অল্টারনেটিং কারেন্ট: বৈশিষ্ট্য, সুবিধা, অসুবিধা

এসি বিদ্যুৎ আবিস্কারের পিছনের গল্প আমাদের অনেকেরই জানা। এসি মানে হচ্ছে অল্টারনেটিং কারেন্ট। আর এই অল্টারনেটিং কারেন্টের আবিষ্কারক হচ্ছেন নিকোলা টেসলা।

Alternating Current
নিকোলা টেসলা

১৮৩৫ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে হিপ্পলিট পিক্সেই (Hippolyte Pixii) প্রথম একটি অল্টারনেটর তৈরি করেন, যা হাতের ক্র্যাঙ্ক দ্বারা ঘুরিয়ে অল্টারনেটিং কারেন্ট উৎপাদন করা হয়।

AC Circuit
হিপ্পলিট পিক্সেই

তৎকালীন সময়ে বিজ্ঞানীরা এডিসনের ডিসি (ডাইরেক্ট কারেন্ট) এর প্রতি বেশি আগ্রহী ছিলেন, তবে যখন অল্টারনেটিং কারেন্টের সুবিধাগুলো সবার সামনে আসতে থাকে তখন এই কারেন্ট বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

আজ আমরা অল্টারনেটিং কারেন্টের বেসিক কিছু বিষয় সম্বন্ধে জেনে নেবো।

আমাদের আজকের আলোচনায় যা যা থাকছেঃ

  • অল্টারনেটিং কারেন্ট কি?
  • অল্টারনেটিং কারেন্টের বৈশিষ্ট্য।
  • অল্টারনেটিং কারেন্টের সুবিধাসমুহ।
  • অল্টারনেটিং কারেন্টের অসুবিধাসমুহ।
  • অল্টারনেটিং কারেন্টের ব্যবহার।

অল্টারনেটিং কারেন্ট কি?

যে কারেন্টের দিক সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয় তাকে অল্টারনেটিং কারেন্ট বা AC বলে। যখন একটি অল্টারনেটর ভোল্টেজ উৎপন্ন করে, তখন তার ভোল্টেজ একটি নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী বিশেষ ভাবে তার দিক পরিবর্তন করে থাকে। যদি আমরা সময়ের সাপেক্ষে ভোল্টেজের এই পরিবর্তনের একটি গ্রাফ অংকন করি তাহলে একটি বিশেষ আকার পাওয়া যাবে। যা Sinusoidal Waveform সংক্ষেপে Sine Wave নামে পরিচিত।

Alternating Current

চিত্রটি থেকে ব্যাপারটা আরেকটু সহজভাবে বুঝতে পারবো।

এই কারেন্টের প্রবাহ শূন্য (0) থেকে শুরু হয়ে পজিটিভ দিকে উঠতে থাকে এবং পজিটিভ দিকের সর্বোচ্চ (peak) অবস্থানে (A) পৌছানোর পর পুনরায় শূন্যতে (B) নেমে আসে। কিন্তু ঠিক এর পরেই এর দিক পরিবর্তিত হয়ে যায় এবং তখন এটি বিপরীত দিকে বাড়তে থাকে।

এভাবে বিপরীত দিকের সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌছানোর পরই আবার শূন্যতে (D) নেমে আসে। এর পর আবার দিক পরিবর্তন করে পূর্বের ন্যায় একইভাবে অনবরত চলতে থাকে। এই পদ্ধতিটা একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর ঘটতে থাকে।

অল্টারনেটিং কারেন্টের বৈশিষ্ট্যঃ

  1. অল্টারনেটিং কারেন্টের কোন পজিটিভ বা নেগেটিভ টার্মিনাল থাকে না।
  2. অল্টারনেটিং কারেন্ট সাইন তরঙ্গ উৎপন্ন করে।
  3. অল্টারনেটিং কারেন্ট প্রতি মূহুর্তে দিক ও মান পরিবর্তন করে প্রবাহিত হয়।
  4. এই কারেন্টে সাইকেল ও ফেজ ডিফারেন্স রয়েছে।

অল্টারনেটিং কারেন্টের সুবিধাসমুহঃ

  1. ট্রান্সমিশন লাইন দ্বারা অল্টারনেটিং ভোল্টেজকে দূর দূরান্তে প্রেরণ করা যায়।
  2. তুলনামূলক কম খরচে অল্টারনেটিং কারেন্ট উৎপন্ন করা যায়।
  3. অল্টারনেটিং ভোল্টেজ বেশি উৎপন্ন করা যায়।
  4. অল্টারনেটিং ভোল্টেজকে ট্রান্সফরমার দ্বারা কম বা বেশি করা যায়।
  5. সাধারণ ব্যবহারে অল্টারনেটিং ভোল্টেজ ইন্ডাকশন মোটরে অল্প খরচে ব্যবহার করা যায়।
  6. অল্টারনেটিং কারেন্টের রক্ষনাবেক্ষন খরচ ডাইরেক্ট কারেন্টের চেয়ে কম পড়ে।

অল্টারনেটিং কারেন্টের অসুবিধাসমুহঃ

  1. এটি ডিসির চেয়ে কম বিপদজ্জনক কিন্তু বেশি আকর্ষণপূর্ণ।
  2. উচ্চ ভোল্টেজে ডিসি অপেক্ষা এসি দিয়ে কাজ করা অনেক বেশি বিপজ্জনক।
  3. ইলেক্ট্রোরাইফাইনিং, ইলেক্ট্রোপ্লেটিং ইত্যাদি প্রক্রিয়াগুলোতে এসি ব্যবহার করা যায় না। 
  4. এসি থেকে সরাসরি ব্যাটারী চার্জ করা যায় না।
  5. সামান্য অসাবধানতায় মারাত্মক দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

অল্টারনেটিং কারেন্টের ব্যবহারঃ

  1. বিভিন্ন কারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে প্রচুর পরিমানে অল্টারনেটিং কারেন্ট ব্যবহার কয়া হয়।
  2. আমাদের বাসা বাড়ি ও অফিসে যে কারেন্টে রয়েছে যেটাও অল্টারনেটিং কারেন্ট।
  3. উচ্চ ভোল্টেজ সম্মলিত মোটর, রেফ্রিজারেটর, ডিশওয়াশার, টোস্টার ইত্যাদিতে অল্টারনেটিং কারেন্টের ব্যবহার রয়েছে।
  4. আমাদের দৈনন্দিন প্রায় সব যন্ত্রপাতিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অল্টারনেটিং কারেন্টের ব্যবহার রয়েছে।

আমাদের অন্যান্য লেখাসমূহঃ

বিদ্যুৎ আবিষ্কারের ইতিহাস

কারেন্ট সম্বন্ধে সহজ ভাষায় বিস্তারিত আলোচনা