রিভার ক্রসিং ট্রান্সমিশন লাইন জলজ প্রাণীদের উপর কিরুপ প্রভাব ফেলে?

অনেকদিন হল নৌকা ভ্রমণে যাওয়া হয়না। তাই সুজন ঠিক করল সে এবং তার বন্ধুরা নৌকা ভ্রমণে যাবে। সে এবং তার বন্ধুরা মিলে কর্ণফুলীতে নৌকা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে রওনা হল। কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে তারা একটি বড় নৌকা ভাড়া করল এবং সবাই মনের আনন্দে কর্ণফুলী নদীর মাঝে নৌকা দিয়ে ঘুরতে লাগল। ঘুরতে ঘুরতে সুজন লক্ষ্য করল নদীর মধ্য দিয়ে এক্সট্রা হাই ভোল্টেজের ট্রান্সমিশন লাইন দাঁড়িয়ে আছে। আহ! কি চোখ জুড়ানো দৃশ্য! ট্রান্সমিশন লাইন দেখতে দেখতে হঠাৎ করেই তার মাথায় একটি প্রশ্ন এল। এই পাওয়ার লাইনগুলো কর্ণফুলীতে বসবাসকারী জলজ প্রানীদের উপর কিরুপ প্রভাব ফেলবে? জি, আজ মূলত এই মজাদার টপিক নিয়েই আলোচনা করতে এসেছি। চলুন শুরু করা যাক।

রিভার ক্রসিং ট্রান্সমিশন লাইন জলজ প্রাণীদের উপর কিরুপ প্রভাব ফেলে?

বিজ্ঞান কেবল মানবদেহের উপর বিদ্যুতের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেই ক্ষান্ত নয়। বিদ্যুৎ পরিবেশের অন্য প্রানীদের উপরও বিদ্যুতের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেছে। রিভার ক্রসিং ট্রান্সমিশন লাইন, সাবমেরিন পাওয়ার লাইন প্রভৃতির জলজ প্রাণীদের উপর প্রভাবে ফেলতে পারে।

বিদ্যুৎ এবং জলজ প্রাণী

কোন মানুষকে যদি চোখ বেঁধে একটি ট্রান্সমিশন লাইনের সামনে নিয়ে যাওয়া হয় তাহলে বুঝতেই পারবে না তার সামনে বিশালকৃতির ট্রান্সমিশন লাইন আছে বা হাই ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু জলজ প্রানীদের দেহে এক ধরনের হাই ভোল্টেজ সেন্সর থাকে। যাকে বলা হয় ইলেকট্রোরিসিপ্টর।

মাছের ট্রান্সমিশন লাইন সেন্সিং প্রসেস
মাছের ট্রান্সমিশন লাইনের ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড সেন্সিং প্রসেস

বিশেষ করে সামুদ্রিক প্রাণীরা অনেক দূর বা গভীরতা থেকেই এক্সট্রা হাই ভোল্টেজের অস্তিত্ব টের পায়৷ সাম্প্রতিক গবেষণায় এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। সমুদ্রের নীচে পাতানো হাই ভোল্টেজ ক্যাবল বা ট্রান্সমিশন টাওয়ার থেকে তারা সর্বদাই একটি দূরত্ব বজায় রাখে। তাই আপনি রিভার ক্রসিং ট্রান্সমিশন লাইনের কাছাকাছি কোন জলজ প্রাণীর হদিস পাবেন না। আর মানবদেহের মত জলজ প্রাণীদের দেহেও বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে পারে। এমনকি বিদ্যুতের শক লেগে তাদের মৃত্যুও হতে পারে।

কখনও লক্ষ করেছেন কিনা জানিনা পুকুরের মধ্যে হাইভোল্টেজের পাওয়ার লাইন পড়ার পর মৃত মাছ ভেসে উঠতে। পাওয়ার লাইনের সঞ্চালিত বিদ্যুৎ, পুকুরের পরিবাহী পানি, মাছের পরিবাহী দেহ, এবং পুকুরের তলদেশ সব মিলিয়ে একটি বৈদ্যুতিক বর্তনী সম্পন্ন হয়েছে। এখানে পাওয়ার সোর্স ছিড়ে যাওয়া লাইন, পরিবাহী হল অবিশুদ্ধ পানি, লোড হল মাছ এবং গ্রাউন্ড হল পুকুরের তলদেশ। খুব ইন্টারেস্টিং না? ব্যাপারটি কখনো কি এভাবে ভেবে দেখেছেন? তবে স্মার্ট গ্রীড সিস্টেমে লাইন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হতে পারে। ইলেকট্রিসিটি ভ্রমণের জন্য সর্বদাই গমণযোগ্য পথ খুজে। শুধু তাই নয় সেই পথে প্রবেশের পর তা কিভাবে বের হবে সেই রাস্তাও খুজে। আর তার বের হওয়ার রাস্তাকেই আমরা গ্রাউন্ড, নিউট্রাল বিভিন্ন নামে চিনে থাকি।

রিভার ক্রসিং পাওয়ার লাইন এবং জলজ প্রাণীর যোগসূত্র নিয়ে আর্টিকেলটি নিশ্চয় অনেক উপভোগ করেছেন। ভোল্টেজ ল্যাব প্রতিদিন নতুন নতুন অদেখা আর্টিকেল নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হবে ইনশাল্লাহ। তাই আমাদের সাথেই থাকুন। আপনাদের উৎসাহই আমাদের প্রেরণা।

আরো কিছু মজাদার আর্টিকেল

পৃথিবীর দীর্ঘতম ট্রান্সমিশন লাইন নিয়ে কিছু আলোচনা

৫০ কেজি ওজনের কম ব্যক্তি কেন সাবস্টেশনে প্রবেশ করতে পারেনা?

সাবস্টেশনে কেন পাথর ব্যবহার করা হয়?