মোবাইল ফোন জ্যামার কিভাবে কাজ করে?

মোবাইল ফোন জ্যামার খুব পরিচিত একটি প্রযুক্তি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ মিটিং, সেমিনার কিংবা শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষার ফলাফলের কার্যক্রম চলার সময় এই মোবাইল ফোন জ্যামার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। তাই আজ খুব সংক্ষিপ্তভাবে মোবাইল ফোন জ্যামার প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা হবে ইনশাল্লাহ। চলুন শুরু করা যাক।

মোবাইল ফোন জ্যামার কিভাবে কাজ করে?

মোবাইল ফোন জ্যামার প্রযুক্তি বুঝতে হলে সবার আগে মোবাইল ফোন কল কিভাবে কাজ করে তা আমাদের বুঝতে হবে। আমাদের মোবাইল ফোন থেকে যখনই কোন কল করা হয় তখন তা নিকটবর্তী মোবাইল টাওয়ারের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে চায়। আমাদের প্রত্যেকের মোবাইল ফোনে ছোট ট্রান্সমিটিং এন্টেনা মাউন্ট করা থাকে। এই ক্ষুদ্রাকৃতির এন্টেনাই মূলত সেল টাওয়ারের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে চায়। মোবাইল ফোন কল প্রসেসিং নিয়ে আরো বিস্তারিত জানতে হলে সেলুলার নেটওয়ার্ক ও লোকাল কল সম্বন্ধে মজার তথ্য জেনে নিন এই আর্টিকেলটি পড়ে নিতে পারেন। তাহলেই আজকের আর্টিকেলটি পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারবেন।

যখন আপনি বাসের মধ্যে থাকেন বা এরিয়া পরিবর্তন করেন, আর সেল ফোন একটি টাওয়ার থেকে আরেকটি টাওয়ারে সুইচ করে, বিশেষ করে যে টাওয়ার থেকে সবচাইতে বেস্ট সিগন্যাল পাওয়া যায় সেই টাওয়ারের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে থাকে। এই প্রক্রিয়াকে বলে MAHO (Mobile Assistant Hand Off technique)। আর এই কারণেই চলন্ত অবস্থায় আমাদের মোবাইল কলগুলো কেটে যায়না।

ডিনায়াল অফ সার্ভিস এট্যাক/DOS Attack

মোবাইল ফোন জ্যামার
মোবাইল ফোন জ্যামার

যখন আপনি দুটো বস্তুর মধ্যে কোন একটা পছন্দ করতে যাবেন তখন আপনি নিশ্চয়ই ভালটাই বেছে নিতে চাইবেন। জ্যামারেও সেইম কাহিনীটাই ঘটে থাকে। যখন মোবাইল থেকে ফ্রিকুয়েন্সি ডায়াল করা হয় তখন সিগন্যাল জ্যামার মোবাইল ফোনের খুব নিকটবর্তী হওয়ার কারণে তা জ্যামার থেকে খুব স্ট্রং সিগন্যাল রেডিয়েশন লাভ করে থাকে। অন্যদিকে এরিয়ার সেল টাওয়ার জ্যামারের তুলনায় মোবাইল থেকে অনেকটাই দূরে। তাই মোবাইল ফোন জ্যামারের সিগন্যালের হানি ট্র্যাপে পড়ে যায়। আর আপনার মোবাইল হ্যান্ডসেট সেল টাওয়ারের সাথে যোগাযোগ স্থাপনে ব্যর্থ হয়। আর এই প্রক্রিয়ার নাম হল ডিনায়াল অফ সার্ভিস এট্যাক বলা হয়।

শুধু জ্যামার একই সিগন্যালই জেনারেট করে না বরং সিগন্যালের পাওয়ার অনেক গুন বাড়িয়ে দেয়, এতে দুইটি সিগন্যাল একে অপরের সাথে জ্যাম বাঁধিয়ে দেয় এবং একটি সিগন্যাল অপর সিগন্যালের সাথে কান্সেল হয়ে যায়। সেলফোন হচ্ছে ফুল-ডুপ্লেক্স ডিভাইজ, অর্থাৎ এটি দুইটি আলাদা আলাদা ফ্রিকোয়েন্সিকে একসাথে কাজে লাগায়, একটি ফ্রিকোয়েন্সি কথা রিসিভ করে এবং আরেকটি ফ্রিকোয়েন্সি কথা সেন্ড করে, এবং কাজটি একই টাইমে সঠিকভাবে করার জন্যই এই দুই আলাদা ফ্রিকোয়েন্সি প্রয়োজনীয় হয়ে থাকে।

কিছু জ্যামার এক সাথে দুইটি সিগন্যালই জ্যাম করে আবার কিছু জ্যামার জাস্ট একটি সিগন্যাল জ্যাম করে। অনেক সেল ফোন যখন লক্ষ্য করে একটি সিগন্যাল কাজ করছে না সেক্ষেত্রে নো নেটওয়ার্ক বলে ডিসপ্লে করে, আবার অনেক মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে একটি সিগন্যাল ব্লক হয়ে যাওয়াতে অন্য সিগন্যালটি এমনিতেই কাজ করা বন্ধ করে দেয়। যেমন- আপনি যদি আপনার ইন্টারনেট কানেকশনের আপলোড সম্পূর্ণ ব্লক করে দেন, সেক্ষেত্রে ডাউনলোডও স্বয়ংক্রিয় ব্লক হয়ে যাবে।

সেলফোন জ্যামার কাজ করানোর জন্য অবশ্যই জ্যামার থেকে সঠিক ফ্রিকোয়েন্সি ট্রান্সমিট করতে হবে। বিভিন্ন দেশের টাওয়ারে বিভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করা হয়, জিএসএম নেটওয়ার্ক সিস্টেমে বিশেষ করে ৯০০ মেগাহার্জ ফ্রিকোয়েন্সি এবং এশিয়ান দেশ গুলোতে ১৮০০ মেগাহার্জ (১.৮ গিগাহার্জ) ব্যান্ড ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সিগন্যাল জ্যামার ডিভাইজ গুলো যেকোনো টাইপের নেটওয়ার্কের উপর কাজ করতে পারে, যেমন- সিডিএমএ, টিডিএমএ, জিএসএম, ডিসিএস – ইত্যাদি।

সিগন্যাল জ্যামারের গঠন

ব্যাস্তবিকভাবে, এই অসাধারণ কাজের ডিভাইজটির গঠন একেবারেই স্বাভাবিক। এর মধ্যে এন্টেনা লাগানো হয়েছে আর ডিভাইজটি অন-অফ করার জন্য রয়েছে সাধারণ সুইচ, কমপ্লেক্স ডিভাইজ গুলোতে একাধিক ফ্রিকোয়েন্সি সিগন্যাল ট্রান্সমিট করার জন্য রয়েছে একাধিক সুইচ। এর এন্টেনা সিগন্যাল সেন্ড করার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে, পোর্টেবল ডিভাইজ গুলোতে বিল্ডইন অ্যান্টেনা লাগানো থাকে কিন্তু বড় জ্যামিং ডিভাইজ গুলোতে এক্সটার্নাল এন্টেনা লাগানো থাকে যাতে হিউজ কভারেজ দেওয়া সম্ভব হয়।

এর প্রধান সার্কিট গঠনে থাকেঃ

ভোল্টেজ-কন্ট্রোলড অসিলেটর (Voltage-controlled oscillator)

এটি রেডিও সিগন্যাল জেনারেট করে এবং সেল টাওয়ারের সিগন্যালকে জ্যাম করে দেয়।

টিউনিং সার্কিট (Tuning circuit)

যেটার সাহায্যে নানান টাইপের ফ্রিকোয়েন্সি তৈরি করে নানান টাইপের নেটওয়ার্ক সিগন্যাল জ্যাম করা যায়।

নয়েজ-জেনারেটর (Noise generator)

এটি এলোমেলো ইলেকট্রিক সিগন্যাল আউটপুট তৈরি করে, যেটা টাওয়ার সিগন্যালের সাথে প্যাঁচ বেধে যায়।

রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি অ্যামপ্লিফায়ার

এটি সিগন্যাল পাওয়ার বুস্ট করতে সাহায্য করে যাতে, যথেষ্ট শক্তিশালী সিগন্যাল তৈরি করে সেল ফোনকে ধোকা দেওয়া যায়।

ব্যাটারি

ছোট এবং পোর্টেবল জ্যামার গুলোতে সাধারণ ব্যাটারি পাওয়ার প্রদান করে, অনেক জ্যামার সেলফোন ব্যাটারি ব্যবহার করে কাজ করে। বড় সিগন্যাল জ্যামার গুলোর বড় ব্যাটারি বা এক্সটার্নাল পাওয়ার সোর্স প্রয়োজনীয় হয়।

সেল ফোন জ্যামারের ব্যবহার এবং বৈধ/অবৈধতা

চলুন আপনাদের একটু চলচ্চিত্রের ফ্লেভার দিই। সিনেমাতে হয়ত দেখে থাকবেন ক্রিমিনাল মোবাইল ফোনকে ট্রিগার হিসেবে ব্যবহার করে নিমিষেই বোমা ফাটিয়ে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে জ্যামার একটি বড় ধরনের সাহায্যকারী। জ্যামার ডিভাইজ বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছিলো সরকারী আর্মিদের ব্যবহারের জন্য। ক্রিমিন্যাল এবং আতঙ্কবাদীদের প্রতিরোধ করার জন্য সিগন্যাল জ্যামার ব্যবহার করা হতো। তাছাড়া আরো অনেক টাইপের আইনি কাজে ইগ্নাল জ্যামার ব্যবহার করা যেতে পারে।

ইউএস, ইউকে, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি সহ অনেক দেশে সেল ফোন সিগন্যাল জ্যাম করা আইনত অপরাধ মূলক কাজ। বাংলাদেশে এটি ওপেনভাবে কেনা যাবে না, সেক্ষেত্রে অবশ্যই অবৈধ হবে তবে কারণে বা প্রয়োজনে বিটিআরসি থেকে অনুমতি নিয়ে কেনা যেতে পারে। তবে অবশ্যই সীমিত এরিয়ার মধ্যে সিগন্যাল জ্যামার চালাতে হবে, আপনি যদি বিরাট এরিয়া জুড়ে সেলফোন জ্যামার ইউজ করেন সেক্ষেত্রে সেটা অবৈধ হবে।

তো এই ছিল, মোবাইল সিগন্যাল জ্যামার নিয়ে বেসিক সকল তথ্য গুলো। আপনি এখন জানলেন এই ডিভাইজটি ঠিক কিভাবে কাজ করে, যদি আপনিও একটি কিনতে চান সেক্ষেত্রে অবশ্যই প্রয়োজনীয় অনুমতির প্রয়োজন পড়বে, ৫-১০ হাজার টাকা খরচ পড়তে পারে, তবে সেটার খরচ আপনার প্রয়োজনীয় রেঞ্জিং হিসেবে আরো কমতে বা বাড়তে পারে।

আরো কিছু আর্টিকেল পড়ে নিন

অসিলেটর সম্বন্ধে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন-উত্তর | Oscillator Bangla

সিম ছাড়াই যাবে মোবাইল কল | কিন্তু কিভাবে?

পুলিশ কিভাবে মোবাইল ফোন ট্র‍্যাকিং করে অপরাধীকে ধরে?