খুব গরম পড়ছে। তাই চালু করে দিলাম সিলিং ফ্যান। কিন্তু আপনার ব্যবহৃত বিদ্যুৎ নিশ্চয়ই আপনার নিকটবর্তী কোন সাবস্টেশন থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু কখনো কি মাথায় এসেছে, এই সাবস্টেশন কতটা নিকটে থাকা উচিত? আজ মূলত সাবস্টেশন থেকে আবাসিক এলাকার দূরত্ব কত হওয়া উচিত এ নিয়েই আলোচনা করতে এসেছি। সবার প্রথমে সাবস্টেশন নিয়ে একটু আড্ডা জমাতে চাই।
সাবস্টেশন ও ফাংশন ম্যানেজমেন্ট
সাবস্টেশন নিয়ে আসলে নতুন করে কিছু বলার নেই। এর আগে বহুবার এই টপিক নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করেছি। কিন্তু আজ কিছুটা ভিন্নভাবে সাবস্টেশনকে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করব। কোন একটি সামাজিক ফাংশনের কথা চিন্তা করুন।
সেখানে বিভিন্ন লোক বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত। ফাংশন ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি থাকে, আবার সভাপতি তার অধীনস্থ কর্মীদের কাজ তদারকি বা নিয়ন্ত্রণ করছে। কেউ আবার ফাংশনের আর্থিক হিসেব নিকাশের কাজ করছে। আবার কেউ অতিথিদের তথ্য প্রেরণের কাজ সামলাচ্ছে। আবার ফাংশনের নিরাপত্তা প্রদান করছেন প্রহরী। এবার চলুন এই ফাংশনের উপমাটির সাহায্যে সাবস্টেশন সিস্টেমকে তুলনা করব। শুরু করা যাক-
প্রথমে বলা হয়েছে ফাংশনের ম্যানেজমেন্ট কমিটির একজন সভাপতি থাকে যিনি ফাংশনের মূল চালিকাশক্তি। তেমনিভাবে সাবস্টেশনের মূল চালিকাশক্তি হল ট্রান্সফরমার। এই ট্রান্সফরমার ভোল্টেজকে কমিয়ে সুনিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে নিয়ে আসে। সাধারণত গ্রীড এবং ডিস্ট্রিবিউশন সাবস্টেশনে স্টেপ ডাউন ট্রান্সফরমার ব্যবহার করা হয়। গ্রীড উপকেন্দ্রে ২৩০/১৩২, ১৩২/৩৩, ৪০০/২৩০, ৪০০/১৩২ এবং ডিস্ট্রিবিউশন সাবস্টেশনে ৩৩/১১ কেভি ট্রান্সফরমার ব্যবহৃত হয়।
তারপর ট্রান্সফরমারের মাধ্যমে কমিয়ে আনা ভোল্টেজকে পরিমাপ করতে ব্যবহার করা হয় পটেনশিয়াল ট্রান্সফরমার। আর এই ভোল্টেজের দরুণ প্রবাহিত উচ্চমাপের কারেন্ট পরিমাপ করতে ব্যবহৃত হয় কারেন্ট ট্রান্সফরমার। এই কারেন্ট ট্রান্সফরমার এবং পটেনশিয়াল ট্রান্সফরমারকে আপনি ফাংশনের ঐ ব্যক্তিদের সাথে তুলনা করতে পারেন যারা অনুষ্ঠানের বিভিন্ন হিসেব নিকাশের কাজে ব্যস্ত থাকেন।
অত:পর সভাপতির অধীনস্থ যেসব কর্মীরা হুকুম পালন করছে তাদের সাবস্টেশনের বিভিন্ন সুইচিং ডিভাইসের সাথে তুলনা করা যায় যেমন রিলে, আইসোলেটর।
এরপর আসা যাক, প্রহরীর কথায়। অনুষ্ঠানে যেন কোন বিঘ্ন না ঘটে সেজন্য একজন প্রহরী থাকেন যিনি পাহারা দিয়ে থাকেন। সাবস্টেশনেও একজন নৈশ প্রহরী থাকেন যার নাম সার্কিট ব্রেকার। সাবস্টেশনের কোন প্রকার ফল্ট হলেই সার্কিট ব্রেকার ট্রিপ করে সাবস্টেশনকে বৈদ্যুতিক দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা করে। গ্রীড সাবস্টেশনে SF6 সার্কিট ব্রেকার এবং ডিস্ট্রিবিউশন সাবস্টেশনে ভ্যাকুয়াম সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করা হয়।
তারপর অতিথিদের আমন্ত্রণের কাজে নিয়োজিত কর্মীদের আপনি সাবস্টেশনের পাওয়ার লাইন ক্যারিয়ার/SCADA সিস্টেমের সাথে তুলনা করতে পারেন।
সাবস্টেশন থেকে আবাসিক এলাকার দূরত্ব কত হওয়া উচিত?
আবাসিক এলাকা থেকে সাবস্টেশনের দূরত্ব নূন্যতম ১০০ ইয়ার্ড বা ৩০০ ফুট হওয়া দরকার। একটি সাবস্টেশন থেকে ১১ কিলোভোল্টের ফিডার লাইনগুলো ৩০০ ফুট দূরে আবাসিক এলাকার এইচ টাইপ পোলে বসানো ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফরমারে গিয়ে প্রবেশ করে। এখন প্রশ্ন আসাই স্বাভাবিক যে, এই দূরত্ব কেন রাখা দরকার?
কেন সাবস্টেশন থেকে আবাসিক এলাকার নূন্যতম দূরত্ব থাকা উচিত?
সাবস্টেশন কথাটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে আছে সুবিশাল পাওয়ার কন্ট্রোল ডিভাইসসমূহ। এছাড়া উপরেও ইতোমধ্যে উল্লেখ করা হল যে, সাবস্টেশনে পাওয়ার ট্রান্সফরমার, কারেন্ট ট্রান্সফরমার, পটেনশিয়াল ট্রান্সফরমারসহ বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ডিভাইস থাকে যারা ক্রমাগত ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন ছড়িয়ে যেতেই থাকে। আর এই ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েব মানবদেহের জন্য বেশ ক্ষতিকারক। তাই এদিক বিবেচনা করে মূলত সাবস্টেশন থেকে আবাসিক বাসাবাড়ির একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখা লাগে।
আরো কিছু আর্টিকেল
GIS এবং AIS সাবস্টেশনের তুলনামূলক আলোচনা