“সাতটি রং এর মাঝে আমি নীল খুঁজে না পাই, জানিনা তো কেমন করে কি দিয়ে সাজাই।” গানটিতে নীল খুঁজে না পেলেও আমাদের ইলেকট্রিক্যাল জগতে থ্রি ফেজ সিস্টেমে রংধনুর সাতটি রং এর মধ্যে লাল, হলুদ, নীলকে বেছে নেওয়া হয়েছে। আমরা ইন্ডাস্ট্রিতে প্যানেল বোর্ডে থ্রি-ফেজ সিস্টেমে এই তিনটি রং দেখতেই অভ্যস্ত। কিন্তু আপনার মনে এই প্রশ্নটি কখনো এসেছে যে, রংধনুর সাতটি রং এর মধ্যে এই তিনটি রং কেন বেছে নেয়া হল? বাকি চারটি বর্ণ কি দোষ করল?
পৃথকীকরণে সুবিধা
ভিন্ন ভিন্ন রং ব্যবহার করার কারণ হচ্ছে যেন ফেজ লাইনগুলোকে আলাদাভাবে চেনা যায়।
এখন, প্রশ্ন হল সবগুলোই ত ফেজ, আলাদাভাবে চেনার দরকার কি?
অবশ্যই আছে। কোন কারণে আপনি ফেজ সিকুয়েন্স চেইঞ্জ করতে চাচ্ছেন। তাহলে আপনি সেটা ভিন্ন রং এর তার হলে সহজেই পারবেন। একই রং এর তার হলে ফেজ চেইঞ্জ করতে গেলে কনফিউশনে পড়তে হবে। করলেও সন্দেহ থাকবে আদৌ চেইঞ্জ করা হয়েছে কিনা? যেমন দুই জমজ ভাই / বোন থাকলে তাদের পৃথক করাটা কষ্টকর হয়ে যায়।
এবার আসা যাক, লাল, হলুদ, নীল রং ব্যবহার হল কেন?
- মানবমস্তিষ্ক এই তিনটি রং এর উপর বেশ sensitive।
- আমাদের অপটিক স্নায়ু খুব সহজেই এই তিনটি কালার সেন্স করতে পারে।
- এই তিনটি বর্ণের তরঙ্গদৈর্ঘ্য প্রায় কাছাকাছি। তাই বিক্ষেপণ হয় সমানভাবে। তাই সহজেই চোখে ধরা পড়ে।
- লাল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য = 700 nm নীল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য = 400 nm হলুদ আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য = 550 nm। আর লক্ষ্য করলে দেখবেন, হলুদ আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য লাল এবং নীলের এভারেজ মান। তাই, RYB কানেকশন এই আলোক বিক্ষেপণ খুব ভাল হবে। বর্ণ খুব সহজে চোখে পড়বে।
আমরা সবাই জানি, এই থ্রি ফেজ ভোল্টেজ ৩৮০ থেকে ৪৪০ ভোল্ট পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই কথাতেই সবার লাগে ঘটকা।
যদি সিংগেল ফেজ ভোল্টেজ ২২০ ভোল্ট হয় তাহলে থ্রি ফেজ ভোল্টেজ ৩ x ২২০ = ৬৬০ ভোল্ট হওয়ার কথা। এর নেপথ্যে কারিগরি রহস্য কি?
এখানে মূলত বীজগাণিতিক যোগ না হয়ে ভেক্টর যোগ (দিকনির্দেশক রাশি আকারে) হয়। ধরুন, আপনি বাসা থেকে উত্তর দিকে হেটে ৬ কিলোমিটার গেলেন, তারপর পশ্চিমে ৮ কিলোমিটার গেলেন। তাহলে হাটলেন ১৪ কিলোমিটার কিন্তু দুরত্ব হবে মাত্র ১০ কিলোমিটার। কারণ হিসেবটি সাধারণ বীজগাণিতিক নিয়মে হবেনা। ভেক্টর পদ্ধতির সাহায্য নিতে হবে। তাই আমরা three phase connection এ লাইন ভোল্টেজ বের করার জন্য ফেইজ ভোল্টেজকে √3 দিয়ে গুণ করে থাকি।
এ কারণে থ্রি ফেজের ভোল্টেজ এর যোগফল বীজগাণিতিকভাবে ৬৬০ না হয়ে ভেক্টরীয় যোগফলের হিসাবে ২২০ x ১.৭৩=৩৮১~৪০০ ভোল্ট হয়।
এটা আজ আপনাদের প্রমাণ করে দেখাব। নিচের স্টার কানেকশনটিতে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, ফেজ ভোল্টেজ গুলো যথাক্রমে Van, Vbn, Vcn। এখানে n হল তিন ফেজের কমন টার্মিনাল বা নিউট্রাল পয়েন্ট। আর লাইন ভোল্টেজ গুলো হচ্ছে Vab, Vbc, Vca। তাহলে Vab = √3 x Vphase প্রমাণ করাটাই যথেষ্ট হবে।
চিত্র থেকে বুঝাই যাচ্ছে, প্রতিটি ফেজ লাইনের মধ্যবর্তী কোণ 120 ডিগ্রী। তাইলে Van লাইনটি তার নিজের সাথে 0 ডিগ্রী কোণ উৎপন্ন করে।
তাই, Van = Vp < 0
Vbn লাইন Van লাইনের সাথে -120 degree উৎপন্ন করেছে। তাই Vbn = Vp < -120
অনুরুপভাবে, Vcn = Vp < -240 or Vp < +120
এখন, আমাদের উদ্দেশ্য হল Vab বের করা।
২য় চিত্রে দেখা যাচ্ছে, আমি Vbn কে বর্ধিত করে একটি রম্বস একেছি। এখন রম্বসটির কর্ণ ই মূলত Vab কে নির্দেশ করে।
ভেক্টর যোগের ত্রিভুজবিধি অনুসারে, Vab = Van + Vnb = Van – Vbn = Vp<0 – Vp<-120 = Vp + 0.5Vp + j √3/2 Vp [পোলার ফর্মেট থেকে কার্তেসীয় ফর্মেটে রুপান্তর করে] = Vp (1 + 0.5 + j √3/2) = √3Vp <30
অর্থাৎ,
- লাইন ভোল্টেজ ফেইজ ভোল্টেজ এর √3 গুণ
- আর লাইন ভোল্টেজ ফেইজ ভোল্টেজ এর সহিত ৩০ ডিগ্রী লিডিং এ থাকে।
Three Phase system নিয়ে আরো পোস্ট
থ্রি ফেজ ডাবল সার্কিট ২৩০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন সম্বন্ধে আলোচনা
থ্রি ফেজ মোটরের ক্ষেত্রে ডেল্টা কানেকশন চিত্রসহ বর্ণনা | Delta connection