৪ = ১৫৩.৩৬ ভোল্ট।

৬০ ওয়াটের বাতিটিতে ভোল্টেজ ড্রপের পরিমাণ = ৮৮১*২৩০/২৬৪৪ = ৭৬.৬৪ ভোল্ট।

যেহেতু ৩০ ওয়াটের বাতিটির ফিলামেন্টে ভোল্টেজ ড্রপ বেশি তাই এই বাতিটি বেশি পরিমাণ আলো দিবে।

উল্লেখ্য যে কেবলমাত্র সিরিজ সংযোগেই এমন ঘটনাটি ঘটে থাকে। মনে করুন বর্ষার দিন। আপনার বাসায় খিচুড়ি ও গরুর মাংস রান্না হল। আপনি আপনার পেটুক বন্ধুকে দাওয়াত করলেন। আপনি ও আপনার পেটুক বন্ধু খিচুড়ি খেতে বসলেন। তাহলে নিশ্চিত আপনার ভাগে কম পড়বেই। তাই সিরিজ কানেকশনে যার রোধ বেশি সে বেশি ভোল্টেজ লুফে নিতে চাইবেই। কিন্তু প্যারালালে দুটো বাতিই সমান পরিমাণ আলো দিয়ে থাকে। কারণ প্যারালাল সংযোগে দুটো বাতিই ২৩০ ভোল্ট করে লুফে নিবে।

আরো কিছু পোস্ট

সিরিজে সংযুক্ত দুটি ১০০ ওয়াটের বাতির মোট পাওয়ার কত হবে?