ট্রান্সমিশন এবং ডিস্ট্রিবিউশন কোর্সটি খুবই মজাদার বটে। যতই জানি না কেন আরো জানতে ইচ্ছে করে। আসলেই এই ট্রান্সমিশন লাইন নিয়ে অনেক কিছুই জানার আছে। ট্রেনযোগে বা বাসযোগে কিংবা নদীপথে গ্রামের বাড়ি যাবার সময় নিরিবিলি ক্ষেতের মাঝখানে ট্রান্সমিশন লাইন চোখে পড়লে সত্যিই চোখ জুড়িয়ে যায়। এর উপর যদি আপনি হন ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের ছাত্র তাহলে ত কথা নাই। যতদূর চোখ যায় শুধুই তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। তবে ট্রান্সমিশন লাইন নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেক ধরনের ভ্রান্ত ধারণা কাজ করে। আজ সেগুলো দূর করার চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ।
ট্রান্সমিশন লাইনে সর্বদাই ইন্সুলেশন থাকে
এই ধারণা অনেকের মধ্যেই বিদ্যমান যে ট্রান্সমিশন লাইনে ইন্সুলেশন থাকবেই। কিছু কিছু ট্রান্সমিশন লাইনে ইন্সুলেশন নাও থাকতে পারে। সাধারণত যেসব এলাকার আশেপাশেও লোকবসতি থাকার সম্ভবনা নেই, নিরিবিলি যেমন দ্বীপ , বনাঞ্চল এসব এরিয়ার ট্রান্সমিশন লাইনের ইন্সুলেশন করা থাকেনা। এতে মিতব্যয়ী ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপন করা সম্ভবপর হয়।
পাওয়ার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলে ট্রান্সমিশন লাইনে শকের কোন ঝুঁকি থাকবেনা
এই ধারণাটিও আমরা অনেকে পোষণ করি যে, পাওয়ার লাইন অফ করে দিলে ট্রান্সমিশন লাইনের উপর দোলনা খেললেও আর কোন ঝুঁকি নেই। এরকম ভ্রান্ত ধারণা যেকোন সময় বিপদের কারণ হতে পারে। একটি ট্রান্সমিশন লাইনে পাওয়ার না থাকলেও যতক্ষণ না পর্যন্ত টাওয়ারটি নিউট্রালাইজেশন হচ্ছে ততক্ষণ বিদ্যুতের ঝুঁকি থাকবেই। ব্যাপারটিকে একটি বাস্তবজীবনের উদাহরণের সাথে মিলিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। ধরুন আপনি পেটভরে আপনার বন্ধুর বিয়ের ভোজ খেয়ে আসলেন। হাত ধোয়ার পরেও আপনার হাতে কাচ্চি বিরিয়ানি এবং বিফ রেজালার সুঘ্রাণ লেগে থাকবেই যতক্ষণ না সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিচ্ছেন।
ট্রান্সমিশন লাইন সর্বদাই ১৩২,২৩০,৪০০,৭৬৫ কেভি মানের হয়ে থাকে
আমরা অনেকেই মনে করি, পাওয়ার গ্রীডের ট্রান্সমিশন লাইন ভোল্ট সর্বদাই ১৩২, ২৩০, ৪০০, ৭৬৫ এরকম কোন সিকুয়েন্স ফলো করে। বাস্তবে ব্যাপারটি মোটেও তা নয়। অনেক দেশে ১১০, ১৩৮, ১৪৪, ২২০, ৩৪৫, ৪২০ কিলোভোল্টের ট্রান্সমিশন লাইনও আছে। আসলে ব্যাপারটি এমন না যে মনের খেয়াল খুশিতে এরকম মানের ভোল্ট নির্ধারিত হয়ে থাকে। কিছু ফ্যাক্টর এসব ক্ষেত্রে কাজ করে। সেগুলো নিম্নরুপঃ
- সাবস্টেশন লোড
- ট্রান্সমিশন লাইন কতটুকু পথ পাড়ি দিবে বা তার দৈর্ঘ্য
- ইন্সুলেটর সাইজ
- পরিবাহী তার
- বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ বাজেট
তবে এই ব্যাপারে আমার একটি আর্টিকেল আছে যা ইতোমধ্যেই আপনাদের সাথে শেয়ার করা হয়েছে। নিচে তার লিংক দেয়া হবে।
রিভারক্রসিং ট্রান্সমিশন লাইনের ক্ষেত্রেই কেবল মার্কার বল ব্যবহার করা হয়
অনেকের ধারণা রিভার ক্রসিং ট্রান্সমিশন লাইনের ক্ষেত্রেই কেবল মার্কার বল ব্যবহার করা হয়। তাদের মতে, লাইন কোন কারণে ছিঁড়ে পানিতে পতিত হলে যেন তা পানির উপর ভেসে থাকতে পারে সেজন্য মার্কার বল ব্যবহার করা হতে পারে। এ কথার কোন ভিত্তি নেই। অনেক পাহাড়ের উপরে স্থাপিত ট্রান্সমিশন লাইনেও মার্কার বল দেখা যায়। মার্কার বলের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে যেন আকাশযান চলার সময় যেন লাইনটি চালকের দৃষ্টিগোচর হয়। আর সেজন্য রাতের বেলায় মার্কার বলে এল ই ডি বাতি জলতে দেখা যায়। যদি নদীতে ভেসে থাকার উদ্দেশ্যই থাকত তাহলে মার্কার বলের নীল, কমলা রং এবং রাতে এল ই ডি জলার ব্যবস্থা রাখার কোন মানে নেই।
ট্রান্সমিশন লাইন সর্বদাই ডাবল সার্কিটের হয়
সাধারণত ডাবল সার্কিটের ট্রান্সমিশন লাইন দেখতে দেখতে আমরা অভ্যস্ত। তাই আমরা ভেবে থাকি যে, পাওয়ার ট্রান্সমিশন লাইন শুধুমাত্র ডাবল সার্কিটের হয়। অথচ ট্রিপল সার্কিট ট্রান্সমিশন লাইনও আছে। সাধারণত ট্রিপল সার্কিট ট্রান্সমিশন লাইন ব্যবহার করলে লোড অনেকগুণে বাড়ানো যায়। চায়না এ ধরনের ট্রান্সমিশন লাইন ব্যবহার করে।
আরো কিছু পোস্ট
ট্রান্সমিশন লাইনের ট্রান্সপজিশন সিস্টেম | পাওয়ার এবং টেলিফোন লাইনের যুদ্ধ