মুমূর্ষু ব্যক্তিকে কেন ১০০০ ভোল্ট ডিসিতে শক দেয়া হয়? | ভূতুড়ে হাসপাতাল

0
801

শাফায়াত একটি নামকরা বেসরকারি হাসপাতালে ইন্টার্ন ডাক্তার হিসেবে কর্মরত আছে। কাজ শেষে শাফায়াত বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিবে। তখন খুব গভীর রাত। আনুমানিক ১২ঃ৩০ মিনিট। শাফায়াত লক্ষ্য করল, মর্গের রুমের বাতি জ্বলছে। সে অবাক হল এই ভেবে যে, এত রাতে মর্গের রুমে বাতি জ্বলছে কেন? ভাবল মর্গের এটেন্ডেন্ট বাতি নিভাতে হয়ত ভূলে গিয়েছে। সে তখন মর্গের রুমে গেল এবং জানালা দিয়ে দেখল এক ভয়ংকর দৃশ্য।

শাফায়াত দেখল, মর্গের একটি লাশ নাড়াচাড়া করে উঠেছে। সে খুব ভয় পেয়ে গেল এবং ভাবল এটা কোন ভূতুড়ে কারবার! নিশ্চয় হাসপাতালটি ভূতুড়ে কোন হাসপাতাল! তখন সে ভালভাবে লক্ষ্য করে দেখতে পেল, কেউ একজন দাঁড়িয়ে লাশটাকে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করছে। শাফায়াত দৌড়ে পালাতে চাইলেই পেছন থেকে সজোরে ডাক এল। শাফায়াত গলা শুনেই বুঝল এটা তার হাসপাতালের একজন সিনিয়র ডাক্তারের গলা। সে কিছুটা ভীতিমুক্ত হল।

তারপর মর্গের রুমে প্রবেশ করল। শাফায়াত লক্ষ্য করল ডাক্তারটি একটি সুবিশাল ডিসি জেনারেটরের সাহায্যে লাশটির উপর ভোল্টেজের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করছে। শাফায়াত কৌতূহলী হল ব্যাপারটাতে। তাছাড়াও তার মাথায় একটা ব্যাপার এল যে, রোগীর মুমূর্ষু অবস্থাতেও এমনভাবে ডিসি ভোল্টেজের শক দেয়া হয়। এরপর পুরো ব্যাপারটা স্যার থেকে সে বুঝে নিল। আজ এ ব্যাপারেই মূলত আলোচনা হবে। চলুন শুরু করা যাক।

মুমূর্ষু ব্যক্তিকে কেন ১০০০ ভোল্ট ডিসিতে শক দেয়া হয়?

আমরা জানি, হৃদযন্ত্রের SA নোড ইলেকট্রিক্যাল পালস সরবরাহ করে রক্তে অক্সিজেন সঞ্চালন বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি এক ধরনের এপিরিওডিক এসি সিগন্যাল। যখন হার্ট এটাক, টিস্যু ব্লক, কোন দূর্ঘটনার কারণে মানুষের হৃদযন্ত্র ক্ষতিগ্রস্থ হয় তখন হৃদযন্ত্রে ইলেকট্রিক্যাল পালসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ সম্ভব হয়না। ধীরে ধীরে অবস্থা যখন আরো বেগতিক হয় তখন এই পালস জিরো লেবেলে চলে যেতে চায় বা স্ট্রেইট লাইন দেখায়। সেই সময় হাজার ভোল্টের শক দিয়ে আগের অবস্থার পুনরুদ্ধার করার প্রচেষ্টা করা হয়। এই প্রক্রিয়াকে বলে ডিফাইব্রিলেশন। অর্থাৎ জিরো সিগন্যাল থেকে পুনরায় এপিরিওডিক এসি সিগন্যালে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হয়। তবে অবস্থা বেশি বেগতিক হলে এই প্রসেসে কাজ হয়না।

তাহলে মৃতদেহেও কি এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা যাবে?

মৃতদেহেও হাই ভোল্টেজের প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তার মানে এই নয় যে সে বেচে উঠবে। অনেক উদ্ভট মস্তিষ্কের বিজ্ঞানী বা রিসার্চাররা এ নিয়ে অনেক গবেষণা করেছেন। কিন্তু ফলাফল শুধুই মৃতদেহের হালকা নাড়াচাড়া। কি শিহরিত হবার মত কথা তাইনা? আসলে এটি কোন ভৌতিক ব্যাপার না। অতিরিক্ত ভোল্টেজের প্রভাবে মৃতদেহের টিস্যু সিস্টেমের উপর প্রেসার পড়ে। যার দরুন কিছুটা মুভমেন্ট পরিলক্ষিত হতে পারে। কিন্তু প্রাণ ফিরিয়ে আনার ব্যাপারটা রীতিমত অসম্ভব এবং এথিস্ট মেন্টালিটির কাজ বলে আমি মনে করি।

আজকের এই আর্টিকেলটি নিশ্চয়ই আপনাদের অনেক শিহরিত করেছে। ভাল লাগলে কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিন এবং সর্বদা ভোল্টেজ ল্যাবের সাথেই থাকুন।

আরো কিছু মজাদার আর্টিকেল

ব্ল্যাকআউট-ব্রাউনআউট নাকি ভূতুড়ে কারবার?

সাবস্টেশনে ছাতা নিয়ে প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয় কেন?

বাংলাদেশ কিভাবে ভারত থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে আসে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here