আজকে খুব ই দারুণ একটি টপিক নিয়ে আলোচনা হবে। কখনো ভেবে দেখেছেন কি?
যদি 132kV, 230kV, 400kV রিভার ক্রসিং ট্রান্সমিশান লাইনগুলোর Live wire যদি নদীতে ছিঁড়ে পড়ে তাহলে কি ঘটবে?
পানি একটি উত্তম পরিবাহী। পানির সাথে বিদ্যুৎ এর সম্পর্ক রোমিও জুলিয়েটের মত। তবে আমার এই কথায় একটু খাদ আছে। শুধু পানি হলেই হবেনা সেটা হতে হবে অবিশুদ্ধ পানি। বিশুদ্ধ পানি বিদ্যুৎ পরিবহন করেনা বললেই চলে। অর্থাৎ যে নদী বা লেকের উপর তার ছিড়ে পড়বে সেই নদী বা লেকের পানির বিশুদ্ধতার উপরেও নির্ভর করছে বিদ্যুৎ পরিবহনের ব্যাপার টি।
আচ্ছা ধরেই নিলাম অবিশুদ্ধ পানির উপরেই Live Line ছিড়ে পড়ল। তাহলে কি হবে?
যদি অবিশুদ্ধ পানির উপরে লাইভ লাইনটি ছিড়ে পড়ে তাহলে তো বিদ্যুৎ আনন্দে আত্নহারা হয়ে যাবে এবং সেই পানির সাথে রিলেশান তৈরি করবে। জলাশয়টি হাইড্রোইলেক্ট্রিক ফিল্ড এ রুপান্তরিত হবে। অবিরাম বিদ্যুৎ পরিবহনের দরুণ তাপ সৃষ্টি হয়ে পানিতে বুদবুদ সৃষ্টি করতে পারে। নদীর কতটুকু এরিয়া বিদ্যুতায়িত হবে তা নির্ভর করবে ভোল্টেজ লেবেলের উপর।
এবার একটা প্রশ্ন সবার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে যে,
যদি ওই মুহূর্তে যদি কেউ সাঁতার কাটে তাহলে সেই বেচারার কি অবস্থা হবে?
এখন ওই লোকটি বিদ্যুতায়িত হবে কিনা সেটা নির্ভর করবে নদীর গভীরতার উপর। লোকটি যদি জলাশয়ের তলদেশ স্পর্শ করে থাকে তাহলে একটি পূর্ণ বর্তনী তৈরি হতে পারে। আর তখন ই শক খাবে। সাধারণত নদী, লেকের গভীরতা ১০০-৩০০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। তাই এক্ষেত্রে ঝুকি নেই। কিন্তু ছোট খাট বদ্ধ পুকুর ডোবা হলে ঝুকি থাকবে।
আর এই অনাকাংখিত ঘটনাটি ঘটবার সম্ভবনা খুব ই কম। কারণ রিভার ক্রসিং ট্রান্সমিশান লাইন গুলোর স্যাগ অনেক বেশি। তাই ছিড়ে পড়ার সম্ভবনা খুব ই কম। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বর্তমানে অধিকাংশ গ্রীড ই স্মার্ট গ্রীড। এরকম কোন ফল্ট হলে সাথে সাথেই গ্রীড ব্রেকার ট্রিপ করবে। আর এই কাজটি সংঘটিত হয় SCADA প্রযুক্তির সাহায্যে। এই প্রযুক্তিতে পাওয়ার সিস্টেমের যেকোন প্রকার বৈদ্যুতিক ত্রুটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চিহ্নিত করার মাধ্যমে উক্ত তথ্য নিকটবর্তী গ্রীড সাবস্টেশানে প্রেরণ করা হয়। অতঃপর গ্রীড বেকার ট্রিপ করে। তারপর লাইনটিতে বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায় এবং অনাকাংখিত দূর্ঘটনার সম্ভবনাও অনেক কমে যায়
এখন প্রশ্ন হতে পারে,
যদি কেউ এরুপ পরিস্থিতিতে পড়ে সেক্ষেত্রে করণীয় কি?
জল বিদ্যুতায়িত হলে তখন সেটি নীরব ঘাতকের ন্যায় কাজ করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভিক্টিম এর শরীর প্যারালাইসিস হয়ে যায় এমনকি ভোল্টেজের মাত্রা বেশি হলে মৃত্যুও ঘটে। তাই এরুপ পরিস্থিতিতে survive করাটা বেশ কঠিন ই বটে। তবে যথাসম্ভব ভূমি স্পর্শ না করে সাতার কেটে পাড়ে উঠে আসার চেষ্টা করতে হবে এবং নিকটস্থ কোন ব্যক্তির সাহায্যে চিকিৎসা নিতে হবে। তবে এসব ক্ষেত্রে প্রতিকারের তুলনায় প্রতিরোধ ই উত্তম। জলাশয়ের পাওয়ার লাইন থেকে কমপক্ষে ৫০ ইয়ার্ড বা ১৫০ ফুট দূরে সাতার কাটতে হবে। আর রিভার ক্রসিং টাওয়ারগুলো যে গ্রীড সাবস্টেশানের আওতাধীন সেই সাবস্টেশানের এর সার্কিট ব্রেকার এর রক্ষণাবেক্ষণ খুব সুষ্ঠভাবে এবং সুকৌশলে করা উচিত।
ট্রান্সমিশান লাইন নিয়ে আরো বিস্তারিত
ওভারহেড এবং আন্ডারগ্রাউন্ড পাওয়ার লাইনের মধ্যে কোনটির ব্যবহার বেশি সুবিধাজনক হবে?
ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন দুই বন্ধুর পথ যাত্রার এক মজার কাহিনী
থ্রি ফেজ ডাবল সার্কিট ২৩০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন সম্বন্ধে আলোচনা
ট্রান্সমিশন লাইনে কমলা এবং নীল রঙ এর মার্কার বল থাকে কেন পড়ুন