ট্রান্সমিশন লাইনে বার্ড ফ্লাইট ডাইভার্টার কেন ব্যবহৃত হয়?

ট্রান্সমিশন লাইন নিয়ে এই পর্যন্ত আমাদের ব্লগসাইটে অনেক আর্টিকেল শেয়ার করা হয়েছে। হয়ত পড়ে পড়ে বিরক্তও হয়ে গেছেন। কিন্তু আজকে একটু ভিন্নধর্মী আর্টিকেল আলোচনা করতে এসেছি। মূল টপিকটি হল বার্ড ফ্লাইট ডাইভার্টার।

ট্রান্সমিশন লাইনগুলো সাধারণত ভূমি থেকে অনেক উপরে হয়। এ যেন বিশালাকৃতির এক বৈদ্যুতিক দানব। এই দানবের উচ্চতা ৫০-২০০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। উচ্চতা বেশি হওয়ায় আকাশে উড়ন্ত পাখিরা এই লাইনের সংস্পর্শে আসাটাই খুব স্বাভাবিক। অনেক সময় ত অবুঝ পাখিগুলো নিজেদের বাসা বানিয়েই বসে থাকে। তারা ত আর জানেনা যে, তাদের কাছেই আছে মৃত্যুকূপ।

ট্রান্সমিশন লাইনে বসে থাকা পাখি
ট্রান্সমিশন লাইনে বসে থাকা পাখি

এখন অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন যে, “পাওয়ার লাইনে ত অনেক পাখিকেই আয়েশি ভঙ্গিমায় বসে থাকতে দেখা যায়। কই তখন ত তাদেরকে শক করেনা?” এই প্রশ্ন যাদের মনে জেগে উঠেছে এবং উত্তর পাবার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন তারা পাখিরা বৈদ্যুতিক তারের উপর বসলে শক খায় না কেন? এই আর্টিকেলটি চট করে পড়ে ফেলুন। অন্যথায়, এই আর্টিকেলটি বুঝতে পারবেন না।

সাধারণত খর্বাকৃতির পাখিদের জন্য বৈদ্যুতিক শক খাওয়ার ঝুকি কম। কিন্তু সব পাখি ত আর খর্বাকৃতির হয়না। বাদুড়, ঈগল, বাজপাখি এরা পাওয়ার লাইনে খুব সহজেই লাইন টু লাইন ফল্ট তৈরি করতে পারে। ফলশ্রুতিতে শর্ট সার্কিট তৈরি হয়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালনে বিঘ্ন ঘটে। আর এরকম বারবার বিঘ্ন ঘটতে থাকলে বিদ্যুৎ গ্রাহকেরা কোম্পানির দপ্তরে গিয়ে অনশন শুরু করে দিতে পারে।

ট্রান্সমিশন লাইন এবং ঈগল পাখি

শুধুমাত্র গ্রাহকের কথা চিন্তা করলেও হবেনা। পাখিরা আমাদের পরিবেশের অংশ। তাদের মৃত্যুতে আমাদের পরিবেশের বায়োডাইভার্সিটিও বিনষ্ট হতে পারে। সেদিকে লক্ষ্য রাখাটাও আমাদের কর্তব্য। একজন প্রকৌশলীকে অনেক দিকেই লক্ষ্য রাখতে হয়। আর এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতেই ব্যবহৃত হয় বার্ড ফ্লাইট ডাইভার্টার।

বার্ড ফ্লাইট ডাইভার্টার ট্রান্সমিশন লাইনের কোথায় সংযুক্ত থাকে?

বার্ড ফ্লাইট ডাইভার্টার
বার্ড ফ্লাইট ডাইভার্টার

ট্রান্সমিশন লাইন কন্ডাক্টরের সাথে বার্ড ফ্লাইট ডাইভার্টার স্ল্যাপ ক্ল্যাম্প দিয়ে সংযুক্ত থাকে। এটি বাতাসের সাথে সাথে দোল খায় এবং পাখি তাড়াতে সাহায্য করে। একে পাওয়ার লাইনের কাকতাড়ুয়া হিসেবে আখ্যা দেয়া যায়।

বার্ড ফ্লাইট ডাইভার্টারের বৈশিষ্ট্য

  • এটি বড় আকারের ডিস্কের মত যার ফলে তা পাখিদের সহজেই সতর্ক করতে পারে।
  • এর মেটাল পার্টে আবহাওয়া এবং আর্দ্রতাজনিত কারণে মরিচা ধরেনা।
  • খুব সহজেই ইন্সটল করা যায়।
  • মেন্টেইনেন্সে খুব একটা খরচ হয়না।
  • ওজনে হালকা
  • রাতের অন্ধকারে আলো বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে পাখি তাড়াতে পারে।
  • বাতাসে খুব সহজেই দোল খেতে পারে।
  • পাওয়ার লাইন কন্ডাক্টরে ভালমানের গ্রিপ তৈরি করতে সক্ষম।
  • সূর্য এবং চাঁদের আলোকে সহজেই প্রতিফলিত করতে পারে।
বার্ড ফ্লাইট ডাইভার্টার

তবে অনেক পাওয়ার ট্রান্সমিশন লাইনে ফ্লাইট ডাইভার্টার ব্যবহারের পরিবর্তে ইন্সুলেটরের সাথে বার্ড গার্ড ব্যবহার করা হয়। আজকের ট্রান্সমিশন লাইন নিয়ে এই ভিন্নধর্মী আর্টিকেলটি কেমন লাগল তা কমেন্ট করে জানান। আগামীতে এরকম আরো আর্টিকেল আপনাদের উপহার দিব ইনশাল্লাহ।

আরো কিছু আর্টিকেল

রাতের বেলায় ট্রান্সমিশন লাইন কিভাবে বৈমানিকের চোখে পড়ে?

ট্রান্সমিশন লাইনে কমলা এবং নীল রঙ এর মার্কার বল থাকে কেন পড়ুন

রিভার ক্রসিং ট্রান্সমিশন লাইন জলজ প্রাণীদের উপর কিরুপ প্রভাব ফেলে?