ব্রাউন আউট
মনে করুন বৃষ্টিস্নাত রাত। রুমের লাইটটা জ্বালিয়ে আপনি গল্পের বই পড়ছেন। হঠাৎ করে লক্ষ্য করলেন রুমের বৈদ্যুতিক বাতিটি মিটমিট করে জ্বলছে। কি ভয় পেয়ে গেলেন?? ভাবছেন ভূতুড়ে কারবার?? আসলে কিন্তু ব্যাপারটা তা নয়। এই ঘটনার মধ্যে এক ধরনের কারিগরি বাস্তবতা অন্তর্নিহিত। এই ঘটনাটিকে তড়িৎ প্রকৌশলের ভাষায় বলা হয় ব্রাউন আউট। অর্থাৎ ব্রাউনআউট হচ্ছে যখন সাপ্লাই ভোল্টেজ কমে যায় তখন বৈদ্যুতিক বাতি উজ্জ্বলভাবে আলো দিতে পারে না। তাই ঘটনাটিকে কোন ভূত-প্রেতের কান্ড মনে করে ঘাবড়ে যাওয়ার কোনো মানে নেই। ব্রাউন এক ধরনের অনুজ্জ্বল বর্ণ। এই বর্ণের সাথে তুলনা করেই ঘটনাটির এরুপ নামকরণ করা হয়েছে।
ব্রাউন আউট কেন হয়?
বাসা বাড়ির ট্যাপিং করা জাম্পার কানেকশন লুজ হয়ে গেলে
ডিস্ট্রিবিউশন লাইন গুলো থেকে সিংগেল ফেইজ বা থ্রি ফেইজ লাইন আমাদের বাসা বাড়ির মিটার বক্সে ট্যাপিং করে অতঃপর তা concealed pipe line এর মাধ্যমে বাসা বাড়ির লোড পর্যন্ত সংযোগ দেয়া হয়।
এই ট্যাপিং লাইন ঝড়ো বাতাস, পাখি যেকোন কারণে লুজ হয়ে গেলে ব্রাউনআউট ঘটে।
পাওয়ার সিস্টেমে বৈদ্যুতিক লোড বেড়ে গেলে
পাওয়ার সিস্টেমে বৈদ্যুতিক লোড বেড়ে গেলে তখন লোডে ভোল্টেজ ড্রপ কমে যায়। মনে করুন বর্ষার দিন। আপনার বাসায় খিচুড়ি ও গরুর মাংস রান্না হল। আপনি আপনার পেটুক বন্ধুকে দাওয়াত করলেন। আপনি ও আপনার পেটুক বন্ধু খিচুড়ি খেতে বসলেন। তাহলে নিশ্চিত আপনার ভাগে কম পড়বেই।
একইভাবে সিস্টেম কোন উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন (পেটুক বন্ধু) লোড থাকলে তা অধিকাংশ ভোল্টেজ (খিচুড়ি) লুফে নিতে চাইবে। যার দরুণ ব্রাউনআউট ঘটবে।
হাউজ ওয়্যারিং এ ত্রুটি থাকলে
হাউজ ওয়্যারিং এর জন্য সঠিক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত না হলে ব্রাউনআউট ঘটে। উপযুক্ত মানের ক্যাবল না বাছাই করলে এবং লোডের সমবায় সঠিক না হলে ব্রাউনআউট ঘটবে।
নিউট্রাল কানেকশন এ ত্রুটি থাকলে
অনেক সময় নিউট্রাল কানেকশন এ ত্রুটি থাকলে পরিপূর্ণ বর্তনী তৈরিতে বিঘ্ন ঘটে। তাই বৈদ্যুতিক বাতি উজ্জ্বলভাবে আলো দিতে পারেনা
মরিচা পড়া সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করলে
মরিচা পড়া সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করলে সার্কিট ব্রেকার এর কন্ট্যাক্টগুলো পরিপূর্ণভাবে ক্লোজ হতে পারেনা। ফলশ্রুতিতে ব্রাউনআউট ঘটে।
ব্রাউটআউট কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়?
এতক্ষণে প্রতিরোধের উপায় টি সকলের কাছে পরিষ্কার। সমস্যা যে কারণে সৃষ্টি সেই কারণ কে বাধা দেয়াই আসল লক্ষ্য।
প্রথমত জাম্পার কানেকশন দৃঢ় হওয়াটা জরুরি। তাই পাওয়ার লাইনে ভাইব্রেশান ড্যাম্পার ব্যবহার করতে হবে।
ভাইব্রেশান ড্যাম্পার কি?
- বৈদ্যুতিক লাইনে তারের স্পন্দন হ্রাস করার জন্য যে ডিভাইস ব্যবহার করা হয় তাকে ভাইব্রেশান ড্যাম্পার বলা হয়।
- অতঃপর বাসাবাড়ির বৈদ্যুতিক কানেকশন সুনিপুণভাবে করতে হবে। সিস্টেমে ভারী লোড কম ব্যবহার করাই উত্তম।
- মরিচা পড়া সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করা যাবেনা। সার্কিট ব্রেকার রক্ষণাবেক্ষণ করা উচিত।
এবার আসি ব্ল্যাকআউট নিয়ে আলোচনায়। মাঝেমধ্যে একটি কথা শুনা যায় “আজ সারাদেশে বা নির্দিষ্ট এলাকায় ব্ল্যাকআউট হবে।” শুনলেও এর কারিগরি ব্যাখ্যা হয়তো অনেকের ই অজানা।
ব্ল্যাকআউট কি?
“ব্ল্যাক” শব্দটি মূলত এখানে অন্ধকারকেই ইংঙ্গিত করছে। কোন এলাকার আওতাভুক্ত বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনগুলোতে সিনক্রোনাইজেশন এ ত্রুটি ঘটলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এই ঘটনাটিকে বলা হয় ব্ল্যাকআউট।
ব্ল্যাকআউট কেন হয়?
বজ্রপাত
বর্ষণমুখর দিনে ব্ল্যাকআউট কোন নতুন কিছু নয়। এমনও দিন গেছে ফ্যানের বাতাসের পরিবর্তে প্রকৃতির বাতাস খেয়েই কয়েকদিন কাটাতে হয়েছে। বজ্রপাত পাওয়ার সিস্টেমে বিঘ্ন ঘটালে এমন ঘটনা ঘটে
সঠিক সিনক্রোনাইজেশন এর অভাব
বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনগুলোয় ফ্রিকুয়েন্সি, পাওয়ার ফ্যাক্টর, ফেইজ শিফট এই প্যারামিটার গুলোয় সামঞ্জস্যতা বজায় না থাকলে সিনক্রোনাইজেশন এ বিঘ্ন ঘটে। ফলশ্রুতিতে ব্ল্যাকআউট হয়।
বাৎসরিক কমিশনিং এবং রক্ষণাবেক্ষণে গাফলতি
সাধারণত প্রতি বছর শেষে সাবস্টেশন এবং পোল ইকুইপমেন্ট গুলো কমিশনিং এবং রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়।
কমিশনিং বলতে বোঝায় সাবস্টেশন ও লোকাল পোল গুলোর ইকুইপমেন্ট কতটুকু কার্যকরী অবস্থায় আছে তা তদন্ত করা এবং কার্যকরী না হলে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা। কমিশনিং-এর পর সরেজমিন রিপোর্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দিতে হয়।
কর্তৃপক্ষ পরিকল্পনামাফিক রক্ষণাবেক্ষণ এর জন্য কারিগরি টিমকে দায়িত্ব প্রদান করে। কিন্তু এসব গুরুদায়িত্বের ক্ষেত্রে অনেক সময় দায়িত্বরতদের গাফিলতি পরিলক্ষিত হয়।
ব্ল্যাকআউট কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়?
- প্রথমত আন্ডারগ্রাউন্ড লাইন ব্যবহার করতে হবে।
- স্মার্ট গ্রীড এ সমস্যা সমাধানের অন্যতম উপায়।
- বৈদ্যুতিক ডিভাইস এর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ও কমিশনিং করতে হবে।
সাবস্টেশন নিয়ে অন্যান্য পোস্ট
সাবস্টেশন সিনক্রোনাইজেশন এবং দলীয় নৃত্যের ছন্দ
সাবস্টেশনে পাওয়ার লাইন ক্যারিয়ার কমিউনিকেশন | Power Line Carrier